খালেদা জানালেন, অবরোধ ‘সক্রিয়’ নয়

আগাম নির্বাচনের দাবিতে হরতাল থেকে সরে আসার ২৬ দিন পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জানালেন, ২০ দলীয় জোটের অবরোধ কর্মসূচিও এখন আর ‘সক্রিয় নেই’।  

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 April 2015, 02:59 PM
Updated : 26 April 2015, 03:54 PM

রোববার গুলশানের কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক জানতে চান গত ৫ জানুয়ারি থেকে ডাকা বিএনপি জোটের লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি এখনো অব্যাহত আছে কিনা।

এর জবাবে খালেদা বলেন, “এটা ২০ দলের কর্মসূচি। কাজেই কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেওয়ার দায়িত্ব ২০ দলের। নির্বাচন নিয়ে এবং ধরপাকড় ইত্যাদি কারণে জোটগতভাবে আমরা বসতে পারিনি। সেজন্য এই কর্মসূচি সম্পর্কেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

এরপর খালেদা বলেন, “এই কর্মসূচি, মোটামুটিভাবে আপনারা জানেন যে, এখন এতো সক্রিয় নয়।”

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে নিজের কার্যালয় থেকে বের হতে বাধা পেয়ে গত ৫ জানুয়ারি সারা দেশে এই অবরোধ ডাকেন খালেদা জিয়া।  

এরপর ফেব্রুয়ারির শুরুতে এসএসসি পরীক্ষার প্রথম দিন থেকে  সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়া প্রতিদিন হরতাল শুরু করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট।   

এর মধ্যে বিশ্ব ইজতেমা ও এসএসসি পরীক্ষার সময় হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি না দেওয়ার আহ্বান জানানো হলেও খালেদা তাতে সাড়া দেননি।

ছবি: তানভীর আহমেদ/বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

এর মধ্যেই খালেদার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো মালয়েশিয়ায় মারা যান। তার লাশ দেশে আনার পর ওই কার্যালয় থেকেই ছেলেকে শেষ বিদায় জানান বিএনপিনেত্রী।

লাগাতার অবরোধ ডেকে নিজের কার্যালয়ে থাকা খালেদা মামলার শুনানিতে অনুপস্থিত থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করে আদালত। ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষাশহীদ দিবসে এবং ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে শ্রদ্ধা নিবেদনে না যাওয়ায় আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনার মুখে পড়তে হয় তাকে।

সে সময় বিএনপির নামে সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে অবরোধ ও হরতালের বিষয়ে জানানো হচ্ছিল। ২৬ মার্চ সামনে রেখে একদিন আগে পাঠানো তেমনই এক বিবৃতিতে প্রথমবারের মতো কর্মসূচিতে পরিবর্তন দেখা যায়। হরতালের কোনো ঘোষণা ওই বিবৃতিতে ছিল না।

পরে আরেক বিবৃতিতে জানানো হয়, সিটি নির্বাচনের কারণে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরী হরতাল-অবরোধের বাইরে থাকবে।  

এপ্রিলের শুরু থেকে এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর পর বিএনপির টানা হরতালেরও অবসান ঘটে। এরপর খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার প্রতিবাদে কেবল ২২ এপ্রিল হরতাল করেছে দলটি।

ছবি: তানভীর আহমেদ/বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

৫ এপ্রিল খালেদা জিয়া তার কার্যালয়ে টানা অবস্থানের অবসান ঘটিয়ে আদালতে হাজির হন এবং জামিন নিয়ে বাড়ি ফিরে যান। 

বিএনপির এই টানা কর্মসূচিতে সারা দেশে সহিংসতা ও নাশকতায় দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে বাসে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যার চারটি ঘটনায় খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে মামলাও হয়।   

হরতাল-অবরোধে নাশকতার কারণে শুরুতে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক থাকলেও পরে আর রাজপথে এসব কর্মসূচির কোনো প্রভাব দৃশ্যমাণ ছিল না। অবরোধ চলছে কি-না সে বিষয়েও বিএনপি নেতাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছিল না।   

রোববার সংবাদ সম্মেলনে সেই জবাব পাওয়া গেল বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছ থেকে।

সিটি নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা পরাজিত হলে পরবর্তী কর্মসূচি কী হবে জানতে চাইলে খালেদা বলেন, “নির্বাচনের ফলাফল হোক, তারপর এ বিষয়ে বৈঠকে বসে ঠিক করা হবে।”

ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে বিএনপিসমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী হলে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে আগামীতে জাতীয় নির্বাচনে যাবেন কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “এই কমিশন ঠুটো জগন্নাথ। আমরা নির্বাচিত হলেই এ কমিশন শুদ্ধ হয়ে যাবে না। এরা সরকারের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। তাদের অধীনে জাতীয় নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হতে পারে না।”

হরতাল-অবরোধে পেট্রোল বোমায় মানুষ হত্যার অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিএনপি প্রধান সেসব ঘটনার জন্যও সরকারকে দায়ী করেন।    

“জনগণের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে আওয়ামী লীগ পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় যানবাহনে পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যা করেছে। অনেকে অগ্নিদগ্ধ হয়েছে। এর জন্য বিরোধী দল কোনোভাবেই দায়ী নয়। আমরা মনে করি, সিটি নির্বাচনে সরকারের মিথ্যাচার, অপপ্রচারের বিরুদ্ধে জনগণ সুযোগ পেলেই রায় দেবে।”

বিশাল গাড়িবহর নিয়ে নির্বাচনী প্রচারে নেমে আচরণবিধি ভঙ্গের বিষয়ে এক প্রশ্নে খালেদা বলেন, “আমার একটি গাড়ির সঙ্গে নিরাপত্তারক্ষীদের কয়েকটি গাড়ি ও মহিলাদের একটি গাড়ি ছিল। আর বেশিরভাগ গাড়ি ছিল আপনাদের মিডিয়ার গাড়ি। এখানে আচরণবিধি কোথায় ভঙ্গ হল? সরকারের মন্ত্রীরা সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিয়ে প্রচারে অংশ নিয়েছে, তা নির্বাচন কমিশন দেখে না।”

তিন মাসের আন্দোলন কর্মসূচি থেকে বিএনপির সরে আসার ক্ষেত্রে বিদেশি কূটনীতিকদের কোনো উদ্যোগ ছিল কিনা জানতে চাইলে চেয়ারপারসন বলেন, “না, এটা ঠিক নয়।... বিদেশিদের মাধ্যমে কেন সমঝোতা হবে? আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশিরা কেন হস্তক্ষেপ করবে।”

সংবাদ সম্মেলন শেষে খালেদা জিয়া নিজের চেম্বারে না গিয়ে গাড়িতে উঠে সরাসরি বাসায় চলে যান।