‘শিবিরের পরিকল্পনা ছিল’ পদ্মা-মেঘনা-যমুনায় হামলার

মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে হরতাল-অবরোধের আন্দোলনে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের নজরে আনতে ইসলামী ছাত্রশিবির চট্টগ্রামে রাষ্ট্রায়ত্ত তিনটি তেল ডিপোতে হামলার পরিকল্পনা করেছিল বলে দাবি করেছে পুলিশ। 

উত্তম সেন গুপ্তবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 March 2015, 03:33 PM
Updated : 28 March 2015, 03:33 PM

শিবিরের পতেঙ্গা থানার সভাপতি ফজলুর রহমান রুবেলকে গ্রেপ্তারের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই দাবি করেছে তারা। রুবেলসহ সাত শিবিরকর্মীকে শুক্রবার গ্রেপ্তার করা হয়।

বন্দর থানার ওসি এ কে এম মহিউদ্দিন সেলিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত ২০ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ডিপোতে নাশকতার পরিকল্পনা করেছিল শিবিরকর্মীরা।

তিনি বলেন, ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগরের মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক মো. এনামুল কবিরকে গ্রেপ্তারের পর ওই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।

পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী, রুবেল ও শিবিরের ইপিজেড থানার সভাপতি মো. জাবেদের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের একটি দল এই পরিকল্পনা করে। আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম কলেজ, হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ দলের সদস্য।

১৫ জনের মধ্যে রুবেলের সঙ্গে গ্রেপ্তার হয়েছেন আব্দুল করিম।

নাশকতার পরিকল্পনাকারী ১৫ সদস্যের মধ্যে ১২ জনের নাম পাওয়া গেছে জানিয়ে ওসি সেলিম বলেন, “ইপিজেড থানার সভাপতি জাবেদসহ অন্য ১৩ জনকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”

শুক্রবার রুবেল ও আব্দুল করিম ছাড়া গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন- জসিম উদ্দিন (২৪), খালিদ হাসান ওরফে রানা ((৩১), মাহবুবুর রহমান (২১), আব্দুল করিম (২৩), এ জি এম আলী আরিফ (২০)।

বন্দরের ওসি বলেন, পতেঙ্গা এলাকায় শিবিরের শক্ত অবস্থান থাকলেও এই এলাকাটিতে তারা কোনো ধরনের নাশকতা চালাত না।

“এলাকাটি তারা আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার করত। নগরীর বিভিন্ন স্থানে নাশকতা করে শিবিরকর্মীরা পতেঙ্গায় এসে আত্মগোপন করত।”

ওসি সেলিম বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসে শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতা এনামুল চট্টগ্রাম আসার পর সভাপতি সারির নেতাদের নিয়ে কয়েকটি বৈঠক করেন। সেখানে রুবেল, জাবেদও ছিল।

ফজলুর রহমান রুবেল

“বৈঠকে এম এইচ সোহেল আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের নজরে অসতে রাষ্ট্রায়ত্ত তিন তেল ডিপোতে হামলার প্রস্তাব করে। রুবেল তিন তেল ডিপোতে হামলার দায়িত্ব নেয়।”

সোহেল ও রুবেলের টেলিফোন কথোপকথনের একটি রেকর্ড গোয়েন্দা সংস্থার হাতে আসার পর ১৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা থেকে পতেঙ্গা এলাকায় কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে অবস্থিত পদ্মা, মেঘনা, যমুনা এবং ইস্টার্ণ রিফাইনারিতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।

ওসি মহিউদ্দিন সেলিম বলেন, তেল ডিপোতে নাশকতা পরিকল্পনার তদারকির দায়িত্বে ছিলেন শিবিরের চট্টগ্রাম মহানগর দক্ষিণের স্কুল ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক জামাল হোসেন। ১৫ জনের দল তিন ভাগে হামলার পরিকল্পনা নিয়েছিল।

“পরিকল্পনা অনুযায়ী তিন দলের একটি পেট্রোল বোমা নিয়ে হেঁটে, রুবেলের নেতৃত্বে টিমটি হাত বোমা নিয়ে মোটর সাইকেলযোগে এবং জাবেদের নেতৃত্বে টিমটি লাঠিসোঁটা নিয়ে ব্যাটারিচালিত টমটমে করে তেল ডিপো এলাকায় যাওয়ার কথা ছিল।”

“রুবেলের নেতৃত্বে মোটর সাইকেলে থাকা দলটি ওই এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য হাতবোমার বিষ্ফোরণ ঘটাত, জাবেদের নেতৃত্বে টমটমে থাকা দলটি লাঠিসোঁটা নিয়ে বিভিন্ন গাড়ি ভাংচুর করত এবং পেট্রোল বোমা নিয়ে পায়ে হেঁটে যাওয়া টিমটির সদস্যরা ডিপোতে গিয়ে পেট্রোল বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বড় ধরনের নাশকতা করার কথা ছিল।”

ওসি আরও জানান, তিনটি তেল ডিপোতে কর্মরত জামায়াত ইসলামী সমর্থক বেশ কয়েকজন কর্মচারীর কাছ থেকে শিবির নেতারা খবরাখবর নিতেন বলে পুলিশকে জানিয়েছে।

গত ৫ জানুয়ারি থেকে লাগাতার অবরোধের মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে চালানো নাশকতায় অর্ধ শতাধিক মানুষ মারা গেছেন। পেট্রোল বোমা ও অগ্নিসংযোগে পুড়েছে কয়েক হাজার গাড়ি।

এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতরে নাশকতার পরিকল্পনা না থাকলেও ৫ নম্বর ফটকের বাইরে সড়কে শিবিরকর্মীদের নাশকতার পরিকল্পনা ছিল বলে পুলিশ জানায়।

ওসি মহিউদ্দিন সেলিম বলেন, “৫ নম্বর গেইটের বাইরে গাড়ি প্রবেশ ও বের হওয়ার কারণে যানজট বেশি থাকে। বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা বড়বড় ট্রাক, কভার্ড ভ্যান ও লরিগুলোর চাকার টায়ার কেটে, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে নাশকতার পরিকল্পনা করেছিল।”