ইসির সিদ্ধান্ত বদল সরকারের ইচ্ছায়: বিএনপি

সেনা মোতায়েনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের নতুন সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করে বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ বলেছেন, ইসি যে ‘সরকারের ইচ্ছায়’ চলছে, সেনা নিয়ে ‘সিদ্ধান্ত বদলই তার প্রমাণ’।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 April 2015, 10:34 AM
Updated : 24 April 2015, 10:34 AM

শুক্রবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়রপ্রার্থী মির্জা আব্বাসের পক্ষে প্রচারে নেমে তোপখানা রোডে সাংবাদিকদের সামনে এ মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ।

তিনি বলেন, “সেনা মোতায়েন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত আমাদের হতাশ করেছে। সেনাবাহিনীকে টহলে রাখার সিদ্ধান্ত তুলে নিয়ে তারা পুলিশ ও র্যাাব দিয়ে নির্বাচন পরিচালনা করছে। আমরা মনে করি, সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন প্রমাণ করে যে, বর্তমান ইসি সরকারের ইচ্ছায় পরিচালিত হচ্ছে।’’

বিএনপি শুরু থেকেই নির্বাচনের কয়েক দিন আগে থেকে সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়ে এলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ‘তার প্রয়োজন নেই’ বলে মত দিয়ে আসছিল।

এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন গত বুধবার জানায়, ২৮ এপ্রিল ভোট ঘিরে চারদিন সেনাবাহিনী রিজার্ভ ফোর্স ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে। রিটার্নিং কর্মকর্তা চাইলে তারা কাজে নামবে। 

ওই রাতেই সশস্ত্র বাহিনী বিভাগকে চিঠি দিয়ে তিন ব্যাটালিয়ন সেনা চাওয়ার পর বৃহস্পতিবার আরেক চিঠিতে নতুন সিদ্ধান্ত জানায় ইসি। এতে বলা হয়, সেনা সদস্যরা সেনানিবাসের ভেতরেই থাকবেন। রিটার্নিং কর্মকর্তারা অনুরোধ করলে তারা বাইরে আসবেন।

এর ব্যাখ্যায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, “তাদের তো এক জায়গায় থাকতে হবে। আমরা মনে করেছি, ক্যান্টনমেন্টই তাদের জন্য বেস্ট পজিশন।”

ইসির এ সিদ্ধান্তের সমালোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সাবেক সেনা প্রধান মাহবুবুর রহমান বলেন, “আমরা নাটক দেখতে চাই না। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সেনাবাহিনীকে আমরা ভোটগ্রহণের দিন দৃশ্যমান দেখতে চাই।”

শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী কর্মজীবী দল এবং প্রেসক্লাবের বাইরে জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দলের উদ্যোগে মানববন্ধনে দুই কর্মসূচিতে এ বিষয়ে কথা বলেন মাহবুব।

তিনি বলেন, “আমরা নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী দেখতে চাই। দেশের মানুষ ও ভোটাররা বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর ওপর আস্থাশীল। দেশের গণতন্ত্র প্রশ্নে যে সংকট চলছে, তার উত্তরণে আমরা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চাই।”

সেনাবাহিনী ‘দৃশ্যমান থাকলে’ ভোটাররা ‘নির্ভয়ে’ ভোট কেন্দ্রে যেতে পারবে মন্তব্য করে এই বিএনপি নেতা বলেন, “দেশের মানুষ ও নাগরিকরা চায় সেনাবাহিনীকে সেনানিবাসে নয়, দৃশ্যমান রাখা হোক।’’

জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপিপন্থী সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক রুহুল আমিন গাজী অভিযোগ করেন, সেনাবাহিনীকে মাঠে না রাখার সিদ্ধান্ত ‘গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ’।

“জনগণের নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগকে বাধাগ্রস্ত করে ক্ষমতাসীনদের জন্য নির্বাচনের ফল হাইজ্যাকের সুযোগ করে দিতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আমরা ইসির এ সিদ্ধান্তের নিন্দা জানাই।’’

পাশাপাশি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার ঘটনারও নিন্দা জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার সমালোচনা করেন বিএনপিপন্থি এই সাংবাদিক নেতা।

জাতীয় প্রেসক্লাবের উল্টো দিকে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন ভবনসহ তোপখানা রোডের বিভিন্ন দোকান ও পথচারীদের মধ্যে মির্জা আব্বাসের পক্ষে লিফলেট বিতরণ করার সময় মওদুদ আহমদও দফায় দফায় খালেদার গাড়িবহরে হামলার নিন্দা জানান। 

তিনি বলেন, “সরকার নির্বাচনের পরিবেশকে পদে পদে নষ্ট করছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রাণনাশের চেষ্টায় তার গাড়িবহরে বার বার হামলা চালানো হয়েছে। কারা হামলা করেছে তা দেশবাসী জানে।’’

এছাড়া প্রার্থীদের বিভিন্ন ‘হয়রানিমূলক মামলায়’ গ্রেপ্তার করে ‘নির্বাচনী প্রচারে বাধা দেওয়া হচ্ছে’ বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, “ভোটাররা যদি নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে আসতে পারে, তাহলে ঢাকার দুই সিটিতে আমাদের সমর্থিত প্রার্থী মির্জা আব্বাস ও তাবিথ আউয়াল বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে।’’