৯ দিনে দুই হাজার মনোনয়নপত্র বিক্রি

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে ১২৬টি পদের বিপরীতে ভোটের লড়াইয়ে নামার আগে প্রায় দুই হাজার সম্ভাব্য প্রার্থী গত নয় দিনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন, যাদের মধ্যে মেয়র হতে চান ৫৬ জন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 March 2015, 03:33 PM
Updated : 27 March 2015, 03:33 PM

তবে শেষ পর্যন্ত কারা প্রার্থী হওয়ার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিচ্ছেন তা দেখতে অপেক্ষা করতে হবে রোববার পর্যন্ত। আর মনোনয়নপত্র বাছাই ও প্রত্যাহারের সময় শেষ হওয়ার পরে ৯ এপ্রিল নিশ্চিত হবে কারা ভোটে রয়েছেন।

তফসিল অনুযায়ী ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে ২৮ এপ্রিল ভোট হবে। কাগজে-কলমে নির্দলীয় হলেও এ নির্বাচন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এরইমধ্যে নতুন উত্তেজনার যোগান দিতে শুরু করেছে।

ঢাকা দুই ভাগ হওয়ার আগে অবিভক্ত সিটি করপোরেশন ছিল বিএনপির দখলে। চট্টগ্রামেও এতোদিন মেয়রের দায়িত্ব পালন করে আসছেন বিএনপি সমর্থিত মেয়র।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করা দলটি এ সিটি নির্বাচনে থাকছে কিনা- সে বিষয়ে এখনো স্পষ্ট ঘোষণা না এলেও বিএনপি নেতাদের মনোনয়নপত্র সংগ্রহের মধ্য দিয়ে ভোটে থাকার ইঙ্গিত মিলেছে।

আর ঢাকা উত্তরে ব্যবসায়ী আনিসুল হক ও দক্ষিণে সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ছেলে মোহাম্মদ সাঈদ খোকন এবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থন পাচ্ছে বলে গণমাধ্যমের খবর।

আরেক আওয়ামী লীগ নেতা স্বতন্ত্র সাংসদ হাজি মোহাম্মদ সেলিম দক্ষিণের মনোনয়নপত্র নিলেও তিনি হঠাৎ ভারতে যাওয়ায় তার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ সারাহ বেগম কবরী ও গোলাম মওলা রনিও নিয়েছেন মনোনয়নপত্র।

ঢাকা উত্তরে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুল আউয়াল মিন্টু মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। দক্ষিণে নিয়েছেন নগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস, সাবেক সদস্য সচিব আব্দুস সালাম, দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন ও কারাবন্দি নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু।

ঢাকায় বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা চৌধুরী তানভীর আহমদ সিদ্দিকীর ছেলে চৌধুরী ইরাদ আহমদ সিদ্দিকী ইতোমধ্যে মনোনয়নপত্র জমাও দিয়েছেন। বিএনপির সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ছেলে বিকল্পধারার মাহী বদরুদ্দোজা চৌধুরীও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে ঢাকা উত্তর থেকে।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য বাহাউদ্দিন আহমেদ বাবুল ঢাকা উত্তরে এবং সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন ঢাকা দক্ষিণে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন।

পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ববি হাজ্জাজ প্রার্থী হতে চান উত্তরে। ইতোমধ্যে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করায় তাকে অব্যাহতি দিয়েছেন চেয়ারম্যান।

সিপিবি, জাসদসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল নেতারাও সংগ্রহ করেছেন মনোনয়নপত্র।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে মেয়র পদে প্রার্থী হচ্ছেন দলের নগর সম্পাদক আ জ ম নাছির। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনজুর আলমও মেয়র পদ ছেড়ে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন।

রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহ আলম জানান, শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকা উত্তরে একটি মেয়র পদের বিপরীতে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন মোট ২৬ জন।

এছাড়া ৩৬টি সাধারণ কাউন্সিলর পদের জন্য ৭৫০ জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ১২টি কাউন্সিলর পদে ১৫১ জন মনোনয়নপত্র নিয়েছেন।

আর ঢাকা দক্ষিণে একটি মেয়র পদের বিপরীতে মোট ৩০ জন মেয়র পদের মনোনয়নপত্র নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মিহির সারওয়ার মোর্শেদ।

এই অংশে ৫৭টি সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১ হাজার ৪১ জন এবং ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ১৯৯ জন মনোনয়নপত্র নিয়েছেন।

