এই সময়ই আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর খবর নিয়ে দুই ভাইয়ের স্ত্রী নাসরিন সাঈদ ও কানিজ ফাতেমা ওই কার্যালয়ের দোতলায় ওঠেন।
দোতলায় নিজের চেম্বারে গত ৩ জানুয়ারি থেকে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। বেলা আড়াইটার দিকে সরাসরি সেখানে উঠে যান শামীম এস্কান্দার ও প্রয়াত সাঈদ এস্কান্দারের স্ত্রীরা।
বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, দুই ভাইয়ের বউয়ের কাছ থেকে ছেলের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে এক রকম নির্বাক হয়ে কেঁদে ফেলেন খালেদা জিয়া। কান্নায় তিনি কোনো কথা বলতে পারেননি।
এরপর লন্ডন থেকেও টেলিফোন আসে খালেদা জিয়ার কাছে। বড় ছেলে তারেক রহমান রয়েছেন সেখানে।
জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত শনিবার দুপুরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৪৫ বছর।
স্ত্রী সৈয়দ শর্মিলা রহমান সিঁথি, দুই মেয়ে জাফিয়া রহমান ও জাহিয়া রহমানকে নিয়ে কুয়ালালামপুরে একটি বাড়ি ভাড়া করে থাকছিলেন আরাফাত।
জরুরি অবস্থার সময় গ্রেপ্তার হয়ে এক বছর কারাগারে থাকার পর ২০০৮ সালের ১৭ জুলাই মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড গিয়েছিলেন আরাফাত।
সেখান থেকে তিনি মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান। অন্যদিকে মুদ্রা পাচার মামলায় বাংলাদেশের আদালতে ২০১১ সালে তার ৬ বছর কারাদণ্ড হয়; তবে বিএনপির দাবি, এই মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
২০১৩ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময়ে খালেদা জিয়া ব্যাংককে যাত্রাবিরতি দিয়ে ছোট ছেলেকে দেখতে গিয়েছিলেন। সেটাই ছিল মায়ের সঙ্গে তার শেষ সাক্ষাৎ।
আরাফাতের দাফনের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে বিকালে সাংবাদিকদের জানান বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান।
সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম আশরাফউদ্দিন নিজান জানান, আরাফাতের মরদেহ মালইয়া ইউনির্ভাসিটি হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে।
রোববার জোহরের নামাজের পর কুয়ালালামপুরে নিগারা মসজিদে জানাজা হবে বলে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার জানিয়েছেন।
আরাফাতের মৃত্যুর সংবাদের পর গুলশানে খালেদার কার্যালয়ে ছুটে যান নিকটাত্মীয়রা। আরাফাতের শাশুড়িসহ তাদের পরিবারের সদস্যরাও যান সেখানে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, মাহবুবুর রহমান, রফিকুল ইসলাম মিয়া, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় নেতা গিয়াস কাদের চৌধুরী যান দলীয় চেয়ারপারসনকে সান্ত্বনা জানাতে।
সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, এলডিপির সভাপতি অলি আহমদ ও তার স্ত্রী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সদরুল আমিন, সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্ত্রী রাহাত আরা বেগম, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী ফারহাৎ কাদের চৌধুরী ও ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী যান সেখানে।
আরাফাতের মৃত্যু সংবাদে গুলশানে কার্যালয়ে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান বলেন, “আমার বিশ্বাসই হচ্ছিল না। এরকম একটা সংবাদ আমি শুনব, এরকম প্রস্ততি ছিল না।”