কথোপকথনে ‘নাশকতার নির্দেশ’ খালেদার

চার বছর আগে ঢাকায় বিএনপির একটি সমাবেশের সময় দলের কয়েকজন নেতার সঙ্গে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কয়েকটি টেলিফোন সংলাপের অডিও টেপ ঘুরছে ইউটিউবে, যাতে তাকে নেতাদের নানা নির্দেশ দিতে শোনা যায়।

সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Feb 2015, 03:36 AM
Updated : 2 Feb 2015, 03:36 AM

বাংলা লিকস নামের একটি একাউন্ট থেকে আপলোড করা এসব কথোপকথন সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। খালেদার এসব নির্দেশ নাশকতা ঘটনোর উদ্দেশ্যেই-এমন কথা রয়েছে অডিও ফাইলগুলোর শিরোনামে।  

২০১১ সালের ১৮ ডিসেম্বর ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে সারাদেশ থেকে জনসমাগমের প্রস্তুতি নিয়েছিল বিএনপি।

অনুষ্ঠানস্থল ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে সকালে আগতদের পুলিশ লাঠিপেটা করে বের করে দিলে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ বাঁধে এবং তা ছড়িয়ে পড়ে অন্য জেলাগুলোতেও। 

ঢাকায় বোমা বিস্ফোরণে একজন মারা যায়, পোড়ানো হয় কয়েকটি গাড়ি। সিলেটে বাসে আগুন দেওয়া হলে পুড়ে মারা যান এক যাত্রী।

বাংলা লিকস খালেদার যে পাঁচটি কথোপকথন প্রকাশ করেছে, তার চারটিই ওই সমাবেশ শুরুর আগে কয়েকজন নেতার সঙ্গে খালেদার কথোপকথন শোনা যায়।

প্রথম টেপটিতে অন্য প্রান্ত থেকে খালেদা জিয়ার কাছে জানতে চাওয়া হয়- “ম্যাডাম, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রোগ্রামটা কি অন থাকবে?”

তখন খালেদাকে বলতে শোনা যায়- “এখন পর্যন্ত অন থাকবে। কিন্তু ওখানে কেউ থাকবে না। ছেলে-পেলেরা সব রাস্তায় থাকবে। ভেতরে কাউকে আমি দেখতে চাই না। ছেলেরা সব রাস্তায় যাবে।”

ঢাকা মহানগর বিএনপির তৎকালীন আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালামকে ‘লোক নামানোর’ নির্দেশও দিতে শোনা যায় খালেদাকে। 

“খোকা আর সালামকে বলে দেন, বেশি করে লোক নামাতে। ওরা যদি লোক নামাতে না পারে, দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিক। আমি রাস্তায় লোক দেখতে চাই।”

এরপর খালেদাকে বলতে শোনা যায়- “আপনি কি ওদের সঙ্গে কথা বলেছেন।”

অন্য প্রান্ত থেকে যখন ‘জ্বি’ বলে আরও কিছু বলা শুরু হয়, তখন তাকে থামিয়ে দেন বিএনপি চেয়ারপারসন। 

“না না, ওই যে, অন্যদের, আপনি যাদের সঙ্গে কথা বলেন। ওরা এখনো নামেনি কেন?...আরও নামাতে বলেন।

“আমাদের লোকজনদের বল, সব প্রেস ক্লাব ও ইঞ্জিনিয়ার (ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন) ছেড়ে রাস্তায় চলে যাও। কাউকে আমি ওখানে দেখতে চাই না। ওখানে শুধু মুক্তিযোদ্ধা যেগুলো আসছে, ওই কয়টা থাকবে। আর সব রাস্তায়।”

দ্বিতীয় কথোপকথনে তৎকালীন মহানগর বিএনপি সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালামকে খালেদা বলেন, “তাড়াতাড়ি করে যত পার পাঠাও লোক। দেরি করো না, দেরি করলে অসুবিধা হয়ে যাবে। বুঝছ।”

তৃতীয় কথোপকথনে বিএনপির জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীকে সক্রিয় করতে একজনকে নির্দেশ দেন খালেদা।

“জামায়াতকে বলেন, ওদের লোকজন নামাই দিতে বলেন। শুধু ঢাকায় না, সব জায়গায়।... আর মৃদুলকে বলেন যে ও ওর জায়গাটা ভাল করে করতে।”

চতুর্থ কথোপকথনটি খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাদেক হোসেন খোকার।

খালেদা বলেন, “আপনার কমিশনারদের বলুন, যার যার এলাকায় নিয়ে যাক। রাস্তাগুলো ব্লক করে দিক আর কী।...এলাকা ভিত্তিক।”

পঞ্চমটিতে চট্টগ্রামের গোলাম আকবর খন্দকারের সঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগর কমিটি নিয়ে কথা বলেন, যাতে নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেনের নাম এসেছে। 

ডা. শাহাদাত দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।

খালেদাকে বলতে শোনা যায়, “শাহাদাতকে বলেছি, একটা কাজের দায়িত্ব দিয়েছি। খসরু যেন কোনো কাজে বাধা না দেয়, তাকে এই মেসেজ দেন।”

অন্য প্রান্ত থেকে কিছু বলতে চাইলে খালেদা বেশ জোরের সঙ্গে বলেন, “সে বাধা দিচ্ছে, আপনি তাকে বলে দেন। বলে দেন যে কোনো কাজে বাধা দেবে না। বাধা দিলে আমি ইমিডিয়েটলি রিমুভ করব তাকে।

এক পর্যায়ে অন্য প্রান্তের ব্যক্তির ওপর বিরক্ত হয়ে খালেদা বলেন, “আপনি ডিপ্লোমেট (গোলাম আকবর খন্দকার খালেদার শাসনামলে ওমানের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন) ছিলেন, বাট ইউ ডোন্ট নো হাউ টু টক।

“আপনি ইমিডিয়েটলি খসরুকে বলেন, কোনো বাধা দেবে না, বুঝছেন কি না।”

খালেদা ছাড়াও বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমান, সাদেক হোসেন খোকা, মারুফ কামাল খান ও খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের দুজন কর্মচারীকেও টেলিফোনের অন্যপ্রান্তে নাশকতা চালানোর নির্দেশ দেওয়া সম্বলিত কথোপকথন পাওয়া যাচ্ছে ইউটিউবটির ওই একাউন্টে।

এর আগেও একাউন্টটিতে যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, শমসের মবিন চৌধুরী-তারেক রহমান, এম কে আনোয়ার, জয়নাল আবদীন ফারুকের ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক আলাপের অডিও টেপ আপলোড করা হয়।