বিএনপির বিবৃতি বিভ্রাট

সিটি নির্বাচনের ডামাডোলের মধ্যে স্বাধীনতা দিবসের আগে হরতাল ছেড়ে মিছিলের কর্মসূচিতে আসা বিএনপির নামে আসা নতুন বিবৃতিতেও একই কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 March 2015, 11:06 AM
Updated : 28 March 2015, 12:59 PM

শনিবার বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বরকতউল্লাহ বুলুর নামে প্রথম যে বিবৃতিটি গণমাধ্যমে আসে, তাতে রোববার সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি দেওয়া হয়। তবে হরতাল-অবরোধের কোনো ঘোষণা ছিল না।

এনিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর সংশোধিত বিবৃতি আসে, যাতে হরতালের উল্লেখ না থাকলেও অবরোধ চলবে বলে যুক্ত করা হয়েছে; যদিও হরতাল-অবরোধের কার্যকারিতা বেশ কিছুদিন ধরে দেখা যাচ্ছে না।

বেলা ৩টা ৫৮ মিনিটে আসা প্রথম বিবৃতিতে বলা হয়, “আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে গ্রেপ্তারের পর বিএনপির অন্যতম যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদসহ সারাদেশে বিরোধীদলীয় গুমকৃত নেতা-কর্মীদেরকে সুস্থ ও অক্ষত অবস্থায় তাদের পরিবারের নিকট ফেরত দেওয়ার দাবিতে এবং নেতা-কর্মীদের হত্যা ও গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আগামীকাল ২৯ মার্চ, রোববার দেশব্যাপী সকল জেলা, উপজেলা, থানা, পৌরসভা ও সকল মহানগরের থানায় থানায় ২০ দলীয় জোটের উদ্যোগে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।”

এরপর বিকাল ৫টা ২৪ মিনিটে আসা সংশোধিত বিবৃতিতে বলা হয়, “আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে গ্রেপ্তারের পর বিএনপির অন্যতম যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদসহ সারাদেশে বিরোধীদলীয় গুমকৃত নেতা-কর্মীদেরকে সুস্থ ও অক্ষত অবস্থায় তাদের পরিবারের নিকট ফেরত দেওয়ার দাবিতে এবং নেতা-কর্মীদের হত্যা ও গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আগামীকাল ২৯ মার্চ, রোববার দেশব্যাপী সকল জেলা, উপজেলা, থানা, পৌরসভা ও সকল মহানগরের থানায় থানায় ২০ দলীয় জোটের উদ্যোগে চলমান অবরোধ কর্মসূচির পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।”

প্রথম বিবৃতি, যাতে অবরোধের কথা উল্লেখ ছিল না

নির্দলীয় সরকারের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে ৫ জানুয়ারি খালেদা জিয়া লাগাতার অবরোধ ডাকার পর ওই দাবি আদায়ে ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে বিবৃতি পাঠিয়ে সপ্তাহের পাঁচ দিন হরতালের বার্তা দেওয়া হচ্ছিল।

সর্বশেষ ১৩ মার্চ সংবাদ সম্মেলনে এসে খালেদা জিয়া আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত রাখার কথাই বলেছিলেন। তারপর থেকে অবরোধের সঙ্গে হরতালের বিবৃতিও যথারীতি আসছিল।

২১ মার্চ বুলুর নামে আসা বিবৃতিতে ২৫ মার্চ বুধবার ভোর পর্যন্ত হরতালের বার্তা ছিল। এরপর ২৪ মার্চ আসা বিবৃতিতে তার ব্যতিক্রম দেখা যায়, দেওয়া হয় মিছিলের কর্মসূচি।

তবে ২৪ মার্চের ওই বিবৃতিতে অবরোধের উল্লেখ ছিল। কিন্তু শনিবার প্রথম যে বিবৃতিটি এসেছে, তাতে হরতাল-অবরোধ কিছুরই উল্লেখ ছিল না। পরে সংশোধনীতে অবরোধ ফিরলেও ফেরেনি হরতাল।  

