ক্ষমতা চিরস্থায়ী না: হাসিনার উদ্দেশে খন্দকার মাহবুব

খালেদা জিয়ার মামলা নিয়ে বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ক্ষমতার পালাবদল হলে তার পরের পরিণতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মনে রাখতে বলেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন।

সুপ্রিম কোর্ট প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 March 2015, 11:49 AM
Updated : 1 March 2015, 11:49 AM

খালেদা জিয়ার দুর্নীতির দুই মামলার বিচারিক আদালত পরিবর্তের দুই আবেদন রোববার হাই কোর্টের একটি বেঞ্চে উপস্থাপনের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “এতিমের টাকা খালেদা জিয়া আত্মসাৎ করেছেন বলে দেওয়া বক্তব্য সরকারের সর্বোচ্চ প্রধানের মুখ থেকে দেশের ১৬ কোটি মানুষ চিন্তাও করতে পারেন না।

“এটা দুর্ভাগ্যজনক। তাকে আমি বারবার বলছি, তিনি একটি ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সন্তান। এই অবস্থায় উদার মনোভাব নিয়ে আসুন। আজকে আপনি ক্ষমতায় আছেন। আগামীকাল অন্য লোক আসবে। ক্ষমতা চিরস্থায়ী না।”

“পৃথিবীর ইতিহাস আমরা জানি। ক্ষমতার পালবদল হয়। তাই পালাবদলের পরে কী হতে পারে, সেটা আমাদের সবারই মনে রাখা উচিত।”

দুর্নীতির অভিযোগে বিএনপি চেয়ারপারসনের দুই মামলার বিচারক পরিবর্তনে গত ২৮ জানুয়ারি বিচারপতি সৈয়দ এ বি মাহমুদুল হকের বেঞ্চে আবেদন করেন তার আইনজীবীরা।

দুই বিচারপতির ওই বেঞ্চের এখতিয়ার পরিবর্তন হওয়ার পর রোববার বিচারপতি মো. রেজাউল হক এবং বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের আদালতে দুই আবেদন শুনানির জন্য পেশ করেন তারা।

খন্দকার মাহবুব বলেন, “আজকেও আমরা উপস্থাপন করেছি। আমরা আশা করি, যে মুহূর্তে আদালত শুনানির জন্য নির্ধারিত করবে, আমরা শুনানির জন্য উপস্থিত হবো। ফলাফল যাই হোক না কেন।

“আমি জোরের সঙ্গে বলছি, বিচারিক নিম্ন আদালতে এই মামলা শুনানির কোনো অধিকার নেই। ওই আদালতে বিচার হবে কি হবে না, তা যে পর্যন্ত উচ্চ্ আদালত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত না নেয়, ততদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।”

বিচারিক আদালত ইতোমধ্যে এই দুই মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।

এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, “তাকে (খালেদা) নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইতে হবে। নামঞ্জুর হলে তিনি উচ্চ আদালতে আসতে পারেন।”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন সংশ্লিষ্ট আদালতে গিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পুনর্বিবেচনার আবেদনও করতে পারেন।

আদালতের পরিবর্তনের আবেদন হওয়ার ফলে নিম্ন আদালতে মামলা চলবে কি না- এ প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “উচ্চ আদালত তো মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেনি।

“যতক্ষণ পর্যন্ত উচ্চ আদালত মামলার কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ না দিবে, ততক্ষণ মামলা চলবে। হাই কোর্টে কিছু ফাইল করলেই তো মামলা স্থগিত হয়ে যায় না।”

‘খালেদা এখনও অবরুদ্ধ’

‘অবরুদ্ধ’ থাকার কারণেই খালেদা জিয়া আদালতে যেতে পারেননি বলে দাবি করেছেন খন্দকার মাহবুব।

তিনি বলেন, “ওয়ারেন্ট অব অ্যারেস্ট অবৈধ ও অনৈতিক। মাননীয় বিচারক জানেন, দেশবাসী জানেন, খালেদা জিয়া রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবরুদ্ধ অবস্থায় আছেন, অভুক্ত অবস্থায় আছেন, অসুস্থ অবস্থায় আছেন।

“এর আগেও আমরা আদালতে যাওয়ার পর আমাদের ওপর হামলা করা হয়েছিল। আমরা মার খেলাম, আমরা আহত হলাম, আমাদের গাড়ি ভাঙল। পরে দেখা গেলো, মামলা হল বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে। সে কারণে তারা আজ জেলে।”

জিয়া অরফ্যানেজ ও চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার বিষয়ে খন্দকার মাহবুব বলেন, ট্রাস্ট্রি যে আছেন, তাকে জবাবদিহি করতে হবে, কেন এই টাকাটা অব্যবহৃত রইল? গরিব লোকজনের জন্য কেন ব্যবহার করা হল না?

“ট্রাস্টে একটি স্পষ্ট বিধান রয়েছে, যদি এই ধরনের ঘটনা হয় তাহলে তাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। অথবা তাকে সরিয়ে দেয়া হবে।”

“তারপরও আজ দুর্ভাগ্য রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে যিনি আছেন, তিনি বলছেন, খালেদা জিয়া গরিব এতিমের টাকা মেরে খেয়েছেন। আইনজীবী হিসাবে চ্যালেঞ্জ করে বলছি, যা টাকা ব্যাংকে ছিল, তা স্বাভাবিকভাবে সুদে বলে আর যে ভাবে বলে, তা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ একদিন দেখবে, কে কতটা সত্যি কথা বলেছে।”