মুখে জঙ্গি দমন, কার্যত পদক্ষেপ নেই: সেলিম

সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী লেখক অভিজিৎ রায়ের হত্যাকাণ্ড জঙ্গিবাদ দমনে সরকারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না থাকার প্রমাণ বলে মন্তব্য করেছেন সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Feb 2015, 05:00 PM
Updated : 27 Feb 2015, 06:20 PM

শুক্রবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সিপিবি-বাসদের যৌথ সমাবেশে একথা বলেন তিনি।

সিপিবি সভাপতি বলেন, “সরকার সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। অভিজিৎ রায়ের ঘটনা প্রমাণ করে যে, মুখে জঙ্গিবাদ দমনের কথা বললেও বাস্তবে এই সরকার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

“আজ এই সমাবেশ থেকে আমরা অভিজিৎ রায়ের হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই। সরকারের প্রতি দাবি, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিজিৎ রায়ের খুনীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।”

সমাবেশে স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধী সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর বিষয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী বিএনপির সমালোচনা করেন এই সেলিম।

তিনি বলেন, জামায়াত-শিবির চক্রকে সর্বোতভাবে নিশ্চিহ্ন করা বর্তমানে সবচেয়ে জরুরি কর্তব্য। এই প্রধান কর্তব্য পালনের বদলে বিএনপি জামায়াতকে জোটসঙ্গী করেছে। আর আওয়ামী লীগ জামায়াতকে প্রধান শত্রু হিসেবে গণ্য না করে ক্ষমতার প্রতিযোগী বিএনপিকে কাবু করার কাজকে প্রাধান্য দিচ্ছে।

“দুর্নীতি-লুটপাট চালিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষা করা যায় না। লুটেরা ধনিক, কালোবাজারী, ফটকাবাজারী, ঋণখেলাপীদের দমন করা জরুরি কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশকে এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি।”

এই শক্তি গড়ে তোলার আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামী ২ থেকে ৮ মার্চ সারা দেশে জেলায় উপজেলায় সমাবেশ ও গণমিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি।

বাসদের সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, “ ক্ষমতা দখলকে কেন্দ্র করে দুই প্রধান বুর্জোয়া দল ও তাদের জোট চরম সংঘাত-সহিংসতায় লিপ্ত হয়েছে। বুর্জোয়া রাজনীতির এই নির্মম পরিহাস থেকে উত্তরণের জন্য আমরা দ্বিদলীয় বৃত্তের বাইরে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি নির্মাণের যে আহ্বান রেখেছি, তার যথার্থতা যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে অনেক বেশি স্পষ্ট।”

সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ, বাসদের নেতা বজলুর রশিদ ফিরোজ ও রাজেকুজ্জামান রতন ও সিপিবি নেতা আব্দুল্লাহ আল কাফি রতন।

বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় সন্ত্রাসীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নিহত হন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী প্রকৌশলী অভিজিৎ।

লেখালেখি নিয়ে মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক অজয় রায়ের ছেলে অভিজিৎকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল জঙ্গিবাদীরা।

হামলায় তার স্ত্রী ব্লগার রাফিদা আহমেদ বন্যাও গুরুতর আহত হয়েছেন। বর্তমানে তিনি রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

অভিজিৎ ও বন্যার ওপর কারা হামলা চালিয়েছে, সে বিষয়ে এখনো কিছু বের করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তারও করা হয়নি।

২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে বের হওয়ার পথে একইভাবে চাপাতি দিয়ে লেখক হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলা হয়েছিল। ওই হামলায় জঙ্গিরা জড়িত ছিল বলে পরে তদন্তে বেরিয়ে আসে।

২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারকেও রাজধানীর মিরপুরে তার বাড়ির সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। ওই হত্যাকাণ্ডেও জঙ্গিবাদীদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে।