খালেদার সঙ্গে দেখা, সহিংসতা বন্ধে জোর কূটনীতিকদের

পরোয়ানা জারির পর খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার নিয়ে আলোচনার মধ্যে তার সঙ্গে দেখা করে সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাটসহ পশ্চিমা কয়েকটি দেশের কূটনীতিকরা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 March 2015, 12:48 PM
Updated : 3 March 2015, 05:44 PM

প্রায় দুই ঘণ্টা বৈঠকের পর বেরিয়ে এসে কূটনীতিকদের পক্ষে অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার গ্রেগ উইলকক সাংবাদিকদের বলেন, তারা চলমান সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানানোর পাশাপাশি বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে পরস্পরকে আস্থায় নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন।

বৈঠকের পর বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি। তবে কার্যালয়ে থাকা দলটির নেতারা জানান, খালেদা জিয়া চলমান অস্থিরতার অবসানে সংলাপের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।

পতাকাবিহীন কালো রঙে কাচ ঢাকা একটি গাড়িতে একসঙ্গে সব কূটনীতিকরা মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ঢোকেন।

কার্যালয়ের ফটকে রাষ্ট্রদূতদের স্বাগত জানান খালেদার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। এরপর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান তাদের দোতলায় চেয়ারপারসনের কাছে নিয়ে যান।

দোতলায় খালেদার সঙ্গে আলোচনার পর রাত সাড়ে ৮টার দিকে কূটনীতিকরা বেরিয়ে আসেন। 

অন্যদের সঙ্গে আগে দেখা হলেও বাংলাদেশে দায়িত্ব নিয়ে আসার পর বার্নিকাটের সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এটাই প্রথম সাক্ষাৎ। তবে তিনি সাংবাদিকদের কিছু বলেননি।

খালেদার সঙ্গে দেখা করার আগে এই কূটনীতিকরা গুলশানে অস্ট্রেলিয়া হাইকমিশনে সমবেত হন। বার্নিকাট পতাকাবাহী গাড়িতে করেই ওই হাইকমিশনের যান।

পরে তারা একটি সাদা মাইক্রোবাসে করে গুলশানের ৮৬ নম্বর সড়কে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে রওনা হন। ওই সময় সাদা মাইক্রোবাসটি সামনে-পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের পুলিশ প্রোটেকশনের দুটি গাড়ি ছিল।

বৈঠকে ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূত পিয়েরে মায়াদন, তুরস্কের রাষ্ট্রদূত হুসেইন মুফতুগলু, কানাডা, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, জাপানসহ নয়টি দেশের কূটনীতিকরা অংশ নেন।

এই বৈঠকের বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার উইলকক বলেন, “আমরা বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করতে করেছি। গত ১ মার্চ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে যে বৈঠক আমাদের হয়েছে, এটি তারই ধারাবাহিকতা।”

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের অবস্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “মানুষের নিরাপত্তা, দেশের স্থিতিশীলতা, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের স্বার্থে আমরা বাংলাদেশে চলমান সহিংসতা বন্ধ করার জন্য সকল পক্ষকে আহ্বান জানাই।

“একই সঙ্গে আমরা চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আস্থা গড়ে তোলার জোর দিচ্ছি।”

বৈঠকের বিষয়ে বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা বর্তমান পরিস্থিতি ও সঙ্কট উত্তরণে সংলাপের বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়েছি।”

বৈঠকে খালেদার সঙ্গে ছিলেন নজরুল ইসলাম খান ও তার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুল কাইয়ুম।

সাধারণ বিস্কুট ও চা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ ৯ দেশের কূটনীতিকদের আপ্যায়ন করা হয়েছে বলে খালেদার কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “সাধারণত কোনো বিদেশি মেহমান কিংবা রাষ্ট্রদূত-হাইকমিশনার দেখা করতে এলে গুলশান-২ নম্বরের ওয়েস্টিন হোটেল থেকে খাবার এনে আপ্যায়ন করা হয়। এবার তা হয়ে উঠেনি।”

গত ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে পুলিশ এই কার্যালয়ে খাবার ঢুকতে বাধা দিচ্ছে, তবে খালেদার খাবার নিয়ে ঢুকতে পারছেন তার স্বজনরা।

রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে গত দুই মাস ধরে কার্যালয়ে অবস্থানরত খালেদার সঙ্গে এর আগে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের একটি প্রতিনিধি দল এবং ঢাকায় যুক্তরাজ্য ও তুরস্কের রাষ্ট্রদূত দেখা করেছিলেন।

দল কিংবা জোটের নেতা-কর্মীরা পুলিশের বাধায় বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ঢুকতে পারছেন না। আইনজীবীদেরও বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন জানিয়েছেন। 

লাগাতার অবরোধ ডেকে ওই কার্যালয়ে অবস্থানরত খালেদার বিরুদ্ধে গত সপ্তাহে দুর্নীতির দুটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত।

বুধবার ওই দুই মামলার শুনানির পরবর্তী দিনকে কেন্দ্র করে খালেদাকে গ্রেপ্তারের আলোচনাও চলছে। এরমধ্যে অন্য একটি মামলায় তার কার্যালয়ে তল্লাশির অনুমতিও আদালতের কাছ থেকে নিয়েছে পুলিশ।

আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তাকে গ্রেপ্তারের কথা মঙ্গলবারই বলেছেন আওয়ামী লীগ নেতা মাহাবুব-উল আলম হানিফ। তবে একইদিন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এখনও পুলিশের হাতে পৌঁছেনি।