খালেদার জনসভাস্থলে নিষেধাজ্ঞা, হরতাল

বিএনপি বা ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি ঘোষণায় উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে গাজীপুরে খালেদা জিয়ার সমাবেশস্থলে প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারির পর হরতাল ডেকেছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Dec 2014, 07:46 PM
Updated : 27 Dec 2014, 00:47 AM

খালেদা জিয়ার জনসভা ‘বানচাল’ করতেই সরকার ‘পুলিশ ও ছাত্রলীগকে দিয়ে নাটক সাজিয়ে’ এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বলে দলটির অভিযোগ।

শুক্রবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটি ও জ্যেষ্ঠ নেতাদের বৈঠকের পর গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি একেএম ফজলুল হক শনিবার গাজীপুর জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতালের এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

একইসঙ্গে সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে বিএনপির পক্ষ থেকে।

এদিকে হরতালে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গাজীপুরে পাঁচ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে বলে জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ জানান।

নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করার আগে বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়ার বিভিন্ন জেলা সফরের অংশ হিসেবে গাজীপুরে এই জনসভা করার ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি।

এরপর তারেক রহমানের এক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে এই জনসভা ঠেকানোর ঘোষণা দিয়ে বদরে আলম কলেজ মাঠে একই দিন সমাবেশের কর্মসূচি দেয় ছাত্রলীগ।

মঙ্গলবার রাতে কলেজ মাঠে বিএনপির লাগানো ব্যানার-ফেস্টুন ভাংচুর করে তাতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। মাঠ দখলে নিয়ে ছাত্রলীগ কর্মীরা বৃহস্পতিবার থেকে সেখানে দফায় দফায় মিছিল করে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কলেজ মাঠ ও এর আশপাশের এলাকায় মোতায়েন করা হয় পাঁচ প্লাটুন পুলিশ।

এই পরিস্থিতিতে জেলা সার্কিট হাউসে আইন-শৃঙ্খলা কমিটির এক সভায় নিষেধাজ্ঞা জারির সিদ্ধান্ত আসে।

জেলার পুলিশ সুপার হারুনুর রশিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শুক্রবার বেলা ২টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত গাজীপুরের বদরে আলম কলেজ মাঠ ও আশেপাশের এলাকায় সব ধরনের সভা সমাবেশ মিছিল নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

“যেহেতু তারা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেন নাই, সেহেতু আমরা কাউকেই অ্যালাও করছি না।”

জেলা প্রশাসক (ডিসি) নূরুল ইসলাম বলেন, “বিএনপি যেখানেই সমাবেশ করার চেষ্টা করবে সেখানেই তাদের প্রতিরোধ করার ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রলীগ। তেমন হলে আমাদের অন্য জায়গায়ও ১৪৪ ধারা জারি করতে হবে।”     

এর ঘণ্টাখানেক আগেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, জনসভা হবে এবং তারা শনিবার ‘অবশ্যই’ গাজীপুরে যাবেন।

কিন্তু নিষেধাজ্ঞা জারির পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ফখরুল বলেন, “শনিবার বেলা ২টায় গাজীপুরে ২০ দলীয় জোটের জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ভাষণ দেওয়া কথা। এই জনসভা বানচাল করতেই সরকার পূর্বপরিকল্পনার অংশ হিসেবে ১৪৪ ধারা জারি করেছে।”

রাতে গুলশানে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিয়ে খালেদা জিয়ার বৈঠক শেষে কর্মসূচি ঘোষণার সময়ও গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক একই কথা বলেন।

তিনি বলেন, “স্থানীয় প্রশাসনের এরকম বেআইনি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে জেলা ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে শনিবার গাজীপুর সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করছি।”

এ সময় পাশে দাঁড়ানো ফখরুল জানান, খালেদা জিয়ার আর শনিবার গাজীপুরে যাওয়া হচ্ছে না।

এদিকে হরতালের আগে গাজীপুর জেলা ও টঙ্গী থানা শ্রমিকদলের সভাপতি সালাহ উদ্দিন সরকারের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে লাঠি ও ব্যানার উদ্ধার করা হয় বলে টঙ্গী থানার ওসি কাজী ইসমাইল হোসেন জানান। জেলার অন্যান্য স্থানে অভিযান চালিয়ে আটক করা হয় আরো তিন বিএনপি কর্মীকে।

রাত ১১টার দিকে টঙ্গী থানা বিএনপি অফিসে আগুন দেওয়া হয়। এ ঘটনার জন্য ছাত্রলীগ ও যুবলীগকর্মীদের দায়ী করেছে বিএনপি।

জেলার পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা অনেকবার চেষ্টা করেছিলাম, ভেবেছিলাম দুই পক্ষ সমঝোতায় আসবে। যেহেতু তারা সমঝোতায় আসতে পারেননি এবং একই স্থানে সভা করার চেষ্টা করছেন, সে কারণে আইন-শৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কা রয়েছে।

“এটাতো আমরা পুলিশ প্রশাসন হতে দিতে পারি না। এ কারণে সবার সাথে কথা বলে আমরা চিন্তা করেছি যে এখানে জনসভা করতে দেওয়া ঠিক হবে না। আগামীকাল এখানে কোনো সমাবেশ হবে না।”