আর্মি নাকে তেল দিয়ে ঘুমাতে পারে না: কাদের সিদ্দিকী

বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দৃশ্যত সেনা হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন কৃষক, শ্রমিক, জনতা লীগের সভাপতি আব্দুল কাদের সিদ্দিকী।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Feb 2015, 04:36 PM
Updated : 18 Feb 2015, 05:40 PM

বর্তমান অস্থিরতার অবসানে দুই নেত্রীর সংলাপের দাবিতে দলীয় কার্যালয়ের সামনে ফুটপাতে অবস্থানরত এই রাজনীতিক বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর কিছু করার আছে।

“আর্মি নাকে সরিষার তেল দিয়ে ঘুমিয়ে থাকতে পারবেন না। যে আর্মি আমার সীমান্ত রক্ষার, দেশের মানুষকে রক্ষার দায়িত্বও তার।”

অসাংবিধানিক কাউকে ক্ষমতায় আনার ষড়যন্ত্র চলছে বলে আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে দলটির সাবেক এই নেতা সেনাবাহিনীর ভূমিকা প্রত্যাশা করলেন।

তবে সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে সম্প্রতি বলা হয়েছে, সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে কিছু দিন ধরে মনগড়া বিভিন্ন খবর দেওয়া হয়েছে। তারা দেশের আইন ও সংবিধানের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল।

বাংলাদেশে রাষ্ট্র পরিচালনায় কয়েকবার সেনা হস্তক্ষেপের অভিজ্ঞতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার গত মেয়াদে অসাংবিধানিক পদ্ধতিতে ক্ষমতা দখলের সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান সংবিধানে যোগ করেন।

কাদের সিদ্দিকী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বর্তমান ভূমিকার সমালোচনা করে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে তাদের না নিতেও জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানান।  

সশস্ত্র বাহিনীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “সেনাবাহিনীকেও মনে করিয়ে দিতে চাই, যারা বিদেশে মানুষের নিরাপত্তা দিতে পারে, তারা যদি নিজ দেশের মানুষের নিরাপত্তা দিতে না পারে, তাহলে তাদের বিদেশে যাওয়ার কোনো অধিকার নাই। আগে নিজের দেশের মানুষের জানমালের হেফাজত করতে হবে।

ছবি: আসাদুজ্জামান প্রামানিক/বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

বিএনপি-জামায়াত জোটের চলমান অবরোধে নাশকতা ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের কঠোর হওয়ার হুঁশিয়ারিকে ‘দায়িত্বহীন’ বক্তব্য বলে মন্তব্য করেন কাদের সিদ্দিকী।

“সন্ত্রাসী বাহিনী হোক আর আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীই হোক, কেউ নির্বিচারে এদেশের মানুষের গায়ে গুলি চালাতে পারবে না, এবং সেটা চলছে।”

“আমি অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জাতিসংঘকে বলতে বাধ্য হব যে, এদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার নিজের দেশের মানুষের জীবন রক্ষা করতে পারে না, তাদের জীবনহানি ঘটায়। শান্তি রক্ষা বাহিনীতে তাদের যাওয়ার অধিকার নেই।”

অবিরাম অবস্থানের ২২ দিনের মাথায় সংবাদ সম্মেলন করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে হতাহতের ঘটনায় ক্ষোভ জানলেও বিএনপি জোটের অবরোধ-হরতালে পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হয়ে অর্ধশতাধিক মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে কিছু বলেননি কাদের সিদ্দিকী।

বাসে পেট্রোল বোমা মেরে যারা মানুষ মারে তাদের কি মায়া-দয়া নেই?- প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, “তাদের দয়া-মায়া আছে কি নাই, এটা আপনার কাছে কেউ জানতে চায় না। দারোগা-পুলিশ সব আপনার, এটা বন্ধ করেন।

“শত শত গ্রেপ্তার করছেন, জেলখানায় যত জায়গা আছে, তার কয়েকগুণ ভরে ফেলেছেন। আরও তিরিশ গুণ ভরেন। গণভবন ছেড়ে দিয়ে আপনি অন্যখানে থেকে ওটার মধ্যেও রাখতে পারেন।”

‘আপামনি’ হাসিনার পদত্যাগ দাবি

সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে চিঠি দিতে ব্যর্থ হওয়ার পর রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলাপ করতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা জানিয়েছেন কৃষক, শ্রমিক, জনতা লীগের সভাপতি।

সংলাপের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীকে খত দিতে বলিনি, আলোচনা করতে বলেছি।  

ছবি: আসাদুজ্জামান প্রামানিক/বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

“আপনি ইচ্ছেমতো আলোচনা করুন, দেশ যদি শান্তিতে রাখতে পারেন, তাহলে বৈধ হন আর অবৈধ হন, যতদিন পারুন ক্ষমতায় থাকুন। কিন্তু দেশে আগুন জ্বালিয়ে আপনি ক্ষমতায় বসে থাকতে পারেন না। আপনি পদত্যাগ করুন।”

