খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে মামলা

ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে বাসে পেট্রোলবোমা ছুড়ে আগুন দেওয়ার ঘটনায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে মামলা করেছে পুলিশ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Jan 2015, 04:08 AM
Updated : 25 Jan 2015, 11:32 AM

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবরোধের মধ্যে নাশকতার জন্য খালেদা জিয়াকে দায়ী করে তাকে ‘হুকুমের আসামি’ করার পক্ষে মত দেওয়ার দুই দিনের মাথায় এ মামলা হল।

এর আগে বিএনপির অধিকাংশ জ্যেষ্ঠ নেতার নামে বিভিন্ন সময়ে নাশকতার মামলা হলেও দলটির চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে এ ধরনের মামলা এই প্রথম।

দুর্নীতির দুই মামলায় অভিযুক্ত খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সম্প্রতি ধর্মীয় উসকানির অভিযোগেরও একটি মামলা হয়।

যাত্রাবাড়ী থানার উপ পরিদর্শক কে এম নুরুজ্জামান শনিবার বিকালে যে দুটি মামলা করেছেন, তাতে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের পরিকল্পনাকারী হিসাবে বিএনপির ১৮ নেতার নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়া পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী হিসাবে যাত্রাবাড়ী বিএনপির ৫০ নেতাকর্মীকে আসামি করেছেন তিনি।

এর মধ্যে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫/২৫ (ঘ) ধারায় করা ৫৮ নম্বর মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতমূলক অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।

আর ৫৯ নম্বর মামলাটি হয়েছে দণ্ডবিধির ১৪৩, ৩২৬, ৩০৭, ১১৪, ৩৪ ধারায়, যাতে অবৈধভাবে বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহার, হত্যা চেষ্টা ও বেআইনি জমায়েতের অভিযোগ রয়েছে।

গত শুক্রবার রাতে যাত্রাবাড়ীর কাঠেরপুল এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোল বোমা ছোড়া হলে ৩১ জন দগ্ধ হন।

দগ্ধদের মধ্যে অন্তত সাতজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন।

এসআই নুরুজ্জামান বলেন, “খালেদা জিয়াকে মামলায় হুকুমের আসামি করা হয়েছে।”

এজাহারে বলা হয়েছে, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গত ৫ জানুয়ারি দেশব্যাপী অবরোধের ডাক দেন এবং সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত দেশে অচলাবস্থা নিশ্চিত করতে নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেন। তার ওই নির্দেশেই আসামিরা বাসে নাশকতা ঘটান।

বাসে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের পরিকল্পনাকারী হিসাবে বিএনপির যে ১৮ নেতার নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার, রফিকুল ইসলাম মিয়া, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন, শওকত মাহমুদ, বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস,ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান,যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ, বরকতউল্লা বুলু, আমানউল্লাহ আমান, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদিকা শিরিন সুলতানা,বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান,দলের প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান, শামসুদ্দিন দিদার, ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব হাবিবুন্নবী খান সোহেল,শরফুদ্দিন সফু,ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজিজুল বারী হেলাল,ঢাকার সাবেক কমিশনার কাইয়ুম ও লতিফ।

তাদের করা ‘নাশকতার পরিকল্পনা’ বাস্তবায়নের অভিযোগ আনা হয়েছে যাত্রাবাড়ী এলাকার ৫০ বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে, যাতে প্রথমেই আছে ঢাকা মহানগর বিএনপির সমবায়বিষয়ক সম্পাদক সালাউদ্দিন আহমেদের নাম।

এই আসামিরা ছাড়াও অজ্ঞাতপরিচয় কিছু  ব্যক্তি এবং জামায়াত-বিএনপি জোটের নেতা-কর্মীরা নাশকতায় জড়িত বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, যাত্রাবাড়ীতে বাসে নাশকতার ঘটনায় ৩১ জন দগ্ধ হওয়ার পাশাপাশি গাড়িটি পুড়ে পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

নির্বাচনের বর্ষপূর্তির দিনে ঢাকায় সমাবেশ করতে না পেরে পুলিশের ঘেরাওয়ের মধ্যে নিজের গুশলানের কার্যালয় থেকেই সারা দেশে লাগাতার এই অবরোধের ঘোষণা দেন বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া।  

এই অবরোধের মধ্যে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থানে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও বোমাবাজি চলছে। এই নাশকতা ও সহিংসতায় এ পর্যন্ত ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, দগ্ধ হয়েছে বহু মানুষ।  

এই প্রেক্ষাপটে গত বুধবার সংসদে অধিবেশনে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল- দুই পক্ষ থেকেই খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেন, পুড়িয়ে মানুষ হত্যার জন্য খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করা যুক্তিযুক্ত।

এই প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বৃহস্পতিবার বলেন, খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে ‘আইনি প্রক্রিয়া’ দেখা হচ্ছে।

তবে এর সমালোচনা করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব  রুহুল কবীর রিজভী বলেছেন, খালেদা জিয়াকে ‘রাজনীতি থেকে সরাতে’ সরকার তাকে গ্রেপ্তারের চক্রান্ত করছে।