বাংলাদেশিদের উদ্ধারে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা লজ্জার: বদরুদ্দোজা

আন্দামান সাগর ও মালাক্কা প্রণালিতে পাচারকারীদের নৌকায় ভাসমান বাংলাদেশিদের উদ্ধারে ক’জন মন্ত্রী সেখানে গেছেন- সেই প্রশ্ন তুলে সরকারের সমালোচনা করেছেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 May 2015, 12:05 PM
Updated : 22 May 2015, 04:39 PM

শুক্রবার এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, মানবপাচারের ‘ফাঁদে পড়ে’ ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় প্রায় ১০ হাজার মানুষ সাগরে ভাসছে বলে তিনি শুনেছেন।

"এদের উদ্ধারে দেশের কতজন মন্ত্রী ও সচিব ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও মিয়ানমারে গেছেন? ক’টি হেলিকপ্টার ও নৌ বাহিনীর জাহাজ ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। যদি না হয়ে থাকে, তাহলে এটা হবে লজ্জার ও ক্ষোভের।”

বহু দেশ সাগরে বিপদে পড়া মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসার ঘোষণা দিলেও সরকারের মন্ত্রীদের ‘কোনো মাথাব্যথা নেই’ বলে মন্তব্য করেন সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা। 

তিনি বলেন, “সমুদ্রবক্ষে যেখানে বাংলাদেশিরা ভেসে আছে, সেখানে তারা (সরকার) নিশ্চুপ। এই লজ্জা সব অগ্রগতিকে ম্লান করে দেয়।” 

বদরুদ্দোজা বলেন, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী, স্বাস্থ্য মন্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রীর 'উচিৎ ছিল’ ওই সব দেশে গিয়ে বিষয়গুলোর সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।

ভাসানী অনুসারী পরিষদ জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চ’ শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।

‘চসেস্কুও টেকেনি’

দেশে ‘৫ জানুয়ারির মত’ নিবার্চন হতে থাকলে এর পরিণতি ক্ষমতাসীনদের জন্য ‘শুভ হবে না’ বলেও হুঁশিয়ার করেন বদরুদ্দোজা চৌধুরী।

“যেভাবে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন হয়েছে, সেই একই পদ্ধতিতে তিন সিটি করপোরেশনে নিবার্চন হয়ে গেল। এই পদ্ধতিতে যদি সরকার নির্বাচন চালিয়ে যান, চালিয়ে যাবেন। কিন্তু শেষ পরিণতিতে ক্ষমতায় টিকে থাকা যাবে না।”

বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময় রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করা বদরুদ্দোজা বলেন, “অতীতে ইতিহাস দেখলে দেখা যাবে, কেউ টিকে থাকতে পারেনি। রুমানিয়ার নিকোলাই চসেস্কুর মতো মহাক্ষমতাধরও টিকে থাকতে পারেননি।”

সিটি নির্বাচন নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “চিফ ইলেকশন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন হাসতে হাসতে বলেছেন, দারুণ নির্বাচন হয়েছে। এই পদে একজন শিক্ষিত ব্যক্তি যদি এভাবে নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন, তাহলে আমরা যাব কোথায়?’’

নরেন্দ্র মোদির প্রশংসা

বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে ভারতের রাজ্যসভা ও লোকসভায় সংবিধান সংশোধন বিল পাস হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রশংসা করেন বিকল্পধারা সভাপতি।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী ঢাকায় ‘মুক্ত মন নিয়ে আসবেন এবং তিস্তা চুক্তির সমাধান দেবেন’ বলেও বদরুদ্দোজা আশা প্রকাশ করেন।

পানি বণ্টন সমস্যার বিষয়টি মোদীর ঢাকা সফরে আলোচনার ‘এক নম্বর এজেন্ডায়’ নিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

“আমরা যদি প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে খোঁচাখুচি করি, তাহলে কীভাবে হবে? প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্কে আমাদের নীতি হতে হবে- ‘নিতে হবে, দিতে হবে’।”

মওলানা ভাসানীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে বিএনপির আজকের অবস্থান নিয়ে ‘আক্ষেপ’ প্রকাশ করেন বদরুদ্দোজা।

বিএনপির অন্যতম এই প্রতিষ্ঠাতা সদস্য বলেন, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ‘মন থেকে’ মওলানা ভাসানীকে শ্রদ্ধা করতেন। কিন্তু বিএনপি এখন ‘প্রকৃত অর্থে’ শ্রদ্ধা জানানোর মতো কর্মসূচি নেয় না।

“পাঠ্যপুস্তুকেও ভাসানীর জীবনী স্থান পায় না। পরবর্তী প্রজন্ম হয়ত তাকে চিনতেই পারবে না। এটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যের।”

ভাসানী অনুসারী পরিষদের নির্বাহী চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক জসিম উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, বিকল্প ধারার সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক নুরুল আমিন ব্যাপারী, সাংবাদিক কাজী সিরাজ, ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব রফিকুল ইসলাম বাবুল আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন।

‘আমরা সবাই পথহারা’

জাতীয় প্রেসক্লাবে জিয়া শিশু-কিশোর মেলা কেন্দ্রীয় সংসদের উদ্যোগে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেন, “দেশ এক কঠিন সঙ্কটে আছে। আমরা সবাই আজ পথহারা।”

এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য কবি নজরুলের জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ হতে নতুন প্রজন্মকে ঐক্যবদ্ধ করার আহ্বান জানান তিনি।

সংগঠনের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম শিকদারের সভাপতিত্বে বিএনপির সহ তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব, জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) সাধারণ সম্পাদক মনির খান এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।