‘এটা ভদ্রোচিত হয়নি’

দেখা করতে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে যাওয়া শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে দেওয়াকে ‘অভদ্রজনোচিত ও শিষ্টাচার বর্হ্ভূত’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী।

সুমন মাহমুদও রিয়াজুল বাশারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Jan 2015, 03:26 PM
Updated : 24 Jan 2015, 03:37 PM

ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুতে খালেদা জিয়াকে সান্ত্বনা দিতে শনিবার রাতে বিএনপি চেয়াপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু ভেতর থেকে বন্ধ ফটক থেকেই তাকে ফিরে আসতে হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গী ইকবাল সোবহান সাংবাদিকদের বলেন,  “তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়, একজন মা হিসেবে, একজন দরদী মানুষ হিসেবে, একজন নেত্রী হিসেবে আরেকজন ছেলেহারা মাকে সান্ত্বনা দিতে এসেছিলেন। কিছুক্ষণ দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলেন।

“কিন্তু দরজা বন্ধ থাকায় ফিরে গেছেন। আপনারা দেখেছেন, দরজাটি খোলা হয়নি। এটা অভদ্রজনোচিত, রাজনৈতিক শিষ্টাচার নয়, অমানবিকও।”

প্রধানমন্ত্রী যাওয়ার কিছুক্ষণ আগেই বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস কার্যালয়ের ভেতরে সাংবাদিকদের বলেন, তার নেত্রী বিমর্ষ অবস্থায় আছেন। তাকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে।

দেখা করতে ইচ্ছা জানানোয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানালেও তা এখন সম্ভবপর হচ্ছে না বলে দাবি করেন তিনি।

ইকবাল সোবহান বলেন, “বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো নেতা এসে যদি প্রধানমন্ত্রীকে কিছু বলতেন, তাহলেও শিষ্টাচার দেখানো হত, সেটাও তারা দেখাননি।”

প্রধানমন্ত্রী আসার খবর কি আগে জানানো হয়েছিল- সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, “আপনার বাড়ির সামনে প্রধানমন্ত্রী যদি আসেন, খবর দিয়ে এসেছেন কি আসেননি, সেটা বড় নয়। বড় কথা হল, প্রধানমন্ত্রী এসেছেন।

“মানবিক বিষয় চিন্তা করেই প্রধানমন্ত্রী সকল প্রটোকল ভেঙে তাকে সান্ত্বনা দিতে এসেছিলেন, উনি গাড়ি থেকে নেমেছিলেনও,  কিন্তু উনাকে ফিরে যেতে হল।”

শনিবার দুপুরে মালয়েশিয়ায় আরাফাতের মৃত্যুর খবরের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যান বিএনপিসহ ২০ দলের অনেক নেতা। পরিবারের সদস্য ও শুভাকাঙ্ক্ষীরাও যান তার সঙ্গে দেখা করতে।

প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে রওনা হওয়ার পরপরই শিমুল বিশ্বাস দেখা করার সম্ভব নয় বলে জানান। তখন কার্যালয়ের ভেতরে থাকা বিএনপিকর্মীরা হাততালি দিয়ে এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায়।

বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের মূল ফটকের ভেতরে দুটি গাড়ি আড়াআড়ি রাখা ছিল। আগে থেকে রাখা ওই গাড়িগুলো প্রধানমন্ত্রী যাওয়ার পর খবর শোনার পরও সরানো হয়নি।

সাড়ে ৮টার কিছু সময় পর প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর গুলশান ২ নম্বরের ৩৬ নম্বর সড়কে খালেদার কার্যালয়ের সামনে পৌঁছায়।

গাড়ি থেকে নেমে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আব্দুস সোজহান শিকদার, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিলসহ কয়েকজন ফটকের সামনে যান।

ফটকটি ভেতর থেকে বন্ধ দেখে শাকিল ফিরে প্রধানমন্ত্রীকে জানাতে আসেন। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়িয়ে থাকেন।

শিমুল বিশ্বাস ভেতর থেকে বলেন, “তোফায়েল ভাই, ম্যাডাম তো বেশ বিমর্ষ, তিনি অসুস্থও হয়ে পড়েছেন। আমরা তাকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছি। উনার ওখানে তো এখন আমরাও যেতে পারছি না। উনি তো দেখা করতে পারছি না।”

ওই সময় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েকজন সদস্যকে ফটকে ধাক্কা দিয়ে তা বন্ধ বলে নিশ্চিত হতে দেখা যায়।

এরপর শাকিল ফটকের সামনে এসে শিমুল বিশ্বাসকে ‘থ্যাংক ইউ’ বলে ফিরে যান। তখন প্রধানমন্ত্রী উঠে পড়েন তার গাড়িতে। খালেদার কার্যালয় থেকে ফিরে যায় প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর।