ধর্ষক গ্রেপ্তার না হওয়ায় বিএনপির ক্ষোভ

রাজধানীতে চলন্ত মাইক্রোবাসে এক গারো তরুণী ধর্ষিত হওয়ার পরে তিন দিন হতে চললেও অপরাধীরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 May 2015, 02:40 PM
Updated : 24 May 2015, 02:40 PM

রোববার বিকালে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে দলের মুখপাত্রের দায়িত্বে থাকা আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, “এখন রাস্তাঘাটে মা-বোনদের চলাচলের নিরাপত্তা নেই। পহেলা বৈশাখে নারীদের যৌন নিপীড়নের জঘন্য ঘটনার ক্ষত শুকাতে না শুকাতেই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর গারো সম্প্রদায়ের এক তরুণীর সম্ভ্রমহানির ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে। এই ঘটনা দেশের জন্য লজ্জার।

“ঘটনার এতোদিন পরেও মানুষ নামের ওই সব জানোয়ারদের গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনতে না পারায় ‘কালচার অব ইমপিউনিটি’ আরো প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে।”

গারো তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের ধরার ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকার সমালোচনা আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, “আমরা আশা করেছিলাম, সরকার এই ঘটনার দ্রুত ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, তাদের (সরকার) কোনো নড়াচড়া নেই।”

গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় এক গারো তরুণীকে জোর করে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে দেড় ঘণ্টা ধরে চলন্ত গাড়িতে ধর্ষণ করে পাঁচ যুবক। পরদিন শুক্রবার ভাটারা থানায় মামলা করে ধর্ষিতার পরিবার।  

বর্ষবরণের উৎসবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নারীদের যৌন নিপীড়নের ঘটনায় কেউ গ্রেপ্তার না হওয়ায় বিভিন্ন সংগঠনের আন্দোলনের মধ্যেই ধর্ষণের এ ঘটনা ঘটে।   

২১ বছর বয়সী ওই তরুণী যমুনা ফিউচার পার্কে একটি পোশাকের দোকানে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করেন। বড় বোনের সঙ্গে উত্তরায় থাকেন খালার বাসায়। তাদের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়ায়।

নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই ব্রিফিং হয়।

‘২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনে যে সংসদ গঠিত হয়েছে, তারা জনগণের কথা বলে না’ মন্তব্য করে বিএনপির মুখপাত্র বলেন, “আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি, নারীর সম্ভ্রমহানির অসংখ্য ঘটনা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ধান-চাল-গম সরকারিভাবে সংগ্রহের নীতি মার খাওয়ায় শাসকদলীয় মধ্যসত্ত্বভোগীদের দাপটে দেশের কৃষককূল আজ দিশেহারা হয়ে পড়েছে।

“এমনি পরিস্থিতিতে সরকার নির্বিকার ভূমিকা পালন করে চলেছে। দেশে আজ জবাবদিহিমূলক কোনো সরকার নেই। সংসদে গৃহপালিত একটি বিরোধী দল আছে। তারা সরকারের প্রশংসা করে বাহাবা পায়।”

জনগণের স্বার্থে ‘একটি উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক দল’ হিসেবে বিএনপি সব সময় সরকারের ‘খারাপ নীতি ও পদক্ষেপের’ সমালোচনা করে যাবে জানিয়ে তিনি বলেন, “ সাংবিধানিক সীমার মধ্যে শান্তিপূর্ণভাবে আমরা এসব কাজ করব।”

“আমরা বার বার বলেছি, ঘৃণা ও সহিংসতা গণতন্ত্রের পথ নয়। আমরা জনগণের পক্ষে জনস্বার্থের সকল ইস্যুতে সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা অব্যাহত রাখব।”

বিএনপি নেতা রিপন বলেন, “আমরা প্রত্যাশা করি, সরকার বিরোধী মতকে সহ্য করে বিরোধী দলের সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক অধিকারগুলো চর্চার পথকে সংকুচিত করার নীতি থেকে সরে আসবেন।

“সরকার অতি দ্রুত দেশে একটি অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে বিএনপিসহ সকল দলের সাথে অর্থবহ সংলাপের আন্তরিক সূচনার সূত্রপাত ঘটাবেন। তা না করে তারা যদি দিবাস্বপ্ন দেখে থাকেন ২০১৯ সালেও ভোটারবিহীন একটি নির্বাচন করবে। তাদের বলব, বিনা ভোটে নির্বাচন হয় না, বিদেশিদের কাছে সরকারের কোনো ভাবমূর্তি থাকে না।”

প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে ধান-চাল-গম সংগ্রহের পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “সরকারকে বলব, দ্রুত কৃষকদের বাঁচানোর পদক্ষেপ নিন। নইলে আগামীতে কৃষকরা ফসল উৎপাদনে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়বে। দেশ খাদ্য আমদানি নির্ভর হয়ে পড়বে। আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে।”

সাগরেভাসা বাংলাদেশিদের উদ্ধারে সরকার ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি নেতা রিপন।

সংবাদ ব্রিফিংয়ে অন্যদের মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আফজাল এইচ খান, শাহজাদা মিয়া, আবদুস সালাম আজাদ, হাবিবুর রহমান হাবিব, মুস্তাফিজুর রহমান বাবুল, আসাদুল করীম শাহিন, হেলেন জেরিন খান, শাম্মী আখতার, সেলিম রেজা হাবিব, আকম মোজাম্মেল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।