বিবৃতি পাঠিয়ে ডাকা হরতাল-অবরোধে এসএসসি পরীক্ষা পেছালেও সারাদেশে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম এবং অফিস-আদালত খোলাই থাকছে। সড়ক, নৌ ও রেলপথে চলাচলও রয়েছে।

শুরুতে অবরোধ-হরতালে পেট্রোল বোমা ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটতে থাকলেও আড়াই মাস পর তা অনেকটাই কমে এসেছে।

হরতাল-অবরোধের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে ঢাকার সড়কে এই রকম যানজট চলছে

নির্দলীয় সরকারের দাবি প্রত্যাখ্যানকারী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা বলে আসছেন, জনগণ বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের কর্মসূচি প্রত্যাখ্যান করেছে বলে হরতাল-অবরোধে এখন স্বাভাবিক সময়ের মতো যানজট দেখা যায় সড়কে।   

নির্দলীয় সরকারের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে ৫ জানুয়ারি খালেদা জিয়া লাগাতার অবরোধ ডাকার পর ২০ দলের পক্ষে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে হরতাল ডাকেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

রিজভী গ্রেপ্তার হওয়ার পর আরেক যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদের নামে প্রতি সপ্তাহের পাঁচ দিন হরতাল ডেকে দুই দফা বিবৃতি আসতে থাকে গণমাধ্যমে।

গত ১০ মার্চ সালাহ উদ্দিন ‘নিখোঁজ’ হওয়ার পর হরতালের বিবৃতি আসতে থাকে বুলুর নামে। তবে সালাহ উদ্দিনের মতো তিনিও বিবৃতি পাঠাচ্ছেন অজ্ঞাত স্থানে থেকে।

এসএসসি পরীক্ষার মধ্যে হরতাল-অবরোধ চালিয়ে গেলেও বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনালে উন্নীত হওয়ার পর ১০ মার্চ ১২ ঘণ্টার জন্য হরতাল শিথিল করা হয়েছিল, তবে সেই বিবৃতিটি পাঠিয়েছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।    

সিটি নির্বাচনে জয় দিয়ে ‘জবাব’

আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী বিএনপি নেতাদের জয়ের আশাবাদ প্রকাশ করা হয়েছে বুলুর নামে আসা বিবৃতিতে।

খালেদা জিয়ার ৮১ দিনের আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিবৃতিতে বলা হয়, “বিগত ৫টি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীদের সবকটিতে বিপুল বিজয় নিশ্চিত করে আপনার সরকারের অপশাসনের সমুচিত জবাব দিতে জনগণ যেমন ভুল করেনি, ঠিক একইভাবে আগামীতেও জনগণ ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে বিএনপি তথা ২০ দলীয় জোটের বিজয় নিশ্চিত করবে।”

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুল আউয়াল মিন্টু, দক্ষিণে স্থায়ী কমিটিরি সদস্য মির্জা আব্বাস, অর্থবিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সালাম এবং কেন্দ্রীয় নেতা আসাদুজ্জামান রিপন ও নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু মেয়র পদের মনোনয়নপত্র কিনেছেন।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম মনজুর আলম মনোনয়নপত্র কিনেছেন, তাকে চট্টগ্রাম বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক সমর্থনও ঘোষণা করা হয়েছে।

বুলুর নামে পাঠানো ওই বিবৃতিতে বলা হয়, “প্রধানমন্ত্রীকে সবিনয়ে বলতে চাই-আপনার দলীয় লোকদের দিয়ে সাজানো আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নির্ভরতা ছেড়ে জনগণের কাতারে দাঁড়ান, দেখতে পাবেন ৮১ দিনের আন্দোলন সফল, না বিফল।

“জনগণের দাবি অনুযায়ী নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থার অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা নিলেই জনগণ আন্দোলনে সফল না বিফল হয়েছে তা পরিষ্কার করে দেবে।”