জিয়ার ছেলে হওয়ায় কোকোকে হেনস্তা: খালেদা

ছেলের মৃত্যুতে সহমর্মিতা প্রকাশের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেছেন, জিয়া পরিবারের সদস্য হওয়ায় জীবদ্দশায় হেনস্তার শিকার হয়েছিলেন আরাফাত রহমান কোকো।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Jan 2015, 04:09 PM
Updated : 28 Jan 2015, 05:06 PM

আরাফাতকে দাফনের একদিন পর বুধবার সমব্যথীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই অভিযোগ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

প্রয়াত ছেলের জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়ে খালেদা বলেন, “দেশবাসীকে বলব, আমি আপনাদের মাঝে আছি এবং যতদিন বেঁচে আছি, আপনাদের সঙ্গেই থাকব।”

মুদ্রা পাচার মামলায় কারাদণ্ডের সাজা নিয়ে পলাতক অবস্থায় গত ২৪ জানুয়ারি মালয়েশিয়ায় মারা যান আরাফাত। মঙ্গলবার লাশ বাংলাদেশে এনে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়। 

খালেদা বলেন, “মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সেনাবাহিনীর প্রধান, রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের পুত্র হিসেবে আমাদের এই সন্তানটি একটি রাজনৈতিক পরিবারের বেড়ে ওঠা সত্ত্বেও কখনও রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়নি।

“কেবল সে ক্রীড়াঙ্গনে সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রেখেছিল। দুর্ভাগ্যের বিষয় শুধু শহীদ জিয়া পরিবারের একজন সদস্য হওয়ার কারণেই তাকে নানামুখী জুলুম-নির্যাতন, হেনস্তা-অপপ্রচারের শিকার হতে হয়েছে। অসুস্থ হয়ে প্রবাসে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থাতেও সে চরম প্রতিহিংসার বৈরিতা থেকে নিষ্কৃতি পায়নি।”

২০০৭ সালে জরুরি অবস্থার সময় মায়ের সঙ্গে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন আরাফাত। সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি নিয়ে পরের বছর স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমান তিনি।

 তার অনুপস্থিতিতে ২০১১ সালে বাংলাদেশের আদালতে মুদ্রা পাচারের মামলায় ৬ বছর কারাদণ্ড হয় আরাফাতের। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর দুর্নীতি দমন কমিশন মামলাটি করেছিল। 

খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান রাজনীতিতে যুক্ত হলেও সে পথে হাঁটেননি আরাফাত। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার পর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচিত কমিটিকে সরানোর পর বোর্ডের ডেভেলপমেন্ট কমিটির সভাপতি হয়েছিলেন তিনি। 

হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৪৫ বছরে আরাফাতের মৃত্যুতে শোকার্ত খালেদা বলেন, “ভাগ্যের এমনই নির্মম পরিহাস যে, মা হিসেবে আমি প্রায় ৮ বছর ধরে এই অসুস্থ সন্তানটির মুখ দেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছি। অবশেষে আমাকে সন্তানের লাশ গ্রহণ করতে হল। সর্বশক্তিমান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে আমি এর বিচারের ভার অর্পণ করলাম।”

গত শনিবার মালয়েশিয়া থেকে আরাফাতের মৃত্যুর খবর আসার পর এটাই খালেদা জিয়ার প্রথম বিবৃতি। প্রেস সচিব মারুফ কামাল খানের মাধ্যমে এটি এসেছে।

আরাফাতের প্রতি সবার সহমর্মিতা প্রকাশ নিজের ‘হৃদয় স্পর্শ’ করেছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেন মা খালেদা জিয়া।

“কুয়ালালামপুরে কোকোর প্রথম নামাজে জানাজায় অতীতে সকল রেকর্ড ভেঙে যে বিপুল সংখ্যক মানুষের ঢল নেমেছে, আমি তার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। অন্যান্য দেশেও প্রবাসীদের বিপুল অংশগ্রহণে গায়েবানা জানাজা আয়োজনের জন্য আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।”

“দেশে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে কোকোর নামাজে জানাজায় দল-মত নির্বিশেষে সর্বস্তরের লাখ লাখ মানুষ শরিক হয়ে যে অবিস্মরণীয় ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন, তাতে আমি গভীরভাবে অভিভূত।”

বাংলাদেশের জেলা-উপজেলায় আরাফাতের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া মাহফিল ও গায়েবানা জানাজা আয়োজনের জন্য দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানান বিএনপি চেয়ারপারসন।

“জিয়া পরিবারের প্রতি গণমানুষের এই অপরিমেয় ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ আমাকে আরও নতুন করে কৃতজ্ঞতার ঋণে আবদ্ধ করল। বিপুল সংখ্যক মানুষের এই উপস্থিতিতে আমি গভীরভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছি। শোক কাটিয়ে উঠার শক্তি সঞ্চয়ে সর্বস্তরের দেশবাসীর এই অংশগ্রহণ আমাকে অনেক সাহায্য করবে।”

ছেলের মৃত্যুর জন্য সমবেদনা প্রকাশের জন্য বিদেশি কূটনীতিকদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা।