তিস্তা চুক্তি না হলে দুঃখ পাবে বিএনপি: নোমান

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরে বহু প্রতীক্ষিত তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সই না হলে বিএনপি দুঃখ পাবে বলে মন্তব্য করেছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 June 2015, 09:08 AM
Updated : 1 June 2015, 09:51 AM

সোমবার রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “ঢাকায় নরেন্দ্র মোদী আসছেন। আমরা আশা করব, এবার তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি হবে। দেশের সুশীল সমাজও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফর সম্পর্কে যেভাবে আশাবাদ করেছে তার প্রতিফলন হোক আমরা চাই।

“এটা হলে সরকারকেও অভিনন্দন জানাতে আমাদের আপত্তি থাকবে না। আমরা সরকারকেও অভিনন্দিত করব। আর চুক্তি না হলে আমরা দুঃখ পাব, আলোচনা করব, সমালোচনা করব। এর বিরুদ্ধে কথা বলব।”

৬ জুন দুদিনের সফরে ঢাকায় আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্যে দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সফরের আনুষ্ঠানিক ঘোষণাও এসেছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, মোদীর সফরে সড়ক, রেল, নৌপথ, বাণিজ্য, নিরাপত্তা, অবকাঠামো ও জনগণের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রায় এক ডজন চুক্তি সই হতে পারে।

তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদী প্রথম বাংলাদেশ সফরে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সই হচ্ছে না বলে এর মধ্যে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ জানিয়েছেন।

দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে এই আলোচনা সভায় ভারত বিষয়ে বিএনপির অবস্থানও ব্যাখ্যা করেন আবদুল্লাহ আল নোমান।

তিনি বলেন, “পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে, বিএনপি নাকি ভারতমুখী হয়ে গেছে। এ বিষয়ে আমরা বলতে চাই, বিএনপি একটি উদার গণতান্ত্রিক দল। আমরা সব সময় ইতিবাচক রাজনীতি করি। জনগণের স্বার্থে আমরা কথা বলি।

“আমরা তিস্তার পানি চাই কি চাই না। এটা বললে কি ভারতবিরোধী হয়ে যায়? আমরা বলেছি, দুই দেশের মধ্যে ট্রানজিট সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে। এর মধ্য দিয়ে আয়-ব্যয়ের হিসাব করে ট্রানজিট হতেও পারে, নাও হতে পারে। এটা কি দেশের মানুষের পক্ষে না বিপক্ষে? এখানে ভারতে বিরুদ্ধে বলার কিছু নেই।

“আমরা বলেছি, নিকট পাশ্বর্বতী সাতটি অঙ্গরাজ্যের সঙ্গে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য উন্মুক্ত থাকবে। আমরা সেই সুযোগ কাজে লাগাতে চাই। এসব তো ভারতের বিরোধিতা নয়। এসব কথাই বিএনপি ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলে থাকেন।”

নোমান বলেন, “মোদি ঢাকায় আসছেন। এই সফর নিয়ে আমাদের সুশীল সমাজ টেলিভিশনের টকশোতে প্রতিদিন বলছেন, সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। মনে হচ্ছে মোদি দেবতা হয়ে আসছে, তিনি সব সমস্যার সমাধান করে দেবেন।’’

ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার মোয়াজ্জেম আলীর সাম্প্রতিক একটি বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে এই বিএনপি নেতা বলেন, “আমি সবচেয়ে বেশি আশ্চর্য হয়েছি, আমাদের হাইকমিশনার মোয়াজ্জেম আলীর আলোচনায় মনে হয়েছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী এসে প্রথমেই তিস্তার সমস্যার সমাধান করবেন।

“বাংলাদেশে মানুষ দোজখে আছে, তাদের স্বর্গে নিয়ে যাবেন। স্বর্গে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে হাসিনা (বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী) তার সহযোগী হবেন। বাস্তবে কি অবস্থা তাই?”

এসময় পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিতে ইতিবাচক অবদান রাখবেন বলে আশা প্রকাশ করেন সাবেক চার দলীয় জোট সরকারের মন্ত্রী নোমান।

ফ্যাসিবাদী আক্রমনের শিকার বিএনপি

‘আইয়ুব ও এরশাদের শাসনামলের মতো’ গণতন্ত্র ও উন্নয়নের নামে দেশে ফ্যাসিবাদী শাসনের চক্রান্ত চলছে বলে মন্তব্য করেন আবদুল্লাহ আল নোমান।

তিনি বলেন, “একসময়ে দেশে একদলীয় শাসন বাকশাল কায়েম করতে উন্নয়নের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু ওই সময়ে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছিল। সকল সংবাদপত্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।

“আজ আমাদের উপর ফ্যাসিবাদী আক্রমণের খড়্গহস্ত নেমে এসেছে। আমাদের অনেক নেতা-কর্মী কারাগারে, অনেকে গুম হয়ে গেছে, খুন হয়ে গেছে। এভাবে আন্দোলন বন্ধ হবে না।

“আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, আমাদের ওপর ফ্যাসিবাদী আক্রমণ চলবে, আমাদের শাস্তি হবে। তবে জনগণের আন্দোলন চলতে থাকবে। জিয়ার আর্দশে দেশের মানুষ সরকারের দমন-পীড়নের প্রতিশোধ নেবে।”

বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, “আওয়ামী লীগ তার ফ্যাসিবাদী চরিত্রের কারণে গণতন্ত্র ও সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য কোনো স্পেস দেয়নি বলেই আজ দেশে রাজনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। এই সঙ্কট উত্তরণের একমাত্র পথ হচ্ছে ব্যালেটের মাধ্যমে নিবার্চন। জনগণ বুলেট নয়, ব্যালটের মাধ্যমে পরির্বতন চায়।’’ 

সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মুনির হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহ তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা সাইফুল ইসলাম পটু, জিয়াউল হক শাহিন, সাদরেজ জামান, আনু মোহাম্মদ শামীম, কামরুজ্জামান বিপ্লব, লিটন মাহমুদ, শাহাবুদ্দিন মুন্না, আক্তারুজ্জামান বাচ্চু ও নজরুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।

নিজ দেশের স্বার্থের বাইরে কিছু করবেন না মোদি

জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে সকাল সবুজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ বলেন, “ভারতের জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশ সফরে আসছেন। তাকে আমরা স্বাগত জানাব। তার প্রতি যথাযথ সম্মান দেখাতে হবে।

“একই সঙ্গে আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, মোদী তার দেশের স্বার্থের বাইরে কিছুই করবেন না। তাই অতি উৎসাহী ভয়ঙ্কর কিছু যেন আমরা এই সফর থেকে প্রত্যাশা না করি।”

এই সভায় অন্যান্যের মধ্যে কবি আল মাহমুদ, কলামনিস্ট অধ্যাপক আবদুল গফুর, জাগপা প্রধান শফিউল আলম প্রধান, এনডিপি প্রধান খন্দকার গোলাম মূর্তজা, নয়া দিগন্ত সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন ও প্রতিষ্ঠানটির প্রধান সম্পাদক আবদুল্লাহিল মাসুদ বক্তব্য রাখেন।