“আর যদি আপনি পদত্যাগ করতে না চান, তাহলে দেশে যেন একটা ছাগলেরও ঠ্যাং না ভাঙে। এই গ্যারান্টি আপনাকে দিতে হবে।”

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের আহ্বান জানানোর আগে পুরনো সম্পর্কের কথা তুলে ধরে তাকে ‘আপামনি’ বলেও সম্বোধন করেন কাদের সিদ্দিকী।

বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ কাদের সিদ্দিকী ১৯৭৫ এর ট্রাজেডির পর অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন। এক পর্যায়ে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে পেরে উঠতে না পেরে ভারতে আশ্রয় নেন।

১৯৯০ এর গণঅভ্যুত্থানে সামরিক শাসনের অবসান ঘটলে বাংলাদেশে ফিরে আসেন কাদের সিদ্দিকী এবং সক্রিয় হন আওয়ামী লীগে।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের টিকিটে সংসদ সদস্যও হয়েছিলেন কাদের সিদ্দিকী। কিন্তু এরপর মতদ্বন্দ্ব থেকে আওয়ামী লীগ ছেড়ে নতুন দল গঠন করেন তিনি।

বীরউত্তম খেতাবধারী মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকীর সাম্প্রতিক ভূমিকা বেশ বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তার ভাই আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর ভাষায়, একজন মুক্তিযোদ্ধার রাজাকার হওয়ার শখ জেগেছে।

সংলাপের বার্তা নিয়ে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার কাছে নিজের স্ত্রী নাসরিন সিদ্দিকীকে পাঠিয়েছিলেন কাদের সিদ্দিকী। তবে গণভবনে গিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে পাননি, বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে তাকে ঢুকতে দেয়নি পুলিশ।

ছবি: আসাদুজ্জামান প্রামানিক/বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

সংবাদ সম্মেলনে স্ত্রীকে পাশে রেখে কাদের সিদ্দিকী প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, “আপনি আমাকে যদি পাঁচ বছর আপনার গেটের অপেক্ষা করাতেন, আমার কোনো দুঃখ হত না। আপনি আমার অসুস্থ স্ত্রীটাকে, আমার ছোট্ট মেয়ে, তাদেরকে গেটের সামনে দাঁড় করিয়ে রাখলেন। একটু সময় দিলেন না।

“শয়তানেরা আমার বিষয়ে আপনাকে বোঝায় যে, আমি খারাপ কথা বলি। আমি আপনাকে মায়ের মতো ভালোবাসি, মায়ের মতো সম্মান করি।”

“আমি আপনাকে আবারও অনুরোধ করি। আমার ২২ দিন (অবস্থান) হইছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমি আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাই। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কথা বলতে চাই। আপনার বাবার হত্যার প্রতিবাদ করেছিলাম, সে হিসেবে প্রতিবাদ করতে চাই। দয়া করে আপনার সুবিধা মতো আমারে সময় দেবেন।”

দুই নেত্রীর সংলাপ না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে এতে সরকারের বিরুদ্ধে বাধা সৃষ্টির অভিযোগ করেন কাদের সিদ্দিকী।

‘মা’ সম্বোধনের পর আবার শেখ হাসিনার উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপামনি, মানুষ এখানে আসলেই আপনি গ্রেপ্তার করেন, এটা কেমন কথা!”

৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সমালোচনা করে ওই ভোট বয়কটকারী কাদের সিদ্দিকী বলেন, “কোনো নির্বাচন হয় নাই। আপনি ভোট (নতুন নির্বাচন) দেন, ভোটে নির্বাচিত হন, জিতে এসে আরও ২৫ বছর দেশ চালান। তাতেও যদি না হয় ২৫শ’ বছর দেশ চালান, কেউ বাধা দেবে না।”

৭৫ এর পর দেড় যুগ ভারতে অবস্থানরত কাদের সিদ্দিকী দেশটির বর্তমান অবস্থানের সমালোচনা করেন।

“মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় ১৪ হাজার সৈন্য আমাদের মাটিতে রক্ত দিয়েছে, তাদের রক্ত আমাদের রক্ত একাকার হয়ে গেছে। সেই দেশে কোনো অপ্রিয় সরকার মানুষ মারবে, সেই কাজে ভারতীয় সরকারের সহযোগিতা থাকবে। এটা ভাবতে আমার খুব কষ্ট হয়। এদেশের মানুষ মনে করে, বর্তমান সরকারকে টিকিয়ে রাখার পেছনে ভারতের অবদান আছে।”

“এই সরকারকে ভারত কোনো সমর্থন করলে বাংলাদেশের মানুষের হৃদয় থেকে তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। বাংলাদেশের মানুষ জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে ভারতের বিরুদ্ধে চলে যাবে,” বলেন তিনি।