আব্বাস, সালাম, রিপন, পিন্টুর মনোনয়নপত্র জমা

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস, আব্দুস সালাম, আসাদুজ্জামান রিপন ও নাসির উদ্দিন পিন্টুর মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে, যদিও দল কাকে সমর্থন দেবে তার চূড়ান্ত ঘোষণা এখনো আসেনি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 March 2015, 11:22 AM
Updated : 29 March 2015, 11:22 AM

রোববার দুপুরে মহানগর নাট্যমঞ্চে ঢাকা দক্ষিণের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও মহানগর আহ্বায়ক মির্জা আব্বাসের পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দেন তার আইনজীবী ও যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম।

এছাড়া বিএনপির অর্থনীতি বিষয়ক সম্পাদক ও মহানগরের সাবেক সদস্য সচিব সালামের পক্ষে তার স্ত্রী ফাতেমা সালাম এবং সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক সাংসদ নাসির উদ্দিন পিন্টুর পক্ষে তার স্ত্রী নাসিমা আক্তার কল্পনা মনোনয়নপত্র জমা দেন।

আর বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন নিজেই মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেন।

নির্বাচনের সুযোগ পেলে জয়ের আশা প্রকাশ করে তারা সবাই বলেছেন, দল সমর্থন না দিলে তা তারা মেনে নেবেন।  

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ঢাকা উত্তরে ব্যবসায়ী আনিসুল হক ও দক্ষিণে সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ছেলে সাঈদ খোকনকে সমর্থন দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করলেও বিএনপি তেমন কোনো ঘোষণা দেয়নি। 

গত শুক্রবার রাতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার পর বিএনপিপন্থি পেশাজীবী নেতা অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন নির্বাচনের বিষয়ে ‘ইতিবাচক’ হলেও ঢাকায় এখনো প্রার্থী চূড়ান্ত হয়নি।

মির্জা আব্বাসের পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে তার আইনজীবী বলেন, “ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গুমের পরিস্থিতি চলছে, নির্বাচনের পরিস্থিতি নেই। আমরা নির্বাচন করতে চাই। তবে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে এর অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে হবে।”

৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করলেও উপজেলার নির্বাচনে বিএনপি নেতাদের অংশগ্রহণের কথা মনে করিয়ে দিলে যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সালাম বলেন, “সেটা ছিল চর দখলের নির্বাচন। সে ধরনের নির্বাচন হলেও তো অংশ নেওয়া সম্ভব না।”

শেষ পর্যন্ত দল সমর্থন না দিলে মির্জা আব্বাসও নির্বাচন করবেন না বলে জানান তিনি।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা আব্বাসের আরেক আইনজীবী একেএম শাজাহান বলেন, “মির্জা আব্বাস পলাতক নয়। তার বিরুদ্ধে অনেক রাজনৈতিক মামলা আছে, কিন্তু এ অবস্থায় নির্বাচনে অংশ নিতে কোনো বাধা নাই।”

দুই আইনজীবীর সঙ্গে আব্বাসের চাচাতো ভাই মির্জা আব্দুস সালাম আরিফসহ বেশ কয়েকজন কর্মী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান রিপনও বলেন, এখন পর্যন্ত নির্বাচনের ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরি হয়নি।

ভোটের বিষয়ে দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হিসাবে মেনে নেবেন বলে জানান তিনি।

স্বামীর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর ফাতেমা সালাম সাংবাদিকদের বলেন, “বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী দল। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। আমরা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাই। সে উদ্দেশে আমি আমার স্বামী আবদুস সালামের পক্ষে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছি।”

মেয়র পদে সমর্থন নিয়ে বিএনপি এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা না দিলেও দল থেকে প্রস্তুতি নিতে বলায় মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন বলে জানান ফাতেমা। 

তিনি বলেন, “নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ এখন নেই। তবে আমরা আশা করি নির্বাচন কমিশন শিগগিরই এমন ব্যবস্থা নেবে যাতে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত হয, লেভেল প্লেইং ফিল্ডে সব দল-মতের লোক নির্বাচনে অংশ নিতে পারে।”

সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এবং দলের সমর্থন পেলে সালাম জয়ী হবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন তার স্ত্রী।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “দলের সিদ্ধান্তই চূড়ন্ত। সমর্থন না পেলে আমরা তা মেনে নেব এবং সে অনুযায়ী কাজ করব।”  

একই কথা বলেছেন নাসির উদ্দিন পিন্টুর স্ত্রী নাসিমা আক্তার কল্পনা, যিনি ঢাকার সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ছাত্রদল নেতা ছাইদুর রহমান নিউটনের বোন।

কল্পনা বলেন, “নাসির উদ্দিন পিন্টু একজন ত্যাগী ও জনপ্রিয় নেতা। জনগণই তাকে নির্বাচনে দাঁড় করিয়েছে। সরকার মিথ্যা মামলায় তাকে কারাগারে আটকে রেখেছে।”

পিন্টু দলের সমর্থন পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কর্মীরা তার পক্ষে আছে, আমরা আশা করি দল তাকে সমর্থন দেবে। তবে দল যে সিদ্ধান্ত দেবে তা আমরা মেনে নেব।”

আরেক প্রশ্নে কল্পনা বলেন, “আমি ওমরাহ পালন করতে গিয়েছিলাম। এ কারণে ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) সঙ্গে কথা হয়নি। আজ মনোনয়নপত্র দিয়ে গেলাম। এখন ম্যাডামের সঙ্গে কথা বলব।”

শেষ পর্যন্ত পিন্টু নির্বাচন করতে পারলে তাকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়ার আবেদন করা হবে বলেও জানান তার স্ত্রী।

সাবেক সাংসদ পিন্টুকে গতবছর পিলখানা হত্যা মামলার রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত। তিনি ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আপিল করেছেন। 

এ মামলায় আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী শামীম সর্দার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিচারিক আদালত ১৫২ জনের ফাঁসির আদেশ দেওয়ায় হাই কোর্টে মামলাটি গেছে ডেথ রেফরেন্স আকারে। হাই কোর্ট আসামিপক্ষের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করায় ওই সাজার আদেশ আপনা-আপনি স্থগিত হয়ে গেছে।