সম্মেলন না হওয়ায় ছাত্রলীগে ‘অসন্তোষ’

দুই বছরের মেয়াদ পূর্তির পর আরো দুই বছর হতে চললেও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনের সম্মেলন না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী।

তপন কান্তি রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 April 2015, 01:27 PM
Updated : 15 April 2015, 01:30 PM

সময়মত সম্মেলন না হওয়ায় সংগঠনের নেতা নির্বাচনে ২৯ বছরের যে কোটা রয়েছে তার খাড়ায় ‘সুযোগ’ হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কায় অনেকে হতাশ হয়ে পড়ছেন বলে অভিযোগ তাদের।

ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব চার মাস আগে ‘অচিরেই’ সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার কথা বললেও এখনো অনেকটা একই সুরে কথা বলছেন।

ছাত্রলীগ সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ বলেছেন, আসন্ন সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের পরেই সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হবে।

তবে ‘কবে’ সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা হবে সে বিষয়ে নির্র্দিষ্ট করে কিছু বলেননি তিনি।

ছবি: ফেইসবুক থেকে নেওয়া

সোহাগ বলেন, “সম্মেলন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। জেলা কমিটিগুলোর সম্মেলন দেওয়া হচ্ছে, আর কেন্দ্রীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি চলছে।’’

“আসন্ন ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পরেই সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হবে।’’

গত ২৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের ‘সেভ ক্যাম্পাস ক্লিন ক্যাম্পাস’ কর্মসূচি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে একই কথা বলেছিলেন ছাত্রলীগ সভাপতি।

“জেলা কমিটিগুলো দেওয়া হচ্ছে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন যে কোনো সময় হতে পারে,” বলেছিলেন তিনি।

ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দুই বছর পর সম্মেলনের মধ্য দিয়ে সংগঠনে নতুন নেতৃত্ব আসার কথা।

গঠনতন্ত্রের ১১ (খ) উপধারায় বলা হয়েছে, “কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের কার্যকাল দুই বছর। ওই সময়ের মধ্যে সম্মেলন আয়োজন করতে হবে। অন্যথায় নির্বাহী সংসদের কার্যকারিতা লোপ পাবে।”

ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ২০১১ সালের ১০ জুলাই সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি পদে বদিউজ্জামান সোহাগ এবং সিদ্দিকী নাজমুল আলম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন।

সে হিসাবে সোহাগ-নাজমুল কমিটির সময় প্রায় চার বছর হতে চলেছে।

বিষয়টি নিয়ে ছাত্রলীগের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যেও আলোচনা রয়েছে।

গত ২৬ মার্চ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাও এ বিষয়ে কথা বলেছেন বলে গণমাধ্যমে এসেছে।

সিটি নির্বাচনে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের কাউন্সিলর পদে সমর্থন দিতে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমের অনুরোধের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে কথা বলেন বলে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়। 

“তোমরা সাবেক হবে কবে? তাড়াতাড়ি সম্মেলন দাও, কমিটি দিয়ে তোমরা সাবেক হও,” ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদককে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন বলে একটি পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়।

এরপরেও সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা না হওয়ায় বর্তমান নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ‘অবৈধভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে’ রাখার অভিযোগ করেছেন সংগঠনের কয়েক নেতা।

তাদের অভিযোগ, সম্মেলন যাতে না হয় সেজন্য সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জেলাগুলোর সম্মেলন ইচ্ছে করেই ধীরগতিতে করছেন। সম্মেলনের জন্য চাপ আসতে পারে বলে কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্র পাঁচ মাস আগে জেলা কমিটির সম্মেলনগুলো দেওয়া শুরু করেন।

সিদ্দিকী নাজমুল আলম, ফাইল ছবি

কেন্দ্রীয় সম্মেলন দিতে বিলম্ব হওয়ার কারণ হিসেবে জেলাভিত্তিক সম্মেলনের কথা বলা হলেও  ছাত্রলীগের দপ্তর থেকে জানা যায়, প্রায় চার বছরে মাত্র ৫৪টি জেলা সম্মেলন করেছে বর্তমান কমিটি।

গত ২৯ নভেম্বরের ওই সংবাদ সম্মেলনের পর চারে মাসে মাত্র তিনটি জেলার সম্মেলন করা হয়েছে।

সর্বশেষ গত শনিবার কুমিল্লা জেলায় নতুন কমিটি ঘোষণার প্রস্তুতিকালে ছাত্রলীগ সভাপতি সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক নাজমুলের উপস্থিতিতে কর্মী সমাবেশের পর কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের দুই পক্ষে সংঘর্ষে কুমিল্লা শহর ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম নিহত হন।

ছাত্রলীগের দপ্তর থেকে জানা যায়, আগামী ১৮ এপ্রিল থেকে ১৬ মে পর্যন্ত নয়টি জেলা শাখার সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে।

এই জেলাগুলোর সম্মেলন করতে পারলে আগামী মের মাঝামাঝিতে ৬৩টি জেলা কমিটির সম্মেলন হবে ছাত্রলীগের। তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও জেলা মিলিয়ে সারা দেশে ছাত্রলীগের ১০১টি ‘জেলা কমিটি’ রয়েছে।

সম্মেলনের দীর্ঘসূত্রতায় একদিকে যেমন ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠনটি সাংগঠনিকভবে দুর্বল হয়ে পড়ছে, অন্যদিকে সংগঠনের জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে হতাশা দেখা দিচ্ছে বলে মনে করেন কয়েক নেতা।

নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে এক ছাত্রলীগ নেতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কমিটি দীর্ঘসূত্রতার কারণে সংগঠনের দায়িত্ব নিতে আগ্রহী অনেক তরুণ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। কারণ তাদের ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার পর্যায়ে। নতুন কমিটি দিতে যদি আরো দেরি হয় তাহলে ছাত্রলীগ অনেক অভিজ্ঞ ও দক্ষ সংগঠক হারাবে।”

ছাত্রলীগে এ ধরনের সমস্যা এড়াতেই ২০০৬ সালের ৪ এপিল গঠনতন্ত্র সংশোধন করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী হতে হলে বয়স অনূর্ধ্ব ২৯ বছর এবং কোনো স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানের ছাত্রত্ব থাকার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয় বলে জানান তারা।

সম্মেলন না হওয়ায় ছাত্রলীগে বেশি বয়সীদের না রাখার যে উদ্যোগ তা ব্যর্থ হতে চলেছে কি না জানতে চাইলে সোহাগ বলেন, “সম্মেলন একটি প্রক্রিয়া। তবে ছাত্রলীগের সকল নিয়ম-নীতি মেনে সম্মেলন দেওয়া হবে।”

সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী খুব শীঘ্রই কেন্দ্রীয় সম্মেলন দিতে বলেছেন। তাই সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের পরে সাংবাদিক সম্মেলনে মাধ্যমে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করব।”