প্রজন্ম লীগ: এক নামে সাত সংগঠন

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নাম জড়িয়ে রাজধানীতে বিচ্ছিন্নভাবে গড়ে ওঠছে বিভিন্ন সংগঠন। এর মধ্যে ‘প্রজন্ম লীগের’ নামেই রয়েছে অন্তত সাতটি সংগঠন।

কাজী মোবারক হোসেনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 May 2015, 02:51 PM
Updated : 24 May 2015, 11:28 AM

এই সাতটি সংগঠনের চারটি আবার ‘বাংলাদেশ আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ’ নামে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।

এছাড়াও বাংলাদেশ আওয়ামী প্রজন্ম লীগ, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ ও বাংলাদেশ আওয়ামী মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম লীগ নামে তিনটি সংগঠন সক্রিয় রাজধানীতে।

‘বাংলাদেশ আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের’ নামে যে চারটি সংগঠন রয়েছে তার একটির সভাপতি মো. ফয়জুল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক মো. রুকনুদ্দীন পাঠান।

একই নামের পৃথক আরেকটি সংগঠনের নেতৃত্বে আছেন আসাদুজ্জামান দুর্জয় (সভাপতি), এবাদত মুন্সি (সাধারণ সম্পাদক)। তৃতীয়টির সভাপতির দায়িত্বে আছেন অ্যাডভোকেট কামাল হোসেন; সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রায়হান।

এছাড়া বাংলাদেশ আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের চতুর্থ সংগঠনটির সভাপতির দায়িত্বে আছেন রাজা মাহমুদ।

অন্যদিকে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের সভাপতি ফাতেমা জামান সাথী, সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম স্বপন, বাংলাদেশ আওয়ামী মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম লীগের সভাপতি সাইফুর রহমান ছোট্ট ও সাধারণ সম্পাদক আজম।

আর বাংলাদেশ আওয়ামী প্রজন্ম লীগের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন আবুল কালাম অনু।

অভিযোগ রয়েছে, সংগঠনের নাম ভাঙ্গিয়ে রাজধানীতে বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি করছেন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদধারীরা। পাশাপাশি ক্ষমতাসীন সরকারের মন্ত্রীসহ প্রভাবশালীদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অতিথি করে অর্থ কামানোর ধান্দা করেন তারা।

অনেকেই ক্ষমতাসীন সরকারের সুবিধা নিতে নিজেদের আওয়ামী লীগ পরিচয় দিতে এসব সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

একই নামে বহুদলে বিভক্ত এসব সংগঠনের নেতারা নিজেদের ‘প্রকৃত’ সংগঠনের নেতা দাবি করে বরং প্রতিপক্ষ সংগঠনের নেতাদের অপকর্মের দিকেই ইঙ্গিত করছেন।

অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাদের অনুমোদন দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।”

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলো হচ্ছে যুবলীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ ও তাঁতী লীগ। এছাড়া ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের স্বীকৃতি রয়েছে ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগের।

আহমদ হোসেন বলেন, “এরা তো আমাদের দলের কথা, আদর্শের কথাই বলে। সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের বাইরে যে কেউ বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কথা বলতে পারে।”

এসব সংগঠন আসলে কী করছে- তা নিয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা চাঁদাবাজির দিকে ইঙ্গিত করেন। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, “দেখেন যত ব্যানার-ফেস্টুন লাগিয়েছে, তার টাকা কোত্থেকে আসে? আর আদর্শের প্রচারের চেয়ে নামের প্রচারই তো বেশি। এই নাম ব্যবহার করে তারা বিভিন্ন স্থান থেকে সুযোগ-সুবিধা নেয়।”

‘বাংলাদেশ আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের’ একটির সাধারণ সম্পাদক রুকনুদ্দিন পাঠান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বঙ্গবন্ধুর নামে প্রজন্ম লীগের নাম ব্যবহার করে এরা চাঁদাবাজি , টেন্ডারবাজি ও সরকারের কাছ থেকে সুবিধা নিতে চাচ্ছে। এরা প্রকৃতপক্ষে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী মুখোশধারী। এরা প্রথমে দখল করে পরে নকলের রাজনীতি করে।”

বাংলাদেশ আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের একটির সাধারণ সম্পাদক এবাদত মুন্সি মুফতি হান্নানের খালাতো ভাই বলেও অভিযোগ করেন রুকনুদ্দীন।

অন্যদিকে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের সভাপতি ফাতেমা জামান সাথী বলেন, “আমি দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অনেকের ভাত নষ্ট হয়ে গেছে। আমার বিরুদ্ধে যারা চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির অভিযোগ দিয়েছে প্রকৃতপক্ষে তারাই চাঁদাবাজ।”

গণ পূর্ত মন্ত্রণালয়ে ঠিকাদার সমিতির মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা পরিচয় দিয়ে সাথী বলেন, “আমি ভাল কাজ করে যাচ্ছি তাই আমার দুর্নাম বেশি।”

এসব সংগঠনের দলীয় কার্যালয়ের ঠিকানা হিসেবে আওয়ামী লীগের বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নাম ব্যবহার করলেও দল থেকে এগুলোর অনুমোদন না থাকার কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।