বাংলাদেশে না আসতে মোদীকে পরামর্শ কাদের সিদ্দিকীর

রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে বাংলাদেশে না আসতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে উদ্দেশ্য করে পরামর্শ দিয়েছেন কৃষক, শ্রমিক, জনতা লীগের সভাপতি আব্দুল কাদের সিদ্দিকী।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 March 2015, 11:23 AM
Updated : 4 March 2015, 12:10 PM

১৯৭৫ সালের পর দেড় দশক ভারতের আশ্রয়ে থাকা এই রাজনীতিকের মত, মোদীর সফর বাংলাদেশের পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।

হরতাল-অবরোধে নাশকতার মধ্যে দুই প্রধান নেত্রীর সংলাপের দাবিতে মতিঝিলে দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালনরত কাদের সিদ্দিকী বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরের প্রসঙ্গ তোলেন।

ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রী বিজেপি নেতা মোদী বাংলাদেশে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাক লেখা তার একটি চিঠি সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ঢাকায় নিয়ে আসেন।

কাদের সিদ্দিকী ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, “আপনি ভারতের জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের এই অনির্বাচিত সরকারের আমন্ত্রণে এই অস্থিতিশীল অবস্থায় বাংলাদেশ সফর করতে আসবেন না। এতে দেশের পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।”

বাংলাদেশের পরিস্থিতি যত দিন পর্যন্ত শান্ত না হচ্ছে, ততদিন সফরে না আসতে মোদীর প্রতি অনুরোধ রাখেন তিনি।

এক সময়ের আওয়ামী লীগ নেতা কাদের সিদ্দিকী বিএনপি জোটের পাশাপাশি ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বয়কট করে। ওই নির্বাচনে জয় নিয়ে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।

বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য কাদের সিদ্দিকী ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট ট্রাজেডির পর অস্ত্র হাতে তুলে নেন। এক পর্যায়ে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে টিকতে না পেরে ভারতে আশ্রয় নেন।

১৯৯০ সালে গণঅভ্যুত্থানে এইচ এম এরশাদের পতনের পর বাংলাদেশে ফিরে আবার আওয়ামী লীগে সক্রিয় হয়েছিলেন কাদের সিদ্দিকী। কয়েক বছর পর তিনি আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে কৃষক, শ্রমিক, জনতা লীগ গঠন করেন।

গত কয়েক বছর ধরে দৃশ্যত বিএনপিঘনিষ্ঠ কাদের সিদ্দিকী চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারকে দায়ী করে আসছেন।

শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার আলোচনাই এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারে বলে মনে করেন তিনি। এই দাবিতে গত ৩৬ দিন ধরে কার্যালয়ের সামনে তার অবস্থান কর্মসূচি চলছে।

এর মাঝে তিনি দুই নেত্রীকে চিঠি পাঠানোর উদ্যোগও নিয়েছিলেন, কিন্তু তা কারও কাছেই পৌঁছাতে পারেননি তিনি।  

সংবাদ সম্মেলনে সংলাপের ওপর জোর দিয়ে কাদের সিদ্দিকী বলেন, “বিদেশিদের সঙ্গে নয়, আগে দেশের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে।

“সরকার দেশের রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে না। কিন্তু বিদেশি সচিবদের সঙ্গে আলোচনা করে। এই দেশ দিল্লির করদ রাজ্য হওয়ার জন্য পিন্ডি থেকে স্বাধীন হয়নি।”

একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে ভারতের ভূমিকার প্রশংসা করলেও বর্তমানে দেশটির ভূমিকার সমালোচনা কয়েকদিন আগেও করেছিলেন কাদের সিদ্দিকী।

অবস্থান কর্মসূচির মধ্যেই গত ১৮ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, “এদেশের মানুষ মনে করে, বর্তমান সরকারকে টিকিয়ে রাখার পেছনে ভারতের অবদান আছে। এই সরকারকে ভারত কোনো সমর্থন করলে বাংলাদেশের মানুষের হৃদয় থেকে তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।”

বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সরকারের আচরণের সমালোচনাও করেন কৃষক, শ্রমিক, জনতা লীগের সভাপতি।

শেখ হাসিনার পরামর্শকদের অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। তিনি খুব ভাল মানুষ ছিলেন। তবে আশেপাশের শয়তান মানুষ নিয়ে তিনি এখন আর ভালো মানুষ নেই মনে হয়।”

বইমেলার বাইরে লেখক-ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন কাদের সিদ্দিকী।

“পুলিশের সাত-আট দূরেই ব্লগার অভিজিৎকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনা ঘটতে পারলে প্রধানমন্ত্রীর জীবনও নিরাপদ নয় এই দেশে। সরকারি মহল থেকে মাহমুদুর রহমান মান্নাকে জড়ানোর জন্য এই হত্যা হয়েছে কি না, তা আমাকে অনেকে জিজ্ঞেস করেছে।”