নাইকো মামলা: খালেদার আবেদনের শুনানি শেষ

নাইকো দুর্নীতি মামলার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার করা আবেদনের শুনানি শেষ হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্ট প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 May 2015, 03:59 PM
Updated : 28 May 2015, 03:59 PM

বৃহস্পতিবার শুনানি শেষ হওয়ার পর এখন যে কোনো দিন আদেশের জন্য মামলাটি হাই কোর্ট বেঞ্চ রেখেছে বলে খালেদার আইনজীবী রাগীব রউফ চৌধুরী জানিয়েছেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আদালত সিএভি (রায় অপেক্ষমান) রেখেছেন। এখন যে কোনো দিন রায় ঘোষণা হতে পারে।”

বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ও বিচারপতি জাফর আহমেদের হাই কোর্ট বেঞ্চে দুর্নীতি দমন কমিশনের করা এই মামলা নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদার আবেদনের শুনানি হয়।

দুদকের কৌঁসুলি খুরশীদ আলম খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিনি শুনানি শেষ করেছেন। তবে বিষয়টি রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখা হয়েছে কি না, তা তিনি জানেন না।

সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে খালেদা গ্রেপ্তার হওয়ার পর ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তার বিরুদ্ধে এই মামলাটি করে দুদক। পরের বছর ৫ মে খালেদাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।

এতে অভিযোগ করা হয়, কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান চুক্তির মাধ্যমে আসামিরা রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার ক্ষতি করেছেন।

খালেদা জিয়া উচ্চ আদালতে গেলে ২০০৮ সালের ৯ জুলাই দুর্নীতির এই মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে হাই কোর্ট, সেই সঙ্গে দেওয়া হয় রুল।

ওই আবেদনের ওপর ১৯ এপ্রিল শুনানি শুরু হয়। আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী ও রাগীব রউফ চৌধুরী। তাদের সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী এ কে এম এহসানুর রহমান।

একই সময়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একই ধরনের করা মামলা খারিজ হওয়ার বিষয়টি খালেদা বিরুদ্ধে মামলা বাতিলের যুক্তি হিসেবে দেখাচ্ছেন তারা।

রাগীব রউফ লেন, “মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই।

“তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি চুক্তিতে অনুমোদন দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হতে পারে না। একই ঘটনা থেকে উদ্ভূত বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে হওয়া মামলা খারিজ হয়েছে। খালেদা জিয়ার মামলাও চলতে পারে না।”

দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, আপিল বিভাগের একাধিক মামলার রায় অনুসারে ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে করা বিএনপি চেয়ারপারসনের এই রিট আবেদন চলতে পারে না।

“এই দুই মামলায় (শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা ও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা) তফাৎ আছে।”

“এই নাইকো মামলায় অপরাধ সংগঠনের যথেষ্ট প্রাথমিক উপাদান আছে,” দাবি করেন তিনি।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় খালেদার বিরুদ্ধে গ্যাটকো ও বড় পুকুরিয়া কয়লা খনি দুর্নীতি মামলাও হয়। আদালতের স্থগিতাদেশে আটকে যাওয়ার দীর্ঘদিন পর সম্প্রতি মামলাগুলো সচলের উদ্যোগ নেয় দুদক।

খনি দুর্নীতি মামলায় খালেদার পাশাপাশি তার মন্ত্রিসভার ১০ সদস্যসহ ১৬ জন আসামি। ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি মামলার পর ৫ অক্টোবর ১৬ জনের বিরুদ্ধেই অভিযোগপত্র দেয় দুদক।

চীনা প্রতিষ্ঠান কনসোর্টিয়াম অফ চায়না ন্যাশনাল মেশিনারিজ ইম্পোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশনের (সিএমসি) সঙ্গে বড় পুকুরিয়া কয়লা খনির উৎপাদন, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তি করার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের প্রায় ১৫৮ কোটি ৭১ লাখ টাকার ক্ষতি করার অভিযোগ আনা হয়েছে এই মামলায়।

২০০৮ সালের ১৬ অক্টোবর এই মামলার কার্যক্রম তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছিল হাই কোর্ট। মামলাটি কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও দেওয়া হয়। হাই কোর্টের ওই আদেশ আপিল বিভাগও বহাল থাকায় আটকে যায় বিচার।

সাত বছর পর চলতি বছরের শুরুতে দুদক মামলাটি সচল করার উদ্যোগ নিলে হাই কোর্টের দেওয়া রুলের চূড়ান্ত শুনানি শুরু হয়।

গত ৩ ও ৫ মার্চ  বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের বেঞ্চে চূড়ান্ত শুনানির পর আদালত রায়ের জন্য রাখা হয়েছিল।

এরই মধ্যে খালেদার আইনজীবীরা বেঞ্চ পরিবর্তনের জন্য হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি খালেদার আবেদন শুনানির জন্য বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান ও বিচারপতি জাফর আহমেদের হাই কোর্টে বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।

গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা দায়ের করা হয় ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর, পরে তা জরুরি ক্ষমতা আইনে অন্তর্ভুক্ত হয়। এ মামলায় খালেদা জিয়া, তার ছোট ছেলে সদ্যপ্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোসহ ১৩ জনকে আসামি করে দুদক।

এই মামলা হওয়ার পর দিন খালেদা ও কোকোকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ২০০৮ সালের ১৩ মে খালেদাসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।

এতে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গ্যাটকোকে ঢাকার কমলাপুর আইসিডি ও চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের কাজ পাইয়ে দিয়ে রাষ্ট্রের ১৪ কোটি ৫৬ লাখ ৩৭ হাজার ৬১৬ টাকার ক্ষতি করেছেন।

মামলাটি জরুরি ক্ষমতা আইনের অন্তর্ভুক্ত করার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এবং বিচারিক আদালতে মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে ২০০৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর হাই কোর্টে আলাদা দুটি রিট আবেদন করেন খালেদা।

তিন দিন পর মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল দেয় হাই কোর্ট। মামলাটি জরুরি ক্ষমতা আইনের অন্তর্ভুক্ত করা কেন ‘বেআইনি ও কর্তৃত্ব বহির্ভূত’ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় ওই রুলে।

তবে হাই কোর্টের দেওয়া স্থগিতাদেশ পরে আপিল বিভাগে বাতিল হয়ে যায়।

দুদক আইনে গ্যাটকো মামলা দায়েরের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৮ সালে আরেকটি রিট আবেদন করেন খালেদা জিয়া। তার আবেদনে হাই কোর্ট আবারও মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দেয়।

বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান ও বিচারপতি জাফর আহমেদের হাই কোর্টে বেঞ্চে দুটি মামলার নিয়ে খালেদার রিট আবেদনগুলোর শুনানি চলছে বলে খুরশীদ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।