আদালতে বুধবার খালেদার যাওয়া অনিশ্চিত

আগের দিন অনুপস্থিত থাকায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পরও জিয়া ট্রাস্ট মামলার শুনানির পরবর্তী দিন আদালতে হাজিরা দিতে যাচ্ছেন না বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 March 2015, 03:59 PM
Updated : 2 March 2015, 04:13 PM

দুর্নীতির এই দুই মামলার শুনানির দুদিন আগে সোমবার বিএনপির নেতা ও আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে এই ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

গত সপ্তাহে জিয়া অরফ্যানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত। এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক রয়েছে আগামী বুধবার।

তার আগে মঙ্গলবার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রত্যাহারের আরজি জানিয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করবেন বলে জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন।

তিনি সোমবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা আগামীকাল (মঙ্গলবার) হাই কোর্টে আবেদন করব। আমরা আশাবাদী, এ ব্যাপারে আদালতের কাছে সুবিচার পাব।”

বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা আইনি প্রক্রিয়ায় পুরো বিষয়টি মোকাবেলা করতে চান।

“তাই এখন বলা যাচ্ছে না, বুধবার আদালতে বেগম জিয়া যাবেন কি না। তবে সম্ভাবনা ক্ষীণ,” বলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বেগম জিয়া সবসময় আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এ বিষয়ে বেগম জিয়া এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। আইনজীবীরা বিষয়টি দেখছেন।”

খালেদা জিয়া এই দুই মামলায় সর্বশেষ গত ২৪ ডিসেম্বর হাজিরা দিয়েছিলেন পুরান ঢাকার বকসীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত আদালতের বিশেষ এজলাসে।

সেদিন তার হাজিরাকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় ব্যাপক হট্টগোল হয়েছিল। বিএনপিকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘাতের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য ছবি বিশ্বাসের ওপর হামলা হয়েছিল সেদিন।

দুই মাস ধরে কার্যালয়ে অবস্থানরত খালেদার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিষয়টি বেশ আলোচিত। এর মধ্যে হরতাল-অবরোধে নাশকতার একটি মামলায় তার কার্যালয় তল্লাশির অনুমতিও রোববার পেয়েছে পুলিশ।   

গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর আওয়ামী লীগ নেতারা বিএনপি চেয়ারপারসনকে আদালতে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছেন।

তবে গত ৩ জানুয়ারি পুলিশের বাধায় আটকে পড়ার পর এক মুহূর্তের জন্যও গুলশানের ওই কার্যালয় থেকে বের হননি খালেদা।

৫৮ দিন ধরে ওই কার্যালয়ে অবস্থানের মধ্যে আরাফাত রহমান কোকোর লাশ ঢাকায় আনার পর কার্যালয়ে থেকেই ছেলেকে শেষ বিদায় জানান তিনি। 

এই কার্যালয়ে খালেদার সঙ্গে রয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, উপদেষ্টা আবদুল কাইয়ুম, প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান, বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানাসহ ৪০/৪৫ জন নেতা-কর্মী ও কর্মকর্তা-কর্মচারী।

গুলশান ৮৬ নম্বর সড়কের ওই কার্যালয়ের দোতলায় নিজের চেম্বার ও পাশের সভাকক্ষটি খালেদা জিয়া সার্বক্ষণিক ব্যবহার করছেন। সেজ বোন সেলিনা ইসলাম, দুই ভাইয়ের স্ত্রী নাসরিন এস্কান্দার ও কানিজ ফাতেমা প্রতিদিনই পালাবদল করে তাকে সঙ্গ দিচ্ছেন।

গুলশানের বাসা ও তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমানের মায়ের বাসা থেকেই খালেদা জিয়ার প্রতিদিনের খাবার রান্না করে আনা হচ্ছে। দুই ভাইয়ের বাসা থেকেও মাঝে-মধ্যে খাবার আসে।

খালেদা জিয়া সকালে ভারী নাস্তার পর দুপুরে হালকা খাবারের পর রাতে ভারী খাবার খান বলে দলীয় নেতারা জানিয়েছেন।

গত রোববার গুলশান কার্যালয়ে তল্লাশি চালানোর পরোয়ানা জারির পর এ নিয়ে গুঞ্জন ছিল কার্যালয়ে পুলিশ ঢুকতে পারে। কিন্তু কার্যালয়ের ফটকে কর্তব্যরত পুলিশের ভাষ্য হচ্ছে, আদালতের আদেশ এখনও তারা হাতে পাননি।

৩ জানুয়ারি থেকে পরবর্তী দুই সপ্তাহ খালেদার কার্যালয় ঘিরে রেখেছিল পুলিশ। প্রধান ফটকে বাইরে থেকে তালাও ঝুলিয়ে দিয়েছিল পুলিশ।

পরে তালা খুলে দেওয়ার পাশাপাশি পুলিশ বেষ্টনি সরিয়ে নেওো হলেও আর বের হননি খালেদা।  

এরপর ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে ফের ওই কার্যালয়ে ঢোকা-বের হওয়া নিয়ন্ত্রণ করছে পুলিশ। খালেদা জিয়ার স্বজন ছাড়া দলের আর কাউকে সেখানে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সেখানে নেতা-কর্মীদের খাবার ঢোকাও বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। মাঝে একবার বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন করা হয়। ইন্টারনেট-টেলিফোন-ফ্যাক্স ও কেবল টিভির নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন রয়েছে দীর্ঘদিন।