চট্টগ্রামে প্রার্থী হচ্ছেন মঞ্জুর

বিএনপি এখনও সিদ্ধান্ত না জানালেও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে প্রার্থী হচ্ছেন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এম মঞ্জুর আলম।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 March 2015, 02:30 PM
Updated : 25 March 2015, 03:59 PM

বুধবার ‘চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলন’র ব্যানারে এক সংবাদ সম্মেলনে বর্তমান মেয়র মঞ্জুরকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়, যে ফোরাম থেকে আগেরবারও নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেছিলেন তিনি।

সন্ধ্যায় নগরীর জিইসি কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত ওই সংবাদ সম্মেলনে মঞ্জুর ছিলেন না। বিএনপির কোনো নেতাকেও দেখা যায়নি সেখানে।

তবে উন্নয়ন আন্দোলনের পক্ষে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হতে গণমাধ্যমকর্মীদের আমন্ত্রণ জানান নগর বিএনপির কয়েকজন শীর্ষ নেতা ও তাদের ব্যক্তিগত সহকারী।

এই সংবাদ সম্মেলনের আগে সকালে নগর ভবনে মঞ্জুর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “গত ২২ বছর ধরে জনসেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছি। দল যদি চায়, আল্লাহর হুকুম আর সবকিছু অনুকূলে থাকলে আমি নির্বাচন করব।”

সন্ধ্যার সংবাদ সম্মেলনের পর যোগাযোগ করা হলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হ্যাঁ, আমি চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের প্রার্থী।”

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার পদে থেকে দলীয় সিদ্ধান্তেই কি নির্বাচন করছেন- জানতে চাইলে মঞ্জুর বলেন, “এই বিষয়ে পরে কথা বলব।”

মঞ্জুর বর্তমান মেয়র হওয়ায় পদত্যাগ করেই তাকে নির্বাচন করতে হবে। আর সেই প্রস্তুতিও তার রয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।  

সকালে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “ম্যাডাম যদি আমাকে নির্বাচন করার নির্দেশ দেয়, তাহলে আমি পদত্যাগ করব। দলীয় সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত পদত্যাগ সম্পর্কে কিছু বলা যাচ্ছে না।”

সংবাদ সম্মেলনে কেউ না থাকলেও চট্টগ্রাম বিএনপির শীর্ষনেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি নির্বাচনে গেলে মঞ্জুরকেই মেয়র পদে সমর্থন দেওয়া হবে।

তবে মঞ্জুরের বিরুদ্ধে স্থানীয় পর্যায়ে কর্মীদের অসন্তোষ রয়েছে। দলীয় কর্মসূচিতে তার নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার তার কুশপুতুলও পুড়িয়েছেন ছাত্রদলের এক দল নেতা-কর্মী।

ঢাকায় সিইসির সঙ্গে খালেদা জিয়ার এক দল পরামর্শকের সঙ্গে বৈঠক এবং রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনে বিএনপির দুই নেতার মনোনয়নপত্র সংগ্রহের পরপরই মঞ্জুরের প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা এল।  

সংবাদ সম্মেলনে মঞ্জুরকে মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের আহ্বায়ক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রকৌশলী আবু সুফিয়ান, অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী, অধ্যাপক সালেহ জহুর, অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট শামসুদ্দিন আহমেদ মির্জা প্রমুখ। 

লিখিত বক্তব্যে আবুল কালাম আজাদ বলেন, “চট্টগ্রাম নগরবাসী প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ পেয়েছে। মহানগরীর উন্নয়ন কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষার স্বার্থে পুনরায় মেয়র পদে মঞ্জুর আলমের নাম ঘোষণা করছি।”

বিএনপি সমর্থিত পেশাজীবীদের নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের ব্যানারে ২০১০ সালেও মঞ্জুর আলমকে মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছিল। তারপরই বিএনপির পক্ষ থেকে তাতে সমর্থন জানানো হয়।

আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে কয়েকবার ওয়ার্ড কমিশনার নির্বাচিত হওয়া মঞ্জুর ওই নির্বাচনে তার রাজনৈতিক ‘গুরু’ এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে হারানোর মধ্য দিয়েই বিএনপিতে যুক্ত হন।

মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হন মঞ্জুর।

সংবাদ সম্মেলনে আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিগত মেয়াদে মঞ্জুর আলম সিসিসিকে দুর্নীতি, দলবাজি ও মাস্তানমুক্ত রেখে উন্নয়ন কাজ পরিচালনা করেছেন।

“চট্টগ্রামের উন্নয়নে অঙ্গীকারাবদ্ধ বিনয়ী-সদালাপী ও দাম্ভিকতাহীন মঞ্জুর পাঁচ বছরে তার আগের ১৫ বছরের দ্বিগুণ উন্নয়ন কাজ করেছেন।“

মঞ্জুর ২০ দল সমর্থিত প্রার্থী কি না- জানতে চাইলে আবুল কালাম আজাদ বলেন, “আমরা বিএনপি-আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টির সমর্থকসহ চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষের সমর্থন আশা করছি।”

দলীয় কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগের পাশাপাশি বন্দর নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ব্যর্থতার সমালোচনাও সইতে হচ্ছে মঞ্জুরকে।

তবে বুধবার বর্তমান সিটি কর্পোরেশনের শেষ সাধারণ সভায় মঞ্জুর দাবি করেছেন, নগরীতে এখন জলাবদ্ধতা নেই, ‘জলজট’ হয়। আর তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির ৫৭ দফার অধিকাংশই বাস্তবায়িত হয়েছে।

মেয়র পদে প্রার্থী হলে মঞ্জুরকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের সঙ্গে।

নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে ২৯ মার্চ মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। সেক্ষেত্রে মঞ্জুরকে সেদিনের মধ্যে পদত্যাগ এবং মনোনয়নপত্র কিনতে হবে।