মোদীকে ধন্যবাদ খালেদার

সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে ভারতের পার্লামেন্টে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব পাস হওয়ায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন খালেদা জিয়া।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 May 2015, 05:18 PM
Updated : 9 May 2015, 07:21 PM

শনিবার রাতে গুলশান কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “৪০ বছর ধরে ঝুলে থাকার পর সীমান্ত চুক্তি ভারতের লোকসভায় পাস হয়েছে। এজন্য মোদী সরকারকে আমি ধন্যবাদ দেব। মোদী সাহেব বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করতে তিনি এটি করেছেন।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী

“তিনি (ভারতের প্রধানম্‌ন্ত্রী) আরও বলেছেন, আমি প্রতিবেশী বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই। কোনো দলের সঙ্গে নয়, জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই। বিএনপিও এটাই চায়।”

আওয়ামী লীগ কংগ্রেস সরকারের অনেক ‘দালালি’ করেছে অভিযোগ করে খালেদা বলেন, “কংগ্রেসের কাছ থেকে তারা কিছুই আনতে পারেনি, শুধু দিয়েছে।”

রাতে গুলশান কার্যালয়ে ঢাকা কর আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি অ্যাডভোকেট মাজম আলী খান ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাফর উল্লাহর নেতৃত্বে ১৭ জন নির্বাচিত কর্মকর্তাসহ জাতীয়তাবাদী কর আইনজীবী ফোরামের নেতৃবৃন্দের সাক্ষাৎ উপলক্ষে এই মতবিনিময় অনুষ্ঠান হয়।

গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা কর আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ২২ সদস্যের কার্যকরী কমিটির মধ্যে জাতীয়তাবাদী কর আইনজীবী ফোরামের ১৭ জন প্রার্থী বিজয়ী হন।

দল পুনর্গঠনের ইঙ্গিত

খালেদা জিয়া তার বক্তব্যের শুরুতে দলের পুনর্গঠনের ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, “আমাদের দলের পুনর্গঠনে যেতে হবে। ইতিমধ্যে আমরা প্রক্রিয়াও শুরু করেছি। যারা ত্যাগী-পরীক্ষিত, যারা দলের বিপদের সময়ে কাজ করেছেন, তাদের কমিটিতে আনা হবে। তাদের মূল্যায়ন করা হবে।”

‘র‌্যাবের কাছেই সালাহ উদ্দিন’

খালেদা জিয়া অভিযোগ করেন, “দলের যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদকে র‌্যাবের লোকজন তুলে নিয়ে গেছে। সে র‌্যাবের কাছেই আছে। আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, তাই এখনো বলছি, সালাহ উদ্দিনকে দ্রুত তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিন। পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে না পারলে যেখান থেকে তাকে তুলে নেওয়া হয়েছে, সেখানেই তাকে ফিরিয়ে দিন।”

গত ১০ মার্চ উত্তরার একটি বাসা থেকে সালাহ উদ্দিন আহমেদকে র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে গেছে বলে তার পরিবার অভিযোগ করেছে।

র‌্যাবের কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করে খালেদা বলেন, “এরা মানুষ খুন করে। নারায়ণগঞ্জের ঘটনা দেশবাসী জানে। এই র‌্যাবকে ব্যান করা দরকার।”

নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় জড়িত র‌্যাব সদস্যদের কারাগারে ‘জামাই আদরে’ রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

তিন সিটি নিবার্চন প্রসঙ্গে

সদ্য সমাপ্ত সিটি করপোরেশন নির্বাচন প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, “আজ দেশে গণতন্ত্র নেই, আইনের শাসন নেই। কারণ দেশে জনগণের ভোটে কোনো নির্বাচিত সরকার নেই। একে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলা যায় না। এটি একটি পুলিশি স্টেট হয়ে গেছে। পুলিশরাই বলছে, তারাই এই সরকারকে টিকিয়ে রেখেছে। তারা (পুলিশ) যতদিন চাইবে, ততদিন তাদের রাখবে।”

ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে ‘ভোট কারচুপির ঘটনাবলী’ সঠিকভাবে উপস্থাপন করায় গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রামের নবনির্বাচিত মেয়রদের বিষয়ে তিনি বলেন, “ভোট ডাকাতি করে ওরা তিন সিটি দখল করেছে। এখন কাজের কাজ কিছুই হবে না। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি হবে। সর্বত্র চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসীর দৌরাত্ম চলছে।”

বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে খালেদা জিয়া বলেন, “সেখানে কি সুন্দর নির্বাচন হয়েছে। এটা চিন্তাই করা যায় না। ভারতেও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। ওই সব নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন কোনো পক্ষ নেয় না। আমরা কি ওই সব নিবার্চন দেখে কিছু শিখতে পারি না?”

বিএনপি-জামায়াত জোটের অবরোধে যানবাহনে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপে প্রাণহানির প্রসঙ্গ আসে খালেদা জিয়ার বক্তব্যে।

এজন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “সব পেট্রোল বোমার সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ জড়িত। অবরোধের সময়ে পুলিশ পাহারায় বাসে বোমা ছোঁড়া হয়েছে, কিন্তু একজনকেও গ্রেপ্তার করা হয়নি। জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে সরকার বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের বিরুদ্ধে পেট্রোল বোমা মারার অপপ্রচার চালাচ্ছে।”

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন ঢাকা কর আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি মাজম আলী খান ও জাতীয়তাবাদী কর আইনজীবী ফোরামের সভাপতি আবদুল মজিদ।

অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, চেয়ারপারসনের ‍উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, আহমেদ আজম খান, সহ আইন বিষয়ক সম্পাদক নিতাই রায় চৌধুরী, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মাসুদ আহমেদ তালুকদার, জাতীয়তাবাদী কর আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব হুমায়ুন কবীর, ঢাকা কর আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আবদুল গফুর মজুমদার প্রমুখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।