জরুরি অবস্থার সময়ে দায়ের করা ওই মামলা জরুরি ক্ষমতা আইনের অন্তর্ভুক্ত করার বৈধতা নিয়ে রুলের শুনানি করতে দুর্নীতি দমন কমিশনের আবেদন আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি হাই কোর্টের কার্যতালিকায় রাখতে বলেছে আদালত।
এছাড়া খালেদার আরেক আবেদনে গ্যাটকো মামলার কার্যক্রমে দেওয়া স্থগিতাদেশের বিষয়ে শুনানির বিষয়টি বৃহস্পতিবার হাই কোর্টের কার্যতালিকায় আসতে পারে বলে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
ওই রুলের শুনানি করতে দুদকের পক্ষ থেকে আবেদন করা হলে বিষয়টি বুধবার হাই কোর্টের বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের বেঞ্চের কার্যতালিকায় আসে। কিন্তু খালেদার আইনজীবী মাহবুবউদ্দিন খোকন সময়ের আবেদন করায় বিচারক বিষয়টি ৪ ফেব্রুয়ারি আবারও কার্যতালিকায় রাখতে নির্দেশ দেন।
প্রায় সাত বছর পর এমন এক সময়ে দুদক এই মামলা সচল করার উদ্যোগ নিল, যখন চলমান অবরোধে নাশকতার ঘটনায় বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে একাধিক মামলা হয়েছে। জিয়া এতিমখানা ও দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় চলছে সাক্ষ্যগ্রহণ।
এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি করে ২০০৮ সালের ১৫ জুলাই বিচারপতি খাদেমুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মাশুক হোসেন আহমেদের হাই কোর্ট বেঞ্চ রুল জারির মাধ্যমে এ মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেছিল।
দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ পরিচালক গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর সাবেক চার দলীয় জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে তেঁজগাও থানায় এ মামলা দায়ের করেন।
ওই মামলা হওয়ার পরদিন খালেদা জিয়া ও কোকোকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৮ সেপ্টেম্বর মামলাটি অন্তর্ভুক্ত করা হয় জরুরি ক্ষমতা আইনে। পরের বছর ১৩ মে খালেদা জিয়াসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
এতে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গ্যাটকোকে ঢাকার কমলাপুর আইসিডি ও চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের কাজ পাইয়ে দিয়ে রাষ্ট্রের ১৪ কোটি ৫৬ লাখ ৩৭ হাজার ৬১৬ টাকার ক্ষতি করেছেন।
মামলাটি জরুরি ক্ষমতা আইনের অন্তর্ভুক্ত করার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এবং বিচারিক আদালতে মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে ২০০৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর হাই কোর্টে আলাদা দুটি রিট আবেদন করেন খালেদা জিয়া ও আরাফাত রহমান কোকো।
এর তিন দিন পর ওই খালেদা ও কোকোর বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল দেয় হাই কোর্ট। মামলাটি জরুরি ক্ষমতা আইনের অন্তর্ভুক্ত করা কেন ‘বেআইনি ও কর্তৃত্ব বহির্ভূত’ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় ওই রুলে। তবে হাই কোর্টের দেওয়া স্থগিতাদেশ পরে আপিল বিভাগে বাতিল হয়ে যায়।
দুদক আইনে গ্যাটকো মামলা দায়েরের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৮ সালে আরেকটি রিট আবেদন করেন খালেদা জিয়া। তার আবেদনে হাই কোর্ট আবারও মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দেয়।
বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের বেঞ্চের কার্যতালিকায় দুদকের আবেদন শুনানির জন্য রাখা হয়েছে। শুনানির তারিখ চেয়ে আগের দিন দুদকের পক্ষে এ আবেদন করা হয়েছিল।
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, জরুরি ক্ষমতা বিধিমালায় মামলাটির অন্তর্ভুক্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে যে রিট হয়েছিল, তাতে হাই কোর্টের দেওয়া স্থগিতাদেশ আপিল বিভাগ বাতিল করে দেয়।
“তবে এ বিষয়ে রুল রয়েছে। আমরা গতকাল এই রুল শুনানির আবেদন করেছি। খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের আবেদনে হাই কোর্ট এ আবেদন ৪ ফেব্রুয়ারি কার্যতালিকায় রাখার কথা জানিয়েছে।”
অন্যদিকে ২০০৮ সালে হাই কোর্টের দেওয়া স্থগিতাদেশ এখনো বহাল রয়েছে, যা এদিন আদালতের নজরে আনা হয়েছে বলে খুরশীদ আলম খান জানান।
তিনি বলেন, “এটি আগামীকাল কার্যতালিকায় আসতে পারে।”
এ মামলার অন্যতম আসামি আরাফাত রহমান কোকো গত ২৪ জানুয়ারি হৃদরোগে মারা যান, যিনি মুদ্রা পাচারের এক মামলায় ছয় বছরের সাজা মাথায় নিয়ে মালয়েশিয়ায় পলাতক ছিলেন।