সংশয় নিয়েই মনোনয়নপত্র কিনছেন বিএনপির প্রার্থীরা

দল সিদ্ধান্ত দেওয়ার আগে মনোনয়নপত্র কিনলেও চট্টগ্রামের বিএনপি সমর্থকরা সংশয়ে আছেন সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 March 2015, 02:56 PM
Updated : 23 March 2015, 02:56 PM

সোমবার চট্টগ্রাম আঞ্চলিক সার্ভার স্টেশন থেকে একযোগে ১৪টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে বিএনপিতে যুক্ত ১৪ জন মনোনয়নপত্র নেন।

বিএনপি সমর্থিত বর্তমান কাউন্সিলরদের মধ্যে রোববার ও সোমবার কমপক্ষে সাতজন মনোনয়নপত্র নিয়েছেন।

তারা আশা করছেন, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ২৯ মার্চের আগেই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত দলের পক্ষ থেকে আসবে।

তবে সরকারবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে বিভিন্ন মামলায় নেতা-কর্মীদের আসামি হওয়া, গ্রেপ্তার হওয়া এবং শাসক দলের নেতা-কর্মীদের ‘ভীতিকর’ উপস্থিতির কারণে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন তারা।

নির্দলীয় সরকারের অধীনে বিএনপি জোটের লাগাতার হরতাল-অবরোধের মধ্যে আগামী ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হতে যাচ্ছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে এখনও এই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত না জানালেও চট্টগ্রামের স্থানীয় নেতারা ভোটে অংশ নিতে চাচ্ছেন।   

সোমবার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা বিএনপির ১৪ নারী হলেন- নাছিমা আলম, শাহে নেওয়াজ চৌধুরী, সায়েমা হক, আরজু শাহাবুদ্দিন, মনোয়ারা বেগম মনি, বেগম লুৎফুন্নেছা, রেজীয়া বেগম মুন্নী, খালেদা বোরহান, জেসমিন খানম, কামরুন নাহার লিজা, আরজুন নাহার মান্না, মনোয়ারা বাবুল, সাহিদা খানম ও রাশেদা আলম।

এদের মধ্যে নগর মহিলা দল সভানেত্রী মনোয়ারা বেগম এবং আরজু শাহাবুদ্দিন বর্তমানে সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর।

মনোয়ারা বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রস্তুতি হিসেবে আমরা মনোনয়নপত্র নিয়ে রেখেছি। দল সিদ্ধান্ত দিলেই নির্বাচন করব। দল যদি বলে সুস্থ পরিবেশ নেই, নির্বাচন ত্রুটিপূর্ণ হবে তাহলে নির্বাচন করব না।”

বর্তমান পরিস্থিতি নির্বাচনের অনুকূল নয় দাবি করে তিনি বলেন, “এখন তো নগরী মৃত্যুপুরী। দলের কোনো নেতা-কর্মী এলাকায় নেই। জনগণকে সাথে নিয়ে নির্বাচন করতে পারব কি না, তা নিয়ে শঙ্কায় আছি।

“আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা এখনও মাঠে আছে। নির্বাচন কমিশনের উচিত ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র চিহ্নিত করা। কালো টাকা এবং পেশি শক্তিকে অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।”  

নগরীর ৫ নম্বর মোহরা ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর মোহাম্মদ আজম এবং এস এম ইকবাল হোসেন সোমবার মনোনয়নপত্র নিয়েছেন।

মোহাম্মদ আজম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার নামে মামলা নেই, তাই আমি মনোয়ননপত্র নিয়েছি। কিন্তু কয়েকজন কাউন্সিলরের নামে মামলা আছে।

“সম্ভাব্য কাউন্সিলর ও মেয়র প্রার্থীকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হলে তো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হবে না। এটা নির্বাচন কমিশনের ভেবে দেখা উচিৎ।”

বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে গত রোববার মনোনয়নপত্র নেন এনায়েত বাজারের ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল মালেক, পূর্ব বাকলিয়ার মোহাম্মদ তৈয়ব, পশ্চিম বাকলিয়ার এ কে এম জাফরুল ইসলাম, দক্ষিণ বাকলিয়ার ইয়াছিন চৌধুরী ও সরাইপাড়ার বাবুল হক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কাউন্সিলর প্রার্থী বলেন, “চট্টগ্রামের শীর্ষনেতারা আমাদের মনোনয়নপত্র নিয়ে রাখতে বলেছেন। এ বিষয়ে দলের সিদ্ধান্ত স্বল্পতম সময়ের মধ্যেই পাওয়া যাবে।”

পূর্ব বাকলিয়ার কাউন্সিলর মোহাম্মদ তৈয়ব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সরকার দলের নেতাকর্মী-সমর্থকরা বিভিন্ন এলাকায় বলে বেড়াচ্ছে তারা সব ক্ষমতা দিয়ে নির্বাচন করবে।

“এ পরিস্থিতি আমরা প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে জানাব। প্রশাসন নিরপেক্ষতা বজায় না রাখলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না।”

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান মেয়র বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম মঞ্জুর আলম। তিনি কেন্দ্রীয় পর্যায়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন বলে তার ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন। 

সোমবার মেয়র পদের মনোনয়নপত্র নিয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিন। এছাড়া সৈয়দ সাজ্জাদ জোহা ও হোসেন মোহাম্মদ মুজিবুল হক মনোয়নপত্র কিনেছেন।

এদিন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ২২ জন ও কাউন্সিলর পদে ১০৮ জন মনোনয়নপত্র নেন।

গত বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র সংগ্রহের প্রথম দিন থেকে সোমবার পর্যন্ত মোট আটজন মেয়র পদে, ৪৬ জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে এবং ৩৪৩ জন কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন।