‘জামায়াতের পাল্লায় পড়ে স্বাধীনতা দিবসে অবরোধ’

জামায়াতে ইসলামীর প্রভাবে বিএনপি ‘নিঃশেষ’ হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 March 2015, 05:54 PM
Updated : 26 March 2015, 05:54 PM

স্বাধীনতা দিবসে অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার জন্য বিএনপির জোটসঙ্গী স্বাধীনতাবিরোধী দলটিকেই দায়ী করেছেন তিনি।

এর মধ্য দিয়ে এক সময় ক্ষমতায় থাকা বিএনপির রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের প্রকাশ ঘটেছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন।

তবে তাদের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে বিএনপি সমর্থক পেশাজীবী নেতা আবদুল হাই শিকদার বলছেন, খালেদা জিয়ার দল যদি এখন দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব অরক্ষিত মনে করে, তাহলে তিনি কোনো সমস্যা দেখছেন না।

নির্দলীয় সরকারের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে গত ৫ জানুয়ারি থেকে খালেদা জিয়া লাগাতার অবরোধ ডাকার পর ওই কর্মসূচি ভাষাশহীদ দিবসের পর স্বাধীনতা দিবসেও অব্যাহত রেখেছে।

জাতীয় দিবসে অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার নজিরবিহীন এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় শাহরিয়ার কবির বলেন, “জামায়াত কখনোই শহীদ মিনারে যেত না, স্মৃতিসৌধে যেত না। সেটাই জামায়াতের রাজনীতি।

“এখন জামায়াতের পাল্লায় পড়ে বিএনপিও যাচ্ছে না। জামায়াতের রাজনীতি বিএনপিকে গিলে খেয়েছে। বিএনপি এটা বুঝতে পারছে না, তারা এটা করে কিভাবে নিজেদের দলকে নিজেরা শেষ করে দিচ্ছে।”

বীরোত্তম খেতাবধারী জিয়াউর রহমানের দল বিএনপিতে অনেক মুক্তিযোদ্ধার থাকার বিষয়টি তুলে ধরে শাহরিয়ার কবির বলেন, “সেই মুক্তিযোদ্ধারাও এটা পছন্দ করছে না।”

জামায়াতের বিষয়ে তিনি বলেন, “স্বাধীনতার প্রতি, মুক্তিযুদ্ধের প্রতি তাদের বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা নাই। যখনই সুযোগ পেয়েছে, তখনই তারা আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত করেছে। শহীদদের উপহাস করেছে, তারা বাংলাদেশকে সব সময় পাকিস্তান দেখতে চেয়েছে।

অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার ধারণা, যারা বিএনপিকে একটা মধ্য ডানপন্থি দল হিসাবে বিবেচনা করে, তারাও কিন্তু স্বাধীনতা দিবসে অবরোধ চালিয়ে নেওয়ার এই অবস্থানের সঙ্গে একমত হবে না।

“বিশেষ করে স্বাধীনতা দিবস, যেখানে বাংলাদেশের মানুষের একটা আবেগ জড়িত। যেটাকে কেন্দ্র করে লাখ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছে। তারা নিজেরাও বলে, তাদের নেতা স্বাধীনতার ঘোষক। সেখানে এটা হল তাদের দেউলিয়া রাজনীতির চরম প্রকাশ।”

আন্দোলনের নাশকতার জন্য ‘জনবিচ্ছিন্ন’ বিএনপি স্বাধীনতা দিবসে অবরোধ চালিয়ে তারা আরও জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে বলে মনে করেন তিনি।

বিএনপির কর্মসূচির বিষয়ে আবদুল হাই শিকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দেশে একটা ভয়াবহ অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ রকম পরিস্থিতিতে বিএনপি যদি মনে করে, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব অরক্ষিত। সেক্ষেত্রে সেই স্বাধীনতা রক্ষিত করতে যদি কোনো আন্দোলনের ডাক দেয়, সেক্ষেত্রে আমি কোনো সমস্যা দেখি না।

“এটা ধারাবাহিক একটা কর্মসূচি। হঠাৎ করে এটা দেয়নি।”

তবে বিএনপি হরতাল প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়ে ভালো করেছে বলেও মনে করেন আবদুল হাই শিকদার।

সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণের ইঙ্গিত দেওয়ার পর বিএনপির কর্মসূচি চালিয়ে নেওয়া ঠিক হবে কি না- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “পরিবেশ নিশ্চিতের দায়িত্ব সরকারের। বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী গ্রেপ্তার আছেন। লাখ লাখ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা আছে। এই অবস্থায় পরিবেশ নিশ্চিতের বিষয়টি সরকারের ওপরই বর্তায়।

“তবে সরকার যদি নির্বাচনে পরিবেশ নিশ্চিত করে, তাহলে আমি বলব, বিএনপির কর্মসূচি প্রত্যাহার করা উচিত।”