দৃশ্যপটে থাকছেন না কামাল-মান্না

কথিত সংলাপের উদ্যোগ থেকে দলবদ্ধ নাগরিকরা ড. কামাল হোসেন ও মাহমুদুর রহমান মান্নাকে বাদ দিয়েছে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তাদের একজন।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Feb 2015, 03:51 PM
Updated : 13 Feb 2015, 03:39 AM

বৃহস্পতিবার সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এক উপদেষ্টার মহাখালীর কার্যালয়ে দীর্ঘ বৈঠকের পর এক উদ্যোক্তা বলেন, “ওনারা এসবে নেই। বাদ দেওয়ার বা যোগ করার প্রশ্ন নয় এটা।”

শুক্রবার বেলা ১১টায় সংবাদ সম্মেলন করে বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন নাগরিকদের অংশটি তাদের অবস্থান আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরবে।

গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গত শনিবার ‘জাতীয় সংলাপের’ উদ্যোগ প্রক্রিয়া নিয়ে এক গোলটেবিল করা হয়। প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনার পর কামাল এবং মান্নাকে দৃশ্যপটে রাখছেন না তারা।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মহাখালীর রেডক্রিসেন্ট কনকর্ড টাওয়ারে বিএফডব্লিউই এর কার্যালয়ে বৈঠকের পর সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা, সাবেক সিএজি হাফিজউদ্দিন খান, সাবেক উপদেষ্টা আকবর আলি খান, সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, কলামনিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদকে বের হয়ে আসতে দেখা যায়।

বিএফডব্লিউই এর সভাপতি রোকেয়া আফজাল রহমান বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না বলে ওই অফিসের একজন কর্মচারী জানান।

৩০ জানুয়ারি গুলশানের কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকে ড. কামাল হোসেন ও মাহমুদুর রহমান মান্না

রোকেয়া রহমান সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবং বাংলা দৈনিক প্রথম আলোর স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান মিডিয়া স্টারের  পরিচালক ও ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান মিডিয়া ওয়ার্ল্ড এর চেয়ারপারসন। তিনি এবিসি রেডিওর পরিচালকও।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতা ও সমর্থক পেশাজীবীরা প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের বিরুদ্ধে সংবিধান বহির্ভূত সরকার ব্যবস্থা কায়েমের চেষ্টার অভিযোগ করে থাকেন। ২০০৭-২০০৮ সালের সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠায় পত্রিকা দুটির ভূমিকা রয়েছে বলেও অভিযোগ করে থাকেন তারা।

বৈঠকে উপস্থিত সৈয়দ আবুল মকসুদসহ কয়েকজন প্রথম আলোর কলামনিস্ট।

ওই বৈঠকে উপস্থিত একজন বলেন, “শুরুতে কামাল-মান্নাদের নাম উঠেছিল। আগামীতে তারা [কামাল-মান্না] থাকবে না। উনারা এসবে নাই। এটা নির্দলীয় জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের উদ্যোগ।”

সোমবার রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে জাতীয় সংলাপের উদ্যোগ নিতে খোলা চিঠি দেন নাগরিক সমাজের পক্ষে সাবেক সিইসি শামসুল হুদা।

এ ধারাবাহিকতায় আনুষ্ঠানিকভাবে নাগরিক সমাজের একটি রূপরেখা ও লক্ষ্য তুলে ধরা হবে শুক্রবার।

বৃহস্পতিবারের বৈঠকের বিষয়ে সাবেক সিইসি এটিএম শামসুল হুদা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কাল আমরা একটা প্রেস ব্রিফিং করবো। ওটারই কাগজপত্র ঠিক করার বিষয় ছিল, ওঠাই আমরা করেছি। সাংবাদিকদের কিছু কাগজপত্র দেব, কাগজপত্রগুলো রেডি করা হলো, আর কিছু হয়নি।”

প্রেস ক্লাবের সংবাদ সম্মেলনেই ‘সব কিছু’ বলা হবে জানান তিনি।

কারা ও কয়জন নিয়ে  নাগরিক সমাজ প্রতিনিধিত্ব করছে তা এ মুহূর্তে বলতে নারাজ সাবেক এই সচিব।

“প্রশ্ন করতে পারবেন, এডেকুয়েট টাইম দেওয়া হবে আপনাদের, আমরা উত্তর দেব, জানতে পারবেন এগুলো।”

ড. কামাল হোসেন ও মাহমুদুর রহমান মান্না ওই নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে থাকছে কিনা সে বিষয়েও মন্তব্য না করে সাবেক সিইসি শামসুল হুদা বলেন, “এগুলো আজ বলবো না। কাল শুক্রবার জানতে পারবেন।”

বৃহস্পতিবার নাগরিক সমাজের আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠক হয়নি বলেও জানান তিনি।

