বৃহস্পতিবার এক ব্রিফিংয়ে তিনি অভিযোগ করেন, বুধবার বিচারিক আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার পর তার আইনজীবীরা করণীয় নির্ধারণে সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি টিএইচ খানের বাসায় বৈঠকে বসলেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সে সময় ওই বাসা ঘেরাও করে।
“আমরা গতকাল এ ব্যাপারে বসেছিলাম। গতকালতো জানেন ঘটনা। আইনজীবীরা সুষ্ঠু চিন্তা করে শান্তিপূর্ণভাবে বসে যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেটা গতকাল শেষ করতে পারি নাই।... আমরা এ বিষয়ে আবার বসব। বসে সিদ্ধান্ত নেব।”
টানা কয়েকটি ধার্য দিনে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট ও জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আদালতে না যাওয়ায় বুধবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এই পরোয়ানা জারি করেন ঢাকার তিন নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আবু আহমেদ জমাদার।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক খোকন বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন ‘রাজনৈতিক গোলযোগের এই সময়ে’ সরকারকে সাহায্য করতেই খালেদা জিয়ার জামিন বাতিলের আবেদন করেছে।
এখন গ্রেপ্তার এড়াতে খালেদার সামনে কোনো আইনগত সুযোগ আছে কি-না জানতে চাইলে বিএনপিপন্থি এই আইনজীবী নেতা বলেন, “ডেফিনিটলি আইনের সুযোগ আছে। আমাদের সিনিয়র আইনজীবীরা, আমার থেকে সবাই সিনিয়রতো, উনারা বসে সিদ্ধান্ত জানাবেন।”
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ‘তৎপরতার’ কারণে বুধবারের বৈঠকে সিদ্ধান্ত ‘নেওয়া সম্ভব হয়নি’ জানিয়ে খোকন বলেন, “সে সময় র্যাণব, পুলিশ, ডিবি পুলিশ বাসা ঘেরাও করে। পাঁচ ঘণ্টা তারা অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া যাতে আইনগত সহায়তা না পায় এবং আইনজীবীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে এটা তারা করেছেন।”
এ ঘটনা দেশের আইনজীবীদের আতঙ্কিত করেছে মন্তব্য করে খালেদার আইনজীবী বলেন, “আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে আমরা এই ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি এবং সরকারের কাছ থেকে ব্যাখ্যা দাবি করছি।”
“দুঃখের সাথে বলতে হয়, আজ আইনজীবীরা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে আমরা আইনজীবীরা দেখা করতে পারছি না।
“সেখানে গেলে আইনজীবীরা গ্রেপ্তার হচ্ছেন, গ্রেপ্তার আতঙ্কে আছেন। বেগম খালেদা জিয়া পুরোপুরি আইনগত সহায়তা পাচ্ছেন না।”
খোকন বলেন, জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট ও জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বিচারকের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া অনাস্থা জানিয়েছিলেন। সে সময় বিচারক তাকে হাই কোর্টে যেতে বলেছিলেন।
“কোর্ট পরিবর্তনের জন্য তার একটি আবেদন হাই কোর্টে বিচারাধীন আছে। সেটা শুনানির অপেক্ষায় আছে।”
‘টাকা ব্যাংকে, খোয়া যায়নি’
যে মামলার দুর্নীতিতে খালেদার বিরুদ্ধে পরোয়ানা দেওয়া হয়েছে সেই মামলার অভিযোগের টাকা খোয়া যায়নি বলে দাবি করেন খোকন।
“মামলার বিষয়বস্তুতে জিয়া অতিমখানা ট্রাস্ট্রের যে দুই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়, দুদকও জানে, এই টাকাটা আত্মসাৎ হয়নি। ওয়ান ইলেভেনের আগে এই টাকা একটা জমি কেনার জন্য বায়না দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে জমির মালিক জমি বিক্রি করতে রাজি হচ্ছিল না।
“কোর্টে মামলা করে আদালতের মাধ্যমে উদ্ধার হয়েছে। পুরো টাকাটা ব্যাংকে আছে। ব্যাংকে খোঁজ করলেই পাবেন। কোনো টাকাই খোয়া যায়নি। কেউ চাইলে এই রায় আমি দিতে পারব।”
জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টে অনিয়মের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় এ মামলা দায়ের করে।
এতিমদের সহায়তার জন্য একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় এ মামলায়।
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে গতবছর ১৯ মার্চ এ মামলার বিচার শুরু হয়।
খোকন বলেন, “এ মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার কোনো সম্পৃক্ততা নাই। বেগম জিয়া ট্রাস্টিও ছিলেন না। দুদকের চার্জশিটেও চেক, নোট বা আদেশে তার স্বাক্ষর নেই। দুদক কেয়ারটেকার সরকারের নির্দেশে এই মামলা করেছে। এই সরকার সেই মামলাই চালিয়ে যাচ্ছে।”