সুশীল সমাজের সমালোচকরা ‘অসুস্থ’: ড. কামাল

সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সমালোচকদের ‘মানসিক অসুস্থ’ আখ্যা দিয়ে রাজনৈতিক দল গণফেরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, তাদের চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Feb 2015, 05:56 PM
Updated : 9 Feb 2015, 05:56 PM

রাজনীতিবিদ ও সুশীল সমাজের মধ্যে বিভাজন করা যুক্তিহীন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সোমবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ঐক্যবদ্ধ ছাত্র সমাজ নামে একটি সংগঠনের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে একথা বলেন কামাল হোসেন।

সংকট নিরসনে জাতীয় সংলাপের কথা বলে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার উদ্যোগে শনিবার রাজধানীতে এক গোলটেবিলও হয়। ওই সভায় কামাল হোসেনসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয় সংলাপ নামের এ উদ্যোগ নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের অনেকে সমালোচনা করায় পাল্টা তাদের সমালোচনা করেন কামাল।

সভার দুদিনের মাথায় সোমবার সংলাপের উদ্যোগ নিতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে খোলা চিঠি দেয় তারা।

‘দেশ ও শিক্ষার পরিবেশ রক্ষায় ছাত্র সমাবেশের ডাক’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নিয়ে নিজেদের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে কামাল বলেন, “এভাবে-আজকে সমাধানের কথা এসেছে। জাতীয় সংলাপের বিষয়ে পরশু অনেককে নিয়ে সুন্দর আলোচনা হয়েছে। দেশে যারা আস্থাভাজন, শ্রদ্ধাভাজন মানুষ; সাবেক আইজিপি, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব, সাবেক সিইসি, সাবেক সিএজি, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও রাজনীতিকসহ সকল পর‌্যায়ের লোক আলোচনায় অংশ নিলেন। এটা ক্ষুদ্র ব্যাপার না।”

নিজেকে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে তুলে ধরতে গিয়ে রাজনীতিবিদ কামাল বলেন, “এখানে সিভিল সোসাইটি কারা? অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, মোফাজ্জাল হায়দার চৌধুরী, গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, সাংবাদিক সিরাজুদ্দিন হোসেন এরা সিভিল সমাজ। পেশাজীবি ও বুদ্ধিজীবি এরা বলতেন এরা সিভিল সমাজ। পরে এ শব্দটা চালু হয়েছে। কিন্তু সবাই সচেতন নাগরিক।”

সমালোচনাকদের ‘মানসিক অসুস্থ’ আখ্যা দিয়ে জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবি বলেন, “আমরা সচেতন নাগরিক হওয়া কি অপরাধ? যারা কতভাবে [সমালোচনা] বলেন, তারা মানসিকভাবে অসুস্থ। তাদের চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে। আল্লাহ তাদেরকে সুস্থ করেন। আর সুস্থ করা পর‌্যন্ত যদি প্রয়োজন হয় চিকিৎসা করেন। সিভিল সমাজ হওয়া একটা অপরাধ। তা কি করে হতে পারে?”

কামাল হোসেন মনে করেন, রাজনীতিবিদ আর সুশীল সমাজের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করা- ভিত্তিহীন, যুক্তিহীন। বলার জন্য বলছেন, আন-নেসেসারি। রাজনীতিবিদরা অবশ্যই শ্রদ্ধা পাবেন যদি কুকর্ম না করেন, দুই নম্বরি না করেন, হত্যাকাণ্ডের প্রশ্রয় না দেন।

“যারা বিভাজনের কথা বলে রাজনীতিতে নেমেছেন তারা অভিশাপ, তারা এ জাতির প্রতি অভিশাপ। সৃষ্টিকর্তা আমাদের মুক্ত করো। ১৬ কোটি মানুষকে এ অভিশাপ থেকে মুক্ত করো আল্লাহ।”

এ দেশে কেউ কারো শত্রু হতে পারে না বলে মন্তব্য করেন কামাল।

তিনি বলেন, “বিভাজন আর পাল্টাপাল্টি- বলে ওরা আমাদের শত্রু। কেউ আমাদের শত্রু না। এ দেশের নাগরিক সবাই, এদের আমরা শত্রু হতে পারি না। এটা অভিশাপ।”

