স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচি ঠিক করতে মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউর কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় একথা বলেন মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও কামরুল ইসলাম, মহানগর কমিটির শীর্ষ পর্যায়ের এই দুই নেতা শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভারও সদস্য।
সহ-সভাপতি ফয়েজ উদ্দিন মিয়ার সভাপতিত্বে এই সভায় সাধারণ সম্পাদক মায়া এবং যুগ্ম সম্পাদক কামরুলের পাশাপাশি আরেক যুগ্ম সম্পাদক হাজি সেলিমও ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি মুকুল চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফের ছেলে কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ খোকন এই সভায় ছিলেন না। বর্ধিত সভা শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পরই সাঈদ খোকন কার্যালয়ে ঢোকেন। তার সঙ্গে ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ।
ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তোড়জোড়ের মধ্যে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে ডেকে নেন সাঈদ খোকনকে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে দলের পক্ষ থেকে সমর্থন পাওয়ার কথা পরে সাংবাদিকদের জানানও ঢাকার সাবেক মেয়র হানিফের এই ছেলে।
সাঈদ খোকনের মতোই ঢাকা দক্ষিণে প্রচার চালিয়ে আসছিলেন হাজি সেলিম। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে লড়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া হাজি সেলিম এখন মেয়র হতে চান, যদিও সেক্ষেত্রে তাকে সংসদ সদস্য পদ ছাড়তে হবে।
২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে অংশ নিতে মঙ্গলবার সাঈদ খোকনের পাশাপাশি হাজি সেলিমও মনোনয়নপত্র কেনেন। খোকন দলের সমর্থন পাওয়ার কথা জানালেও হাজি সেলিম সাংবাদিকদের বলেন, তার বিশ্বাস যে শেষ পর্যন্ত দলের সমর্থন তিনিই পাবেন।
গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে মনোনয়নপত্র কেনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কয়েকশ’ গজের মধ্যে বঙ্গবন্ধু এভিনিউর দলীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা বসে, যাতে উপস্থিত হন হাজি সেলিম।
ওই সভায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মায়া বলেন, “২৯ মার্চ মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার পর নেত্রী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন। নেত্রী যাকে সমর্থন দেবেন, তার পক্ষেই ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামবে।
“এর বাইরে কেউ নির্বাচন করলে নগর আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক থাকবে না। তা তিনি নিজ দায়িত্বে করবেন।”
কামরুল বলেন, “প্রার্থী এখনও চূড়ান্ত নয়। এ বিষয়ে নেত্রী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন মনোনয়নপত্র দাখিলের পর। আমরা সে অনুযায়ী কাজ করব।”
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নিয়ে একই রকম ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছিল। সেখানে এ কে এম শামীম ওসমান দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানালেও তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন দলেরই নেতা সেলিনা হায়াৎ আইভী।
ওই নির্বাচনে শামীমকে হারিয়ে আইভী মেয়র নির্বাচিত হন। ভোটের পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শামীম কিংবা আইভী কোনো প্রার্থীকে আনুষ্ঠানিক সমর্থন দেওয়ার ঘোষণা ছিল না।
মন্ত্রী কামরুল বলেন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নির্দলীয় হওয়ায় এখানে কোনো প্রার্থীকে দলের পক্ষ থেকে মনোনয়ন দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে সমর্থন করা যায়।
“প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে যাকে সমর্থন দেওয়া হবে, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সর্বশক্তি দিয়ে তাকে জয়ী করে আনব।”
মায়াও বলেন, “মূল সমর্থন আসবে শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে। তিনি সমর্থন দেবেন, আমরা কাজ করব। এখানে কোনো ফাঁক-ফোকর নেই।”
এই দুই মন্ত্রীই আশা করছেন, সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বর্তমানে আন্দোলনে থাকা বিএনপি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচেনে আসবে।
“আমরা চাই, সবাই নির্বাচনে আসুক। বিএনপিকে বলব, সন্ত্রাসীদের নিয়ে নয়, ভালো মানুষদের নিয়ে নির্বাচনে আসুন। আমরা সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণে প্রস্তুত,” বলেন মায়া।
কামরুল বলেন, “নির্বাচন উপলক্ষে বিএনপি উদ্ভট শর্ত দিলে মানা সম্ভব হবে না। এটা হবে তাদের আরেকটা কূটকৌশল, এরও পরাজয় হবে। তারা পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদদের নিয়ে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে আশা করি।”