ইতোমধ্যে ঢাকা উত্তরে চৌধুরী ইরাদ আহমদ সিদ্দিকী ও শামছুল আলম চৌধুরী মেয়র পদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

দক্ষিণে মেয়র পদে আগ্রহী ৩০ জন

আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাঈদ খোকন, স্বতন্ত্র সাংসদ হাজী সেলিম, বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম, কারাবন্দি বিএনপি নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু, বিএনপিপন্থী শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান কারাবন্দি মো. সেলিম ভূঁইয়া, জাতীয় পার্টির হাজি সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মওলা রনি, বাসদ নেতা বজলুর রশিদ ফিরোজ, জাসদ নেতা মো. শহিদুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলনের মো. আব্দুর রহমান, রেজাউল করিম চৌধুরী, জাহিদুর রহমান, মশিউর রহমান, এ এস এম আকরাম, কাজী আবুল বাশার, আবু নাসের মোহাম্মদ মাসুদ হোসাইন, বাবুল সর্দার চাখারী, অ্যাডভোকেট মো. আইয়ুব হোসেন, আবদুল খালেক, দিলীপ ভদ্র, শাহ আলম, শাহীন খান, মো. সফিউল্লাহ চৌধুরী, মো, রিয়াজউদ্দীন, মো. বাহরানে সুলতান বাহার, আখতারুজ্জান আয়াতুল্লাহ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন।

উত্তরে মেয়র পদে আগ্রহী ২৬ জন

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আনিসুল হক, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুল আউয়াল মিন্টু, বিকল্প ধারা বাংলাদেশের মাহী বি চৌধুরী, মো. আবু তাহের, ফকির শেখ মুসলেউদ্দীন আহমেদ, শেখ শহীদুজ্জামান, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, সাবেক সংসদ সদস্য সারাহ বেগম কবরী, এখলাস উদ্দিন মোল্লা, নাঈম হাসান, তাইফুল সিরাজ, বিএনএফ এর মো. আতিকুর রহমান নাজিম, এ ওয়াই এম কামরুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির বাহাউদ্দিন আহমেদ বাবুল, বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা চৌধুরী তানভীর আহমদ সিদ্দিকীর ছেলে চৌধুরী ইরাদ আহমদ সিদ্দিকী, কাজী মো. শহীদুল্লাহ, ববি হাজ্জাজ, হেলেনা জাহাঙ্গীর, জাতীয় স্বাধীনতা পার্টির মোয়াজ্জেম হোসেন খান মজলিশ, সামছুল আলম চৌধুরী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও যুব ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল কাফি, মো. আনিসুজ্জামান খোকন, মো. জামান ভূঁইয়া, জাসদ নেতা অভিনেতা নাদের চৌধুরী, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের সৈয়দ মোহাম্মদ ফজলে বারি মাসুদ ও মাহবুবুর রহমান।

৮৬ জনকে কারণ দর্শানোর নোটিস

আচরনবিধি ভাঙায় দুই মেয়র প্রার্থীসহ ঢাকা সিটি করপোরেশনের দুই ভাগে ৮৬ জনকে কারণ দর্শাতে বলেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা। এর মধ্যে ঢাকা উত্তরের সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী এখলাস উদ্দিন মোল্লা ও সামসুল আলম চৌধুরীও রয়েছেন।

আগাম প্রচারনামূলক পোস্টার-বিলবোর্ড না সরিয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে তাদের ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

তফসিল ঘোষণার পর দুই দিনের মধ্যে আগাম প্রচারের পোস্টার বিলবোর্ড নিজ উদ্যোগে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেয় ইসি। পরের ছয় দিনেও তা না করায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এই প্রার্থীদের নোটিস দেওয়া হয়।

রিটার্নিং কর্মকর্তারা জানান, ইতোমধ্যে অনেকে মৌখিকভাবে এসে ক্ষমা চেয়েছেন, কেউ আবার পোস্টার সরিয়ে নিয়েছেন।

সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মোট ২৩ জনকে নোটিস দেওয়া হয়েছে উত্তরে; দক্ষিণে দেওয়া হয়েছে ৬৩ জনকে।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে ভোট হবে আগামী ২৮ এপ্রিল।

[প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য সংগ্রহ করেছেন মঈনুল হক চৌধুরী ও আতিক ফয়সাল]