কামাল হোসেন বলেন, অনেক অপচেষ্টার পরও এ দেশে ধর্মের ভিত্তিতে রাষ্ট্র করতে পারেনি পাকিস্তান।

“এ দেশে জাতীয়তাবাদী চেতনা ও ধর্ম পাশাপাশি পালন করেছি। এর মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। এ বিরোধ যারা সৃষ্টি করে হীন, সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে তারা একটা অভিশাপ- তা বোঝা দরকার। যে বা যারা এটা করে, দলীয় রাজনীতি যদি এ জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়, এ দল করলে ওই দল আমাদের শত্রু- এ দেশ কোনো দলের না।”

তিনি বলেন, এ দেশ সকল জনগণের, ১৬ কোটি মানুষের। দুই জমিদারের মধ্যে দেশকে সীমাবদ্ধ থাকার প্রশ্নই উঠে না। আমরা স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক।

সংলাপ দুদলে নয়, সব মানুষে

কামাল হোসেন বলেন, সংলাপ প্রক্রিয়ার মধ্যে যেতে হবে। যেখানে দেশের সকল মানুষ অংশ নেবে। সংলাপ কোনো আনুষ্ঠানিকতা নয়; তা হচ্ছে কথা বলা, মত বিনিময় করা। জাতীয় ঐকমত্য হচ্ছে বড় জিনিস, এর প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হলে তাকে ইতিহাস বিদায় দেবে।

তিনি বলেন, জাতীয় ঐকমত্য হয়ে আছে শান্তির পক্ষে, কার‌্যকর গণতন্ত্রের পক্ষে। এগুলোকে রক্ষা করার জন্যে কোথায় কোথায় ঘাটতি রয়েছে তা সংলাপের মাধ্যমে উঠে আসবে।

“দলের মধ্যে নয়, সারাদেশের মানুষ আলোচনা করি। ১৬ কোটি মানুষের মধ্য দিয়ে সব জেলা, উপজেলা, থানায় সবার সঙ্গে সংলাপ হোক। আমরা ঐকমত্যে আছি। যারা ক্ষমতায় রয়েছে তা ঐকমত্য মেনে নিতে বাধ্য।”

কামাল হোসেন বলেন, “জাতীয় সংলাপের বিষয়ে আমরা স্পষ্ট করে বলছি- এ সংলাপ দুদলের মধ্যে নয়; এটা হবে আমাদের সকলের মধ্যে। দেশের যে অস্বাভাবিক অবস্থা তা নিয়ে কোনো বিতর্কের অবকাশ নেই। আমরা সবাই চাই দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসুক।”

হরতাল-অবরোধ-সহিংসতার কারণ খুঁজে বের করার আহ্বান জানান তিনি।

“বন্ধ করতে হবে বোমাবাজি, আক্রমণের ঘটনা বন্ধ করতে হবে। মানুষ কি হঠাৎ পাগল হয়ে গেছে বোমা নিক্ষেপ করছে?- এর কারণ খুঁজে চিহ্নিত করতে হবে। অবরোধ-হরতাল কেন করছে? এরা পাগল হয়ে গেলে তাদের মানসিক চিকিৎসা করতে হবে।”

তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনটা করা হয়েছিল সাংবিধানিক ধারা বজায় রাখার জন্যে, ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হয়েছে। এ নির্বাচনের পরে মানুষ একটা নির্বাচন আশা করতে পারে। কিন্তু সংলাপের মধ্যে আসতে হবে। ৫ বছর ভালো নির্বাচিত একটি সরকার হঠাৎ করে কেন যাওয়ার মুহূর্তে বাধ্য হয়ে ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্যে যেনোতেন করে একটা নির্বাচন করল?

“তারা [সরকার] বলেছিল- অবস্থার চাপে পড়ে করেছে; তবুও আমি এটা সব সময় সমর্থন করেছি। তারা বলেছে, পরে একটা ভালো নির্বাচন হবে। যে বা যারা ওই পথ থেকে অন্যপথে নিয়েছে এবং সহিংসতা কোনোভাবে আমরা সমর্থন করতে পারি না।”

অনুষ্ঠানে আরো অংশ নেন মাহমুদুর রহমান মান্না, সুলতান মোহাম্ম মনসুর, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, অধ্যাপক আমেনা মহসীন, ঐক্যবদ্ধ ছাত্র সমাজের সভাপতি আজম রূপু ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মধু।