টিআইবি কর্মকর্তাদের এমপি হওয়ার ‘আমন্ত্রণ’ রওশনের

সংসদ পর্যবেক্ষণ না করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) কর্মকর্তাদের ‘নির্বাচিত হয়ে’ সংসদে আসার ‘আমন্ত্রণ’ জানালেন বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 May 2015, 07:09 AM
Updated : 31 May 2015, 02:29 PM

রোববার জাতীয় সংসদের শপথকক্ষে ‘প্রাক-বাজেট আলোচনায়’ জাতীয় পার্টির নেতা রওশন এ কথা বলেন।

আলোচনায় ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে টিআইবির সুপারিশ বিরোধী দলীয় নেতার সামনে তুলে ধরেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।

পরে রওশন বলেন, “আপনারা স্বচ্ছতা ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ চান, আমরাও এ নিয়ে কাজ করছি। আমরা চাই আপনাদের মতো লোক সংসদ পর্যবেক্ষণ করতে নয়, মেম্বার হিসেবে সংসদে আসুক। সেজন্য আপনাদের আমন্ত্রণ জানাই।”

এ সময় ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “সবাইতো এক কাজ...।”

এ সময় রওশন বলেন, “আপনারা যদি সংসদে আসেন, তাহলে আপনাদের ভূমিকা আরও ফলপ্রসূ হবে।

“আপনারা সংসদের কার্যক্রম দেখবেন; পর্যবেক্ষণ করবেন।”

টিআইবি নির্বাহী পরিচালক বলেন, “আমরা সব সময় ভেতরে আসতে পারি না। আমাদের ২-১ জন সহকর্মী মাঝে মাঝে আসেন। তবে টেলিভিশনে আমরা সবসময় পর্যবেক্ষণ করি।”

রওশন বলেন, “আপনারা সংসদ পর্যবেক্ষণ করবেন। কোনও পয়েন্ট থাকলে আমাদের জানাবেন। আমরা সংসদে সেটা নিয়ে আলোচনা করব।”

‘নবম সংসদের পার্লামেন্ট ওয়াচ প্রতিবেদন’ তুলে ধরে গত বছর টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, “এ সংসদে বিরোধী দল নেই। সংসদে সরকারি দল রয়েছে। বিরোধী দল বলতে যা বোঝায় সে বিরোধী দল নেই।”

রোববার অনুষ্ঠান শেষে এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা।

জাতীয় পার্টি বিরোধী দল হিসেবে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারবে কিনা জানতে চাইলে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “সেটি পারবে কিনা, বিরোধী দল প্রমাণ করবে। যারা বিরোধী দল হিসেবে নিজেদের দাবি করছে বা যাদের বিরোধী দল হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, তারা নিজেরাই কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করার চেষ্টা করবে। সেটা আমরা আশা করব।”

তিনি জানান, বিরোধী দলীয় নেতার কার্যালয় থেকেই প্রাক-বাজেট আলোচনার বিষয়ে টিআইবির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। আলোচনার বিভিন্ন দিকও তিনি সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “কথাটা আমরা আগেও বলেছি, আবারও বলছি, বর্তমান বিরোধী দল এক ধরনের আত্মপরিচয়ের সঙ্কটে আছে। এই সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার দায়িত্ব তাদেরই।

“তারা তাদের ভূমিকার মাধ্যমে এ সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পারে। যদি বাজেটের ওপর বিষয়কেন্দ্রিক আলোচনায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে পারেন তারা, দেশবাসীর সামনে প্রমাণ করতে পারেন যে তারা সত্যিকার অর্থেই বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করছেন, তাহলে হয়তো যে ধারণার সৃষ্টি হয়েছে সেটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হতে পারে।”

বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের বর্জনের মধ্যে গতবছর ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। ৩৪ জন সদস্য নিয়ে এ সংসদে বিরোধী দল হিসেবে রয়েছে জাতীয় পার্টি।

দলটির সভাপতিমণ্ডলির সদস্য রওশন এরশাদ বিরোধী দলীয় নেতা হলেও দলের তিন নেতা মন্ত্রিসভার সদস্য হওয়ায় তারা আদৌ বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করছেন কি না, সে প্রশ্ন রয়েছে বিভিন্ন মহলের।

পরে টিআইবির এই বক্তব্য নিয়ে বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের ভূমিকা নিয়ে তারা কোনও সন্দেহ করেনি। উনাদেরকে আমরা বলেছি, আমরা অতীতে যে কাজগুলো করেছি... রাজশাহী, জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি থেকে আরম্ভ করে প্রতিটি যে ঘটনা ঘটেছে সেগুলো আমরা তুলে ধরেছি।

“ওরা আমাদেরকে বলেছে, জোরালোভাবে আপনাদের ভুমিকা রাখবেন। এই আশা করেছেন। কিন্তু আমাদের জিনিস নিয়ে ওরা কোনও সন্দেহ করেনি।”

প্রাক-বাজেট আলোচনায় টিআইবি সব ধরনের সরকারি ক্রয়, কর সংগ্রহে অনলাইনভিত্তিক নিরীক্ষা চালু, প্রতিরক্ষাসহ সব খাতের তথ্য প্রকাশ, অডিট আইন দ্রুত প্রণয়ন ও থোক বরাদ্দ নিরুৎসাহিতকরণসহ ১১ দফার সুপারিশ তুলে ধরে।

সুপারিশ তুলে ধরার সময়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা, বৈষম্য নিরসন তথা মৌলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার অপরিহার্যতা উপেক্ষা করে উন্নয়ন ও মধ্যম আয়ের দেশের তালিকাভুক্তির স্বপ্ন আপাতদৃষ্টিতে সম্ভব বিবেচিত হলেও স্থায়িত্বের সম্ভাবনার মাপকাঠিতে তা স্বপ্ন বিলাস হিসেবে রূপান্তরিত হবার ঝুঁকি রয়েছে।

“অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হতে পারে, কিন্তু দারিদ্র্য, বৈষম্যের শিকার ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর স্বার্থকে অধিকতর প্রাধান্য দিতে হবে। বিশেষ করে কৃষি পল্লী উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, নারী-শিশু-যুব উন্নয়ন, ধর্মীয় নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘু ও প্রতিবন্ধী এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঝুঁকির মুখোমুখি জনগোষ্ঠীর স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।”

অনুষ্ঠানে বিরোধী দলীয় নেতা ছাড়াও বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী, রুহুল আমিন হাওলাদার ও শওকত চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

টিআইবির পক্ষ থেকে আরও উপস্থিত ছিলেন উপ-নির্বাহী পরিচালক সুমাইয়া খায়ের, এসএম রেজওয়ান উল আলম, রফিকুল হাসান, জাকির হোসেন খান।