“এগুলো একটা সাংগঠনিক কাঠামো লাগে, কাগজপত্র জোগাড় করা, কী হবে তা নির্ধারণ করা, কক্ষ ভাড়া করা- এ কাজগুলো আমরা করলাম। বিশেষ কোনো আলোচনা হয়নি, কালকে মিটিংয়ের জন্য অনেকগুলো জিনিস লাগে- তা ঠিক করেছি। আমাদের নিজস্ব কোনো রিসোর্স নেই। সেজন্য আমাদের কলিগের সাহায্য নিয়ে এগুলো ঠিক করেছি।”

সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুদার জানান, বেলা ১১টায় ‘উদ্বিগ্ন’ নাগরিকদের পক্ষ থেকে প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। আনুষ্ঠানিক যাত্রার সংবাদ সম্মেলনকে সামনে রেখে এ বৈঠক বলে জানান নাগরিক সমাজের এ প্রতিনিধি।

বৃহস্পতিবারের বৈঠকের বিষয়ে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হ্যাঁ, আমরা আলাপ-আলোচনা করছি। ফরমালি আমরা বিভিন্নভাবে এ আলোচনা করছি নিজেদের মধ্যে।”

“আমরা কোনো ব্যক্তিস্বার্থে এ বৈঠক বা উদ্যোগ নিচ্ছি না। আমরা যে উদ্যোগটা নিয়েছি তাতে ব্যাপক আশাবাদ সৃষ্টি হয়েছে জনগণের মধ্যে। এখানে যারা রয়েছেন, তারা আমরা সবাই জ্যেষ্ঠ নাগরিক। আমাদের একটা দায়িত্ব বোধ রয়েছে। সমাজের প্রতি এ দায়িত্ব বোধ থেকে আমরা কিছু করার চেষ্টা করছি। আমরা তো [সংকট] সমাধানের কথা বলছি।”

কোনো রূপরেখা বা কমিটি ছোট পরিসরে ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানান তিনি।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “এখনো আলাপ-আলোচনার মধ্যে রয়েছে। মূলত যে উদ্যোগ নিয়েছি তা আরও সুস্পষ্ট করাই আমাদের সংবাদ সম্মেলন। আমরা নাগরিকদের উদ্বেগটাই প্রকাশ করছি। আমরা সব নাগরিকের পক্ষে না, উদ্বিগ্ন নাগরিকদের পক্ষ থেকে কথা বলছি। আমরাও উদ্বিগ্ন, সে অবস্থান থেকে কথা বলছি।”

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেন ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার সম্পৃক্ততার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এ নাগরিক প্রতিনিধি হবে সর্বোচ্চ নির্দলীয়। রাজনীতিবিদরা রাজনীতিবিদদের কাজ করবেন। আমরা নির্দলীয় অবস্থান থেকে আমাদের দায়িত্ব বোধ থেকে এ কাজ করছি। এটা নির্দলীয় ব্যক্তিদের উদ্যোগ।”

প্রথম দিকে ছোট পরিসরে এর যাত্রা শুরু হবে উল্লেখ করে সুজন সম্পাদক জানান, ধীরে ধীরে নাগরিকদের সংখ্যা আরও বাড়বে। এটা সম্পূর্ণ নির্দলীয়। কোনো দলীয় ব্যক্তি নেই এ উদ্যোগে। একদল কনসার্নড সিটিজেনের উদ্যোগে এটা হচ্ছে।

নাগরিক সমাজের প্রাথমিক কমিটি ১০-১৫ জন হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরে এ সংখ্যা আরো বাড়বে।

শনিবার জাতীয় সংলাপের বিষয়ে রাজধানীতে এক মতবিনিময় সভায় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না একটি ঘোষণা পাঠ করেন।

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সেমিনার কক্ষে শনিবারের ‘জাতীয় সংকট নিরসনে জাতীয় সংলাপ’ শীর্ষক ওই আলোচনা সভার আয়োজন করে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া।

ওই সভার দুই অধিবেশনে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান ও এ টি এম শামসুল হুদা সভাপতিত্ব করেন।

আলোচনায় অংশ নেন গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন, আইনজীবী শাহদীন মালিক, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আরেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ, সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, বিকল্পধারার মহাসচিব আবদুল মান্নান, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, গণফোরামের নেতা মোস্তফা মহসিন মন্টু, ডাকসুর সাবেক সহসভাপতি সুলতান মো. মনসুর আহমেদ ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক হোসেন, আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী।

পরদিন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এ প্রক্রিয়ার কঠোর সমালোচনা করেন। এর একদিন পর সোমবার রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি নেত্রীর কাছে খোলা চিঠি দেয় এ নাগরিক সমাজ।

ওইদিন সন্ধ্যায় এক অনুষ্ঠানে সুশীল সমাজের সমালোচকদের ‘মানসিকভাবে অসুস্থ’ বলে মন্তব্য করেন অন্যতম জাতীয় সংলাপ প্রক্রিয়ার অন্যতম উদ্যোক্ত কামাল হোসেন।

মঙ্গলবার বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এ সংলাপ প্রক্রিয়াকে ‘অবাস্তব ও অগ্রহণযোগ্য’ বলে মন্তব্য করেন।

বুধবার কামাল-মান্নাদের সমালোচনা করে জাতীয় সংসদে শেখ হাসিনা বলেছেন, তাদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে না।