মান্নার ‘ষড়যন্ত্রে’ নেই সিপিবি-বাসদ

বিভিন্ন বিষয়ে যুগপৎ আন্দোলন চালিয়ে এলেও বর্তমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে মাহমুদুর রহমান মান্না যে পথে হাঁটতে চেয়েছিলেন তার সঙ্গে একমত নয় সিপিবি-বাসদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Feb 2015, 10:32 AM
Updated : 25 Feb 2015, 03:03 PM

তারাও বিকল্প শক্তির উত্থান চাইলেও তা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নয় বলে জানিয়েছেন বামপন্থী দল দুটির নেতারা।

বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা নিরসনে জাতীয় সংলাপের কথা বলেছে সিপিবি-বাসদও। তবে তা বিএনপির অন্যতম জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীকে বাদ রেখে হওয়ার পক্ষে তারা।

বুধবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে মণি সিংহ-ফরহাদ ট্রাস্ট মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এই অবস্থান জানান সিপিবি-বাসদের নেতারা।

টেলিফোন আলাপে সরকার উৎখাতে সামরিক হস্তক্ষেপে আগ্রহ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ চাওয়ার কথা প্রকাশের পর গ্রেপ্তার নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মান্না ‘রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত বিচারের’ দাবি জানান তারা।

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ বলেন, “গত দুই বছর ধরে বিভিন্ন প্রোগ্রামে মান্না সাহেবের সঙ্গে আমাদের দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে। আমরা যুগপৎভাবে কিছু কর্মসূচিও পালন করেছি। কিন্তু প্রকাশিত অডিওতে মান্না সাহেব যা বলেছেন তা একান্তই তার ব্যক্তিগত মতামত। তার বক্তব্যের সঙ্গে আমরা একেবারেই একমত নই। আমরা বিকল্প চাই, কিন্তু ষড়যন্ত্র করে বিকল্প নয়।”

রাজনৈতিকভাবে বর্তমান সংকটের সমাধান প্রত্যাশা করে বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, “আমরা মনে করি, বর্তমান সংকট উত্তরণে জামায়াত-শিবির ব্যতীত সকল রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে জাতীয় সংলাপের উদ্যোগ নিতে হবে এবং এই দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।”

সম্প্রতি নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার টেলিফোন আলাপের দুটি অডিও ক্লিপ প্রকাশের পর তা নিয়ে তুমুল আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

একটি অডিওতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার সঙ্গে আলাপচারিতায় মান্নাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ ফেলার কথা বলতে শোনা গেছে। আর অন্যটিতে অজ্ঞাত পরিচয় এক ব্যক্তির সঙ্গে আলাপচারিতায় রাজনীতিতে সেনা হস্তক্ষেপে ভূমিকা রাখার আগ্রহ প্রকাশ করতে শোনা যায় মান্নাকে।

প্রথম জীবনে ছাত্রলীগ করা মান্না পরবর্তীতে জাসদ, বাসদ ও জনতা মুক্তি পার্টি হয়ে ১৯৯২ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেন।

২০০৭ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত সরকারের আমলে দুই নেত্রীকে বাদ, তথা মাইনাস টু ফর্মুলার সমর্থক হিসেবে সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিতি পান তিনি। দুই বছরের মাথায় আওয়ামী লীগ থেকে বাদ পড়ার পর নাগরিক ঐক্য গড়ে তোলেন মান্না।

গত ৫ জানুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সারাদেশে লাগাতার অবরোধের ডাক দেওয়ার পর সহিংসতায় প্রাণহানির মধ্যে ড. কামাল হোসেন ও মান্নার উপস্থিতিতে এক অনুষ্ঠানে সংকট নিরসনে জাতীয় সংলাপের আহ্বান জানানো হয়।

এরইমধ্যে মান্নার টেলিফোন কথোপকথনের অডিওক্লিপ দুটি হাতে আসার পর তা নিয়ে রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে সংবাদ প্রকাশ হয়।

এরপর তুমুল সমালোচনা ও তার গ্রেপ্তার দাবির মধ্যে মঙ্গলবার ভোররাতে মান্নাকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

সামরিক বাহিনীকে বিদ্রোহে উস্কানির একটি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বুধবার তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দিয়েছে আদালত।

সংবাদ সম্মেলনে বাসদ নেতা ফিরোজ বলেন, “আমরা চাই, তার (মান্নার) বিচার রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্তভাবে করা হোক। আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার সবারই আছে। তাকে যেন সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করা না হয়।”

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে সিপিবির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাজ্জাদ জহির চন্দন উপস্থিত ছিলেন।