লড়াই ছাড়া নতি স্বীকার নয়: বিএনপি

বিরোধী মতের নেতাকর্মীদের ‘নির্মূলে’ সরকার ‘যুদ্ধে’ নেমেছে মন্তব্য করে বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, লড়াই ছাড়া তারা নতি স্বীকার করবেন না।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Jan 2015, 01:46 PM
Updated : 28 Jan 2015, 02:43 PM

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশ বাহিনীকে ‘যে কোনো উপায়ে’ হরতাল-অবরোধে নাশকতা দমনের নির্দেশ দেওয়ার পর এক বিবৃতিতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রিজভীর এই বক্তব্য এল।

২ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি পরীক্ষার সূচি থাকায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্বেগের মধ্যেই অবরোধের সঙ্গে বৃহস্পতিবার ঢাকাসহ নয় জেলায় হরতাল ডেকেছে দলটি। রাজশাহী, রংপুর ও সিলেট বিভাগেও আলাদাভাবে হরতাল ডাকা হয়েছে।  

বিবৃতিতে রিজভী বলেন, “আমরা স্পষ্টভাষায় বলে দিতে চাই, চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ওপর জীবন সংহারী হানাদারদের আক্রমন বন্ধ না করা হয়, মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে যদি প্রসারিত না করা হয়, গুলি করে হত্যা না থামানো হয়, তাহলে বিরোধী দল লড়াই ব্যতিরেকে নতি স্বীকার করবে না।”

তিনি অভিযোগ করেন, সরকার ‘জ্যেষ্ঠতা ডিঙিয়ে’  আওয়ামী লীগপন্থি পুলিশ ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তাদের নিজ নিজ বিভাগের প্রধান পদে অথবা অন্য গুরুত্বপূর্ণ পদে ‘বসিয়েছে’। এই ‘আনুকূল্য পেয়ে’ তারা এখন বেপরোয়া হয়ে ‘এখতিয়ার বহির্ভূত’ কাজ করছেন।

“বিরোধী আন্দোলন দমাতে তারা সর্বনাশা নির্মূল-যুদ্ধে নেমে পড়েছে। দেশব্যাপী ক্রসফায়ার আর বন্দুকযুদ্ধের মনগড়া কাহিনি তৈরি করে আন্দোলনরত তরুণ নেতা-কর্মীদের মায়ের কোল থেকে ছিনিয়ে নিয়ে এরাই হত্যা করছে।”

সরকার দেশকে ‘জাহান্নামের দ্বারপ্রান্তে’ টেনে নিয়ে এসেছে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, “একটি সুসংবদ্ধ রাষ্ট্রের সব বন্ধনগুলোকে ছিঁড়ে ফেলে বাংলাদেশকে একটি ভঙ্গুর রাষ্ট্রে পরিণত করতে যা যা করা দরকার, তার সব কিছু তারা করে ফেলেছে।”

পুলিশ, র্যা ব ও বিজিবি প্রধান সম্প্রতি হরতাল-অবরোধে নাশকতা ঠেকাতে যে বক্তব্য দিয়েছেন তারও সমালোচনা করেন বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব।

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের হুমকি-ধামকির সাথে সুর মিলিয়ে তারা কথা বলছেন। আবার কেউ গণমানুষের নেতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতির সবক দিচ্ছেন। ঔদ্ধত্য ও ধৃষ্টতা কত চরম সীমায় গিয়ে পৌঁছালে তিন তিন বারের প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে এক্তিয়ার বহির্ভূত কথা বলতে পারেন কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্তাব্যক্তি!”

রাজপথে ‘মানুষের ধেয়ে আসা স্রোতকে’ আটকাতে না পেরে সরকারই ‘পেট্রোল বোমা ছুড়ে মানুষকে পুড়িয়ে মারার নাশকতার মরণখেলায়’ মেতেছে বলে অভিযোগ করেন রিজভী।

গত ৫ জানুয়ারি থেকে চলমান অবারোধে নাশকতা ও সহিংসতায় এ পর্যন্ত অন্তত ৩৮ জনের মৃত্য হয়েছে, যার হুকুমদাতা হিসাবে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে দায়ী করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তাকে হুকুমের আসামি করে ইতোমধ্যে তিনটি মামলাও করেছে পুলিশ।   

আন্দোলন থেকে জনগণের ‍দৃষ্টি ভিন্ন খাতে সরাতে সরকার ‘এই অপকৌশল নিয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন রিজভী।

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “তথ্য মন্ত্রী বলেছেন, বেগম জিয়ার জন্য নাকি কাশিমপুর কারাগারে জায়গা করে রাখা হয়েছে। ইনুরা এরকম গ্রেপ্তার ও বিচারের হুমকি দিয়ে দেশকে চরম সংঘাতের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। সংকটকে তারা আরও ঘনীভূত করতে চাচ্ছেন।”

জার্মানির ‘নাৎসি সহযোগীদের’ মতো তাদেরও একসময় বিচারের মুখোমুখী হতে হবে বলে হুঁশিয়ার করেন রিজভী। এ জন্য তিনি দেশের কারাগারগুলোর সংস্কার করে রাখারও পরামর্শ দেন।