সালাহ উদ্দিনের বিষয়টি ‘মানবিকভাবে’ দেখার আহ্বান বিএনপির

ভারতে গ্রেপ্তার হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সালাহ উদ্দিন আহমেদকে নিয়ে সংবাদ প্রচার বা প্রকাশের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ‘মানবিক’ ভূমিকা প্রত্যাশা করেছে তার দল বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 May 2015, 03:49 PM
Updated : 26 May 2015, 03:49 PM

মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির পক্ষ থেকে এই আহ্বান জানানো হয়। অন্তর্ধানের দুই মাস পর দলের যুগ্ম মহাসচিবের সন্ধান মেলার তিন সপ্তাহের মাথায় তাকে নিয়ে বিএনপির আনুষ্ঠানিক বক্তব্য এল।

নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মুখপাত্রের দায়িত্ব পালনকারী আসাদুজ্জামান রিপনের সঙ্গে সহ দপ্তর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনিও ছিলেন। তিনি মেঘালয়ের শিলংয়ে সালাহ উদ্দিনকে দেখে এসেছেন।

আসাদুজ্জামান বলেন, “বিএনপি এবং সালাহ উদ্দিন আহমেদের পরিবার আশা করে, নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে তাকে খুঁজে পেতে গণমাধ্যম যে ভূমিকা রেখেছে, এখনও বিষয়টি মানবিকভাবে তারা দেখবেন।

“তিনি ভিন দেশে আছেন। তার সম্পর্কে তথ্যনির্ভর সংবাদ প্রকাশ করবেন, যাতে তার কোনো ক্ষতি না হয়। এটাই আমাদের প্রত্যাশা।”

বাংলাদেশ প্রতিদিনে সালাহ উদ্দিনের সাক্ষাৎকার দেওয়ার বিষয়টি সত্য নয় বলে দাবি করেন আসাদুজ্জামান রিপন।

“এটা সঠিক নয়। কারণ যে হাসপাতালে সালাহ উদ্দিন আহমেদের চিকিৎসা চলছে, সেখানে কোনো টেলিফোন, মোবাইল কিংবা অন্য কোনো প্রকার ডিভাইস নেওয়া যায় না। পুরো হাসপাতালে সিসি ক্যামেরা বসানো। এরকম অবস্থায় হাই সিকিউরিটি প্রিজন ওয়ার্ডের কারো সাক্ষাৎকার নেওয়ার সুযোগ কোনো মিডিয়ারই নেই।”

“তার স্ত্রীও (হাসিনা আহমেদ) আমাদের জানিয়েছেন যে, অসুস্থ সালাহ উদ্দিন আহমেদ কোনো পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দেননি।”

গত ১১ মে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে শিলং পুলিশ সালাহ উদ্দিনকে গ্রেপ্তারের পর তার সন্ধান মেলে। তার আগে গত ১১ মার্চ থেকে ‘নিখোঁজ’ ছিলেন তিনি। তার দাবি, একদল ব্যক্তি ঢাকার উত্তরার একটি বাড়ি থেকে তাকে তুলে নিয়েছিল। এরপর কিছু তার মনে নেই।

দুটি হাসপাতাল ঘুরে সালাহ উদ্দিন বর্তমানে মেঘালয় রাজ্য পুলিশের হেফাজতে শিলংয়ের নর্থ ইস্টার্ন ইন্দিরা গান্ধী রিজিওনাল ইন্সটিটিউট অফ হেলথ অ্যান্ড মেডিকেল সায়েন্সেসে চিকিৎসাধীন।

জনি বলেন, “এই হাসপাতালটি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ন্ত্রিত বিশেষায়িত হাসপাতালের মধ্যে পঞ্চম। হাসপাতালে তৃতীয় তলায় আইসিইউতে নিবিড় পযর্বেক্ষণে তার চিকিৎসা চলছে। সেখানে প্রবেশাধিকার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। গণমাধ্যমে সাংবাদিকরাও প্রবেশ করতে পারেন না। পুলিশ সুপারের অনুমতি নিয়ে সালাহ উদ্দিন আহমেদের স্ত্রী দেখা করতে পারেন, তাও দুই বার কিছুক্ষণের জন্য।”

স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে গত ২০ মে কলকাতা হয়ে শিলং যান হাসিনা আহমেদ। তার আগেই জনি গিয়েছিলেন শিলং। বিএনপি নেতাদের মধ্যে তিনিই প্রথম দলীয় নেতার দেখা পেয়েছিলেন।

ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সালাহ উদ্দিনের নিরাপত্তার বিষয়ে বেশ সচেতন বলে জনি জানান।

‘ভাইকে দেখে ৩০ সেকেন্ড কথা বলতে পারিনি’

দলীয় নেতাকে প্রথম দেখার মুহূর্ত বর্ণনা করে জনি বলেন, “প্রথম সালাহ উদ্দিন ভাইকে দেখে আমি ৩০ সেকেন্ড কথা বলতে পারিনি। কথা কোথায় যেন আটকে গেছিল। ভাই আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে কিছুক্ষণ নির্বাকভাবে তাকিয়ে ছিলেন।

“ওই সময়ে কোমর ও বুকে প্রচণ্ড ব্যথার কথা তিনি আমাকে বলেছিলেন। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করায় তিনি ভারত সরকার  ও শিলং কর্তৃপক্ষের প্রতি তার কৃতজ্ঞতার কথা আমাকে বলেছিলেন। এভাবে ১০ মিনিট কেটে যায়,” কথা বলতে গিয়ে নিজেও আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন জনি।

মেঘালয় পুলিশ গ্রেপ্তারের সময় জানতেন না যে তারা বাংলাদেশের সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য সালাহ উদ্দিনকে ধরেছেন। তিনি পরিচয় জানানোর পর তাকে প্রথমে মানসিক হাসপাতালে নিয়ে যায় তারা। পরে তাকে সাধারণ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

জনি জানান, বর্তমানে সালাহ উদ্দিন যে হাসপাতালে রয়েছেন, সেখানে দেখা করার সুযোগ পাননি তিনি। তার আগে সিভিল হাসপাতালে তিনি পুলিশের অনুমতি নিয়ে ১০ মিনিট নেতার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পান।

সালাহ উদ্দিনের শারীরিক অবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে জনি বলেন, তিনি এখনও অসুস্থ। তার কিডনি জটিলতা প্রচণ্ড। প্রস্টেটেও সমস্যা রয়েছে। তিনি চর্মরোগেও ভুগছেন। এছাড়া তার হৃদযন্ত্রে আটমাস আগে যে রিং পরানো হয়েছিল, তা এখনও স্থিতিশীল হয়নি।

চিকিৎসকরা কী বলছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সেখানে চিকিৎসকরা রোগীর চিকিৎসা সম্পর্কে কিছুই জানায় না। ভাবিকে চিকিৎসকরা বলেছেন, আপনি দুশ্চিন্তা করবেন না। চিকিৎসাটা আমাদের দায়িত্ব। আমরা রিপোর্ট পেলে আপনাকে জানাব।”

স্বামীকে সিঙ্গাপুরে নিতে হাসিনার পরিকল্পনার বিষয়ে জনি বলেন, “তিনি সবসময় সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা করেছেন। সেজন্য তিনি থার্ড কান্ট্রির কথা বলেছিলেন।

“কিন্তু যে আইনে মেঘালয়ে তার (সালাহ উদ্দিন) বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, এখন সেখাকার আদালতই নির্ধারণ করবে, কোথায় তার উন্নত চিকিৎসা হবে। সেটা কি ভারতে, না ভারতের বাইরে অন্য কোনো দেশে। কারণ ভারতের আদালত সম্পূর্ণ স্বাধীন।”