দফায় দফায় সংঘর্ষ, বকশীবাজার রণক্ষেত্র

দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরাকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বকশীবাজার থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ পর্যন্ত এলাকায় বিএনপি কর্মীদের সঙ্গে সরকার সমর্থকদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Dec 2014, 06:41 AM
Updated : 24 Dec 2014, 06:18 PM

লাঠি নিয়ে দুই পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ব্যাপক ঢিল ছোড়াছুড়ি, পুলিশের টিয়ার গ্যাস ও লাঠিপেটার মধ্যে দিয়েই পুরান ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বিশেষ জজ আদালতের অস্থায়ী এজলাসে এসে হাজিরা দিয়ে যান বিএনপি চেয়ারপারসন।

বুধবার বেলা ১২টা থেকে সোয়া ১টা পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষে দুই পক্ষের অর্ধশতাধিক লোক আহত হন। আট থেকে দশজনকে রাস্তায় ফেলে লাঠি ও বাঁশ দিয়ে পেটাতেও দেখেছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদক কামাল তালুকদার।

এই সংঘর্ষের মধ্যে ঢাকা মেডিকেলের সামনে হামলার শিকার হয়েছেন নেত্রকোনার সাংসদ ছবি বিশ্বাস। তার গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে হামলাকারীরা, আহত হয়েছেন তিনি নিজেও।

সংঘর্ষে আহত অন্তত ২৫ জন বিএনপিকর্মী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে মেডিকেল ফাঁড়ি পুলিশের পরিদর্শক মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন।

মহানগর পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার মফিজ উদ্দিন আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাটি ঘটে যায়। পুলিশ প্রথমে কিছু বুঝতে পারেনি। তবে পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।”

হঠাৎ সংঘর্ষ বাঁধার কারণ খতিয়ে দেখা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

সংঘর্ষস্থল থেকে ছয়জনকে আটকের খবর দুপুরে জানিয়েছিলেন চকবাজার থানার ওসি আজিজুল হক। রাতে মোট ৫৪ জনকে আটকের তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার সাঈদুর রহমান।

পেটানো হচ্ছে এক বিএনপিকর্মীকে

 

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার শুনানির দিন থাকায় বেলা ১১টা ২৬ মিনিটে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গুলশানের বাসা থেকে আদালতের পথে রওনা হন। তার আসার খবরে বিএনপি ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সকাল থেকেই বকশীবাজার থেকে ফজলে রাব্বি হল পর্যন্ত রাস্তা আটকে মিছিল শুরু করে।

বিশৃঙ্খলার আশঙ্কায় সকাল থেকেই বকশীবাজার, উর্দু রোড মোড়, ঢাকা মেডিকেলের ফজলে রাব্বি হল এবং আলিয়া মাদ্রাসার প্রবেশ পথে ব্যারিকেড দেয় পুলিশ।

এছাড়া ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পূর্ব পাশের সড়কে ঢোকার মুখে কভার্ড ভ্যান ও হিউম্যান হলার রেখে এবং রাস্তায় বাঁশ ফেলে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।

সাঁজোয়া যান (এপিসি), জলকামান নিয়ে আদালতের সামনে অবস্থান নেন বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য; পাশাপাশি র‌্যাব সদস্যদেরও টহলে দেখা যায়।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত কামাল তালুকদার জানান, বেলা ১২টার দিকে পলাশীর দিক থেকে কয়েকজন যুবককে দৌড়ে বকশীবাজারের দিকে আসতে দেখা যায়। এ সময় বকশীবাজার মোড়ে অবস্থান নেওয়া বিএনপিকর্মীরা মিছিল নিয়ে পলাশীর দিকে রওয়া হন।

বিএনপির মিছিলটি কিছু দূর যাওয়ার পর সরকার সমর্থকদের সঙ্গে তাদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। দুই পক্ষেই বৃষ্টির মতো ঢিল ছোড়াছুড়ি চলে। সড়ক দ্বীপের গাছ ও বেড়া ভেঙে লাঠি বানিয়ে দুই পক্ষ মারামারিতে লিপ্ত হয়।  

এ সময় ফজলে রাব্বি হলের সামনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ অবস্থান থাকলেও তাদের কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।

মিনিট ১৫ পর সরকার সমর্থকদের ধাওয়া খেয়ে বিএনপিকর্মীরা চানখারপুলের দিকে চলে যান। এ সময় বকশীবাজারে চার রাস্তার মোড়ে আট থেকে দশজনকে ধরে রাস্তায় ফেলে পেটানো হয়। অনেক বিএনপি সমর্থককে দৌড়ে পুলিশের দিকেও পালাতে দেখা যায়।

বিএনপির সমর্থকরা চারখারপুলের দিকে চলে যাওয়ার সময় পুলিশ বকশীবাজার মোড়ে অবস্থান নেয় এবং টিয়ার শেল ছুড়তে শুরু করে। আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ কর্মীরাও এ সময় পলাশীর দিকে চলে যায়।

আদালতে যাচ্ছে খালেদার জিয়ার গাড়ি

আদালত প্রাঙ্গণে খালেদা জিয়া

অল্প সময়ের জন্য পরিস্থিতি শান্ত হলে এই ফাঁকে ওই এলাকা দিয়ে বকশীবাজারে আদালতের দিকে অগ্রসর হয় খালেদা জিয়ার গাড়ি বহর। এ সময় বিএনপির একদল কর্মীকে লাঠি হাতে গাড়ির সামনে সামনে এগোতে দেখা যায়। তাকে নিরাপত্তা দিতে সামনে পেছনে পুলিশের গাড়িও ছিল।

খালেদা জিয়ার গাড়ি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আদালতের ফটকে পৌঁছালে বিএনপি ও ছাত্রদল কর্মীরাও ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ আবার লাঠিপেটা করে শুরু করলে তারা দূরে সরে গিয়ে ঢিল ছুড়তে থাকে। 

আদালতের সামনে গাড়ি থেকে নেমে বিএনপি