সব দিন সমান যায় না: হাসিনাকে খালেদা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘দম্ভ’ আর ‘প্রতিহিংসার পথ’ ছেড়ে ‘সমঝোতায়’ আসার’ আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 April 2015, 12:30 PM
Updated : 26 April 2015, 07:48 PM

রোববার গুলশানে নিজের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য তিনি বলেন, “আমার শেষ কথা, আপনি বিনা ভোটে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন। এই দম্ভ ত্যাগ করুন। মনে রাখবেন, সব দিন সমান যায় না।”

খালেদার ভাষায়, শেখ হাসিনার কাছে রাষ্ট্রক্ষমতা এখন ‘বাঘের পিঠে সওয়ার হওয়ার মতো বিপজ্জনক’ হয়ে উঠেছে।

“আপনি এখন নামতে ভয় পাচ্ছেন।... ভয় পাবেন না । আমরা আপনার মতো প্রতিশোধপরায়ন নই। আপনি নম্র, ভদ্র, সংযমী হোন। উগ্র স্বভাব ও জিঘাংসার মনোবৃত্তি বদলান। গণতন্ত্র ও সংলাপের পথে আসুন।

“আমরা আপনাকে সহি সালামতে নামতে সাহায্য করব। একই সমতলে দাঁড়িয়ে নির্বাচন করব। মানুষ যাকে খুশি বেছে নেবে। আসুন সেই পথটা অন্তত খুলে দেই।”

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বর্জন করা খালেদা জানান, তার দল ঢাকা ও চট্টগ্রামের আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ‘সরকার, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের জন্য টেস্ট কেস’ হিসাবে নিয়েছে।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর উদ্দেশে খালেদা বলেন, “এ পর্যন্ত যাই করেছেন, সিটি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হতে দিন। মনে রাখবেন এতে আপনার ক্ষমতা যাচ্ছে না।”

বিএনপিসমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে ভোটের প্রচারে ‘দারুণ’ সাড়া পাওয়ার কথা জানিয়ে ২০ দলীয় জোটনেত্রী খালেদা বলেন, “আমি নিশ্চিত, ঢাকা ও চট্টগ্রামের মানুষ একটুখানি সুযোগ পেলেই নীরব ভোট বিপ্লব ঘটিয়ে অত্যাচারের বদলা নেবে, উপযুক্ত জবাব দেবে।”

আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে গত ৩ জানুয়ারি থেকে টানা ৯২ দিন গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান শেষে গত ৫ এপ্রিল নিজের বাসায় ফেরার পর এই প্রথম গণমাধ্যমের মুখোমুখি হলেন বিএনপিনেত্রী।

প্রায় ৫০ মিনিটের বক্তব্যে তিনি সিটি নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির অবস্থান এবং সরকার ও নির্বাচন কমিশনের বিপক্ষে নানা অভিযোগের কথা তুলে ধরেন।

‘হামলা প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের উসকানিতে’

খালেদা জিয়া ঢাকায় বিএনপিসমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে ভোটের প্রচারের সময় তার গাড়িবহরে হামলার ঘটনা তুলে ধরে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের মন্ত্রীদের দায়ী করেন। 

তিনি বলেন, “এটা যে আমাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে সুপরিকল্পিত হামলা ছিল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের উসকানির পর যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সরকার সমর্থকরা এই হামলা চালায়।”

খালেদা বলেন, “তারা প্রকাশ্যে হাজার হাজার মানুষের সামনে সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে উত্তরা, কারওয়ান বাজার, ফকিরাপুলের কাছে ও বাংলামোটরে আমার গাড়িবহরে পরপর চারদিন হামলা করেছে। বাংলা মোটরে আমাকে বহনকারী গাড়ির ওপর সশস্ত্র হামলা চালানো হয়। আমার গাড়িটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”

এসব হামলার ঘটনায় পুলিশ হামলাকারীদের সহযোগিতা করেছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

“সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা আমাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। আমি যে আসনে বসেছিলাম, সেই আসনের পাশেই বুলেটপ্রুফ গাড়ির জানালার কাচ গুলি লেগে ফেটে যায়। আল্লাহর রহমতে অল্পের জন্য আমার জীবন রক্ষা পায়।”

ওই হামলার ঘটনাকে ‘নাটক’ বলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করেন খালেদা।

তিনি বলেন, “আমার প্রাণনাশের লক্ষ্যে দলীয় সন্ত্রাসীদের হামলার পর প্রধানমন্ত্রী ওইসব ঘটনাকে যেভাবে নাটক আখ্যা দিয়েছেন এবং স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যেভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তাতে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। আমি বুঝতে পারছি, এর কোনো বিচার হবে না।”

ছেলেদের জন্য কান্না

বক্তব্যের এক পর্যায়ে ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর কথা বলতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন বিএনপি চেয়ারপারসন। এ সময় তাকে চশমা খুলে টিস্যু দিয়ে চোখ মুছতেও দেখা যায়।

“অল্প কিছু দিন আগে আমি আমার আদরের ছোট ছেলেটিকে চিরকালের জন্য হারিয়েছি। আমার একমাত্র জীবিত সন্তানটি অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে দীর্ঘদিন ধরে দূর দেশে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

“এখন আপনারাই আমার স্বজন, আপনারাই আমার আত্মীয়। আমার সকল তৎপরতা আপনাদের ঘিরে। তাই সব অন্যায়-অত্যাচারের প্রতিকার ও জবাব দেওয়ার ভার আমি আপনাদের ওপরই অর্পণ করলাম।” 

নির্বাচনী প্রচারের সময় হামলার ঘটনার দেশি-বিদেশি যারাই উদ্বেগ-সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন, তাদের প্রতি ‘কৃতজ্ঞতা’ জানান খালেদা জিয়া।

তিনি বলেন, “ধারাবাহিক ওইসব হামলা ও নির্বাচনী প্রচারকাজে বাধা দেওয়ার বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন কমিশন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া দূরে থাক, টু-শব্দটি করেনি।”

ঢাকায় বিএনপিসমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারের দায়িত্বে থাকা আর্দশ ঢাকা আন্দোলনের আহ্বায়ক অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, সদস্য সচিব শওকত মাহমুদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ ও সদস্য মাহফুজউল্লাহ এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপি নেতাদের মধ্যে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, আসম হান্নান শাহ, জমিরউদ্দিন সরকার, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইনাম আহমেদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান ও বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস।