অনেকেই বলছেন, ভোট বর্জন ঠিক হয়নি: মনজুর

ভোট গ্রহণের মাঝপথে নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তে ‘সমর্থকদের আফসোস’ স্পর্শ করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী এম মনজুর আলমকে।

মিন্টু চৌধুরী চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 April 2015, 01:53 PM
Updated : 30 April 2015, 07:47 PM

‘পরিস্থিতির’ কারণে ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন জানিয়ে তিনি বলেছেন, “ভোটগ্রহণ শুরুর পর থেকে কেন্দ্র দখলসহ বিভ্রান্তিমূলক তথ্য পেয়েছি। সাধারণ জনগণসহ অনেকেই বলেছে, ওই সময়ে প্রত্যাখ্যান করাটা ঠিক হয়নি।”

মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত তিন সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরুর তিন ঘণ্টার মধ্যে বর্জনের ঘোষণা দেন মনজুর আলমসহ বিএনপি সমর্থিত অন্য মেয়র প্রার্থীরা।

ফল প্রকাশের পর দেখা যায়, ৩ লাখ ৪ হাজার ৮৩৭ ভোট পেয়েছেন চট্টগ্রামের গত পাঁচ বছরের মেয়র মনজুর। তার চেয়ে ১ লাখ ৭০ হাজার ৩২৪ ভোট বেশি পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিন।

বিরোধী জোট ভোটে ব্যাপক জালিয়াতির অভিযোগ করলেও তার জবাবে আওয়ামী লীগ নেতারা বর্জনের আগ পর্যন্ত বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের বিপুল পরিমাণ ভোট পাওয়ার দিকটি তুলে ধরেছেন।

 ঢাকা উত্তরে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল সোয়া ৩ লাখ ভোট পেয়ে ১ লাখ ৩৫ হাজার ভোটে হেরেছেন। দক্ষিণে মির্জা আব্বাস প্রায় ৩ লাখ ভোট পেয়ে হেরেছেন প্রায় আড়াই লাখ ভোটে।

বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে পাশে রেখে সেদিন ভোট বর্জনের পাশাপাশি রাজনীতি ছাড়াও ঘোষণা দেন খালেদা জিয়ার অন্যতম উপদেষ্টা মনজুর।

ভোটের দুদিন বাদে বৃহস্পতিবার উত্তর কাট্টলীর বাসায় মনজুরের সঙ্গে কথা হয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের, যাতে নিজের পরবর্তী পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি। 

দলের চাপের কারণে কী নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছেন- প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “ঢাকার আগে চট্টগ্রামে ভোট প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতির আলোকে নোমান সাহেব ও খসরু সাহেবের সঙ্গে পরামর্শ করেই ভোট প্রত্যাখ্যান ও বর্জন করা হয়েছে।”

ভোট দিচ্ছেন এম মনজুর আলম। মঙ্গলবার সকালে ভোট দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বর্জনের ঘোষণা দেন তিনি

বর্জন না করলে জেতার সম্ভাবনা ছিল বলে মনে করেন কি না- জানতে চাইলে মনজুর বলেন, “ভোটে আমাদের পক্ষে জনগণ রায় দেবে, এ নিয়ে আশ্বস্ত ছিলাম। স্বাভাবিকভাবে যতক্ষণ ভোট হয়েছে, তার ৮০ শতাংশই আমি পেয়েছি।”

“আমি শান্তিপ্রিয় মানুষ। যা হয়েছে আপনারা দেখেছেন, পরিস্থিতির কারণে ভোট বর্জন করেছি,” সরাসরি উত্তর এড়িয়ে বলেন তিনি।

বহু বছর কাউন্সিলরের দায়িত্ব পাওয়ার পর মেয়র নির্বাচিত হওয়া মনজুর বলেন, “আমাকে যারা পছন্দ করেন, তাদের অনেকেই আফসোস করছে। হয়ত অনেক কিছুই হতে পারত। জনগণের আফসোসের জন্য আমি দুঃখিত।”

“আমি চাইনি, আমার কারণে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হোক। আমি ভোটে রয়ে গেলে আরও বড় ধরনের সহিংসতা হত। আমি শান্তি পছন্দ করি। জেনেশুনে কাউকে হুমকির মুখে ঠেলে দিতে পারি না,” ভোট বর্জনের পক্ষে নিজের যুক্তি দেখান তিনি।

ভোটের দিন সকালে নগরীর বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি থাকলেও কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট এবং বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ বাঁধার পর মনজুর ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন, এরপর বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতিও কমে যায়।

নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেওয়ার পর বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত বাড়ি থেকে বের হননি মনজুর। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা দলের নেতা-কর্মী, এলাকার লোকজন এবং গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে সময় কাটাচ্ছেন তিনি।

মনজুরের ভোটের প্রচারের মূল দায়িত্বে ছিলেন আবদুল্লাহ আল নোমান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী

গত দুদিনে চট্টগ্রাম বিএনপির শীর্ষনেতারা যোগাযোগ করেছেন কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “নোমান ভাই একবার ফোন করেছিলেন। স্থানীয় নেতাকর্মীরা দেখা করে কথা বলেছেন।”

ভবিষ্যতে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত না থাকার বিষয়ে এখনও অটল বলে জানান মনজুর। সমাজসেবা আর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জীবনের বাকি দিনগুলো কাটাতে চান তিনি।

“রাজনীতি বর্জনের ঘোষণা কেউ দেন না। আমি দিয়েছি। এভাবেই চর্চা হোক না।”

আওয়ামী লীগের বলয়ে থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়া মনজুর পাঁচ বছর আগে নির্বাচনের আগে আকস্মিকভাবেই বিএনপির সমর্থন নিয়ে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামেন তারই রাজনৈতিক গুরু এ বি এম মহিউদ্দিনের সঙ্গে।

তিন বারের মেয়র মহিউদ্দিনকে প্রায় এক লাখ ভোটে হারিয়ে চট্টগ্রামের মেয়র হওয়ার পর বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করা হয় তাকে।  

দীর্ঘদিন জনপ্রতিনিধি হিসেবে কাজ করার দিকটি তুলে ধরে মনজুর বলেন, “এসময়ে জনগণ আমাকে যে ভালোবাসা দিয়েছেন, তার প্রতিদান আমাকে দিতে হবে। আমি তাদের পাশেই থাকব।

“মানুষের সেবা করে যাব। বয়স হয়েছে, সমাজসেবা এবং পরিবারকে সময় দিতে চাই বাকি জীবনে।”

২০১০ সালে ভোটে জেতার পর মহিউদ্দিনের বাসায় গিয়ে দেখা করে নগর পরিচালনায় তার সহযোগিতা কামনা করেছিলেন মনজুর।

এবার হারের পর তিনি বলেন, নতুন মেয়র নাছির চাইলে সহযোগিতা করতে কোনো কার্পণ্য করবেন না তিনি।