নির্বাচন দিয়ে ‘ফাঁদে’ পড়েছে সরকার: বিএনপি

সিটি করপোরেশন নির্বাচন দিয়ে সরকার ‘ফাঁদে’ পড়েছে মন্তব্য করে খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে বিএনপিকে ভোট থেকে বিরত রাখা যাবে না।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 March 2015, 09:56 AM
Updated : 27 March 2015, 09:56 AM

শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “চলমান আন্দোলন থেকে দৃষ্টি ফেরাতে সরকার সিটি করপোরেশন নির্বাচনের নতুন খেলা শুরু করেছে। তারা ভেবেছে, বিএনপি আন্দোলনে আছে, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আসবে না।’’

সরকারের পাতা ওই ‘ফাঁদে’ বিএনপি ‘পা দেবে না’ মন্তব্য করে খন্দকার মাহবুব বলেন, “এই নির্বাচন দিয়ে আপনাদের ফাঁদে আপনারাই পড়েছেন। যে মুহূর্তে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণের নির্দেশনা দেবে, জনগণ ঢাকা ও চট্টগ্রামের রাস্তায় নেমে আসবে। জেল-জুলুম-গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ হবে না। গ্রেপ্তার করে বিএনপি প্রার্থীদের পরাজিত করা যাবে না।”

গতবছর ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি চলতি বছরের শুরু থেকে আগাম নির্বাচনের দাবিতে নতুন আন্দোলন শুরু করেছে। নির্বাচনের বর্ষপূর্তির দিন থেকে সারাদেশে চলছে বিএনপি জোটের টানা অবরোধ।    

ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিন সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে বিএনপি আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা এখনো না দিলেও দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র তুলছেন। শীর্ষ নেতাদের কথাতেও ভোটে আসার ইংগিত পাওয়া যাচ্ছে।  

শুক্রবার প্রেসক্লাবেই আরেক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা বলেন।

তিনি বলেন, “সরকারকে বলব, সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে জনমনে যে অনিশ্চয়তা রয়েছে, তা দূর করতে হবে। সব প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে হবে। তাহলেই বিএনপি এই নির্বাচনে নিশ্চিত অংশ নেবে।”

শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের ব্যানারে ‘দেশে গুম-খুন-পেশাজীবীদের নির্যাতন, বাক স্বাধীনতা ও ভোটাধিকার হরণ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বিএনপির অবস্থান তুলে ধরে বলেন, “আজ যদি আমরা সিটি নির্বাচনে না যেতাম, তাহলে সরকার সবচেয়ে বেশি খুশি হত। তারা বর্হিবিশ্বের কাছে বলত- বিএনপি নির্বাচনের বিশ্বাস করে না,  তারা জঙ্গি সংগঠন হয়ে গেছে।”

মামলায় অভিযুক্ত প্রার্থীদের সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র মনিরুল ইসলামের বক্তব্যেরও সমালোচনা করেন তিনি।

খন্দকার মাহবুব বলেন, “গতকাল এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, সিটি নির্বাচনে কোনো প্রার্থী মামলার আসামি হলে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। এটা সঠিক নয়। যতক্ষণ সাজা না হবে, ততক্ষণ তাকে এভাবে কথা বলে নির্বাচন থেকে বিরত রাখা যাবে না।”

নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে তিনি বলেন, “কমিশনের উচিৎ হবে নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন পরিচালনা করা। অতীতে ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও যদি তারা সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করে, তাহলে জনগণ তাদের আস্তাকুঁড়ে ফেলে দেবে।”

অন্যদের মধ্যে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রুহুল আমিন গাজী, সদস্য সচিব অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের অতিরিক্ত মহাসচিব জাকির হোসেন এ আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন।

জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দলের উদ্যোগে অপর আলোচনায় মাহবুবুর রহমান অভিযোগ বলেন, “সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। আমাদের দলের অনেক নেতা-কর্মী কারাগারে। তাদের বিরুদ্ধে নির্যাতন চলছে। যেসব নেতারা নির্বাচনে প্রার্থী হবেন, তারাও জেলে। অনেক মামলা দেওয়া হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।”

গ্রেপ্তার ‘বন্ধ করে’ নেতাকর্মীদের ‘মুক্তি দিয়ে’ নির্বাচনে সবার জন্য ‘লেভেল প্লেইং ফিল্ড’ তৈরি করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

অন্যদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার হায়দার আলী, কৃষক দলের শাহজাহান মিয়া সম্রাট, রফিকুল ইসলাম ও মাহামুদুল ইসলাম আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন।