রেড নোটিস ‘অপপ্রচারের’ কৌশল: বিএনপি    

একুশ অগাস্ট গ্রেনেড মামলার আসামি তারেক রহমানের নামে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারির বিষয়টিকে সরকারের ‘অপপ্রচারের কৌশল’ বলে মনে করছে তার দল বিএনপি।     

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 April 2015, 11:00 AM
Updated : 15 April 2015, 12:25 PM

দলটির মুখপাত্রের দায়িত্বে থাকা আসাদুজ্জামান রিপন বুধবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, “ইন্টারপোল কখনো স্বপ্রণোদিত হয়ে রেড এলার্ট জারি করে না। সংশ্লিষ্ট দেশের দেওয়া তথ্য তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে, যার কোনো কার্যকারিতা নেই।”

বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে সম্প্রতি ইন্টারপোলের ‘ওয়ান্টেড’ তালিকায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাম প্রকাশ করা হয়, যিনি গত ছয় বছর ধরে পরিবার নিয়ে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন।

ইন্টারপোলের ওয়েব সাইটে খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেকের একটি ছবি দিয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বিচার বিভাগ তাকে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য খুঁজছে।

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ব্রিফিংয়ে আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, “আমরা এহেন অপপ্রচারের অপকৌশলের নিন্দা জানাই। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করে বিএনপিকে চাপে রাখা যাবে না।”

বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রিপন বলেন, ইন্টারপোলের ওই নোটিসে ‘কিছু ভুল’ রয়েছে।

“তারেক রহমানের নাম বলা হয়েছে তারেক জিয়া। তিনি তারেক জিয়া নাম ব্যবহার করেন না। তিনি বাংলা ভাষায় কথা বলেন। ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, তারেক রহমান উর্দুতেও কথা বলেন। এটা বিভ্রান্তিমূলক তথ্য।”

ইন্টারপোল ওই নোটিস ওয়েবসাইটে দেওয়ার আগে থেকেই সরকারের দুইজন মন্ত্রী তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের পরোয়ানা জারির কথা বলে আসছিলেন মন্তব্য করে রিপন বলেন, “এ থেকে বোঝা যায়, সরকারের একটি অতি উৎসাহী মহল প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে এ রকম অপপ্রচার চালাচ্ছে।”

দুই নেত্রীর মধ্যে নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময়ের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপারসনকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বিএনপি চেয়ারপারসনও তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তাই আমি বিশ্বাস করি, রেড নোটিসের নামে যে নাটক করা হয়েছে, এসবের সঙ্গে সরকারপ্রধানের কোনো সর্ম্পক নেই।”

বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার অন্যতম আসামি তারেক। এছাড়া জরুরি অবস্থার সময় দায়ের হওয়া দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির অন্তত ১২টি মামলায় তারেক আসামি।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাই যে ওই গ্রেনেড হামলার লক্ষ্য ছিল- তা পরে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের নিজস্ব ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে বক্তব্য দেওয়ায় রাষ্ট্রদ্রোহ ও মানহানির কয়েক ডজন মামলাতেও তারেকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। আইনের দৃষ্টিতে ‘পলাতক’ থাকায় বাংলাদেশে সংবাদ মাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বা অন্য কোনো মাধ্যমে তারেকের কোনো বক্তব্য বা বিবৃতি প্রচার বা প্রকাশের ওপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

তবে রিপনের দাবি, তারেক রহমান পলাতক নন। তিনি চিকিৎসার জন্য লন্ডনে রয়েছেন। আর তিনি যেখানে রয়েছেন সেই দেশ ‘আইনের শাসনে বিশ্বাসী ও মানুষের অধিকারের প্রতি সচেতন’।

“সজীব ওয়াজেদ জয় রাজনীতি প্রবেশ করেছেন। তারেক রহমান রাজনীতিতে প্রবেশ করে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে দলের কাউন্সিলের মাধ্যমে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছেন। শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এই দুই দলের নতুন নেতৃত্ব তারা। এদের সর্ম্পকে নেতিবাচক প্রচারে কোনো লাভ হয় না। এটা দেশের জন্য শুভ নয়। কারণ আমাদের মনে রাখতে হবে, দেশ রাজনৈতিক নেতৃত্ব ছাড়া এগোবে না।”

বিএনপির দপ্তরের দায়িত্ব পাওয়া রিপন অভিযোগ করেন, ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিতরা সমান সুযোগ পাচ্ছে না। তাদের প্রচারে বাধা দেওয়া হচ্ছে।

“সিদ্ধেশ্বরী কলেজের ছাত্রলীগের শিশিরের নেতৃত্বে অস্ত্র উঁচিয়ে গতকাল মির্জা আব্বাসের প্রচারে বাধা দিয়েছে। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ছাত্রলীগের জহিরের নেতৃত্বে আমাদের সমর্থিত মেয়র প্রার্থীর পক্ষে প্রচারপত্র বিলিতে ধাওয়া দেওয়া হয়। বেইলি রোড ও শাহবাগে প্রচারে বাধা দিয়েছে পুলিশ। মির্জা আব্বাসের নামে লাগানো পোস্টার ছিঁড়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

‘ভয়-ভীতির সংস্কৃতি’ চালু রেখে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় মন্তব্য করে সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান রিপন।

অন্যদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার হায়দার আলী, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক শাহাজান মিলন, সহ তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব ও সহ দপ্তর সম্পাদক আসাদুল করীম শাহিন এই ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।