এমপি ছবি বিশ্বাসের মাথা ফাটিয়ে গাড়িতে আগুন

বকশীবাজারে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের সংঘর্ষের মধ্যে ঢাকা মেডিকেলের সামনে হামলায় আহত হয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য ছবি বিশ্বাস।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Dec 2014, 07:12 AM
Updated : 24 Dec 2014, 07:12 AM

হামলাকারীরা তার গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। লাঠির আঘাতে তিনি নিজে মাথা ও কানে আঘাত পেয়েছেন।

নেত্রকোনা-১ আসনের এই সংসদ সদস্য হাসপাতালের একটি কেবিনে ভর্তি হয়েছেন এবং নিউরো সার্জারি বিভাগের ডা. রাজিউল হকের অধীনে চিকিৎসাধীন বলে হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মোজাম্মেল হক জানান।

তিনি বলেন, “বাইরে থেকে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে বিএনপির কিছু নেতাকর্মী হাসপাতালে ঢুকে পড়ে। পরে তারাই সংসদ সদস্যের গাড়িতে হামলা চালিয়ে তাকে আহত করে।”

এ ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করে তাৎক্ষণিকভাবে দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন আরও অন্তত ছয়জন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের অপরাধ বিষয়ক প্রধান প্রতিবেদক লিটন হায়দার জানান, বুধবার দুপুরে আদালতে বিএনপি চেয়ারপরসন খালেদা জিয়ার হাজিরাকে কেন্দ্র করে বকশীবাজারে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সংঘর্ষের সময় মেডিকেল এলাকাতেও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিএনপি ও ছাত্রদলের বেশকিছু নেতাকর্মী আহত হয়ে ও ধাওয়া খেয়ে হাসপাতালে আসেন।

ওই সময়ই জরুরি বিভাগের ফটকের সামনে আক্রান্ত হয় আওয়ামী লীগের এমপি ছবি বিশ্বাসের গাড়ি।    

সাংসদের গাড়ির চালক মোহাম্মদ হাসনাইন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদক কামাল তালুকদারকে জানান, তারা গাড়ি নিয়ে পাবলিক লাইব্রেরি থেকে হাসপাতালে এসেছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসার জন্য।

“গাড়িতে স্যারসহ (সাংসদ) আটজন ছিলেন। তাদের মধ্যে অসুস্থ একজন ছিলেন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ফটক দিয়ে ভেতরে ঢোকার পর ঝামেলা দেখে স্যার গাড়ি ঘুরিয়ে নিতে বলেন। কিন্তু ফটক দিয়ে বের হওয়ার পরপরই ৩০-৪০ জন যুবক লাঠি নিয়ে গাড়ির ওপর হামলা চালায়।”

তারা গাড়ি ভাংচুর ও চালককে মারধর শুরু করলে অন্য আরোহীরা দ্রুত নেমে সরে যান। তারপর হামলাকারীরা গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।

হাসনাইন জানান, হামলার পর পুলিশ, সংবাদকর্মী ও হাসপাতালের কর্মীরা এগিয়ে এলে হামলাকারীরা সটকে পড়ে। পরে সাংসদকে হাসপাতালের ভেতরে পুলিশ ফাঁড়িতে নেওয়া হয়।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে প্রায় আধা ঘণ্টা পর তাকে জরুরি বিভাগে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

ছবি বিশ্বাসের আলোকচিত্রটি তুলেছেন লিটন হায়দার

হামলার শিকার ছবি বিশ্বাস বলেন, “আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। আরেকজন মুক্তিযোদ্ধাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলাম। এখন হামলার শিকার হয়ে নিজেকেই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।”

ছবি বিশ্বাসের গাড়িতে হামলার বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এই হামলার দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। যেসব গাড়িতে আগুন ধরানো হয়েছে, এটা তারা (ক্ষমতাসীন) পুড়িয়েছে কি না, তা তদন্ত করে দেখতে হবে।”

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, বাইরে পুলিশ ও ছাত্রলীগের ধাওয়া খেয়ে হাসপাতালে আসা বেশ কিছু ছাত্রদলকর্মী ওই সময় ছড়িয়ে ছিটিয়ে জরুরি বিভাগের আশেপাশে অবস্থান করছিলেন।

জাতীয় সংসদের স্টিকার লাগানো গাড়িটি জরুরি বিভাগ থেকে বেরিয়ে ২০-২৫ গজ এগোনোর পরপরই হামলার মুখে পড়ে।

গাড়িতে হামলার পর হাসপাতালের কিছু কর্মীও লাঠিসোঁটা নিয়ে এগিয়ে যায় এবং হামলাকারীদের প্রতিরোধ করে। এ সময় তাদের পিটুনিতে ৮-১০ জন আহত হন। 

হামলাকারী সন্দেহে কয়েকজনকে ধরে পুলিশেও সোপর্দ করেন হাসপাতালের কর্মীরা।

চকবাজার থানার ওসি আজিজুল হক জানান, এ ঘটনায় তারা ছয়জনকে আটক করেছেন।

এদিকে গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় গ্রেপ্তার আফজাল হোসেন (২২) নামের এক যুবককে দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের হাকিম সারোয়ার আলম।

আফজালের বাবা আসবাব ব্যবসায়ী আবুল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তার ছেলে যাত্রাবাড়ীর দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।

বাবার দাবি, আফজাল রাজনীতিতে জড়িত নয়। বন্ধুর সঙ্গে সে ঢাকা মেডিকেল এলাকায় গিয়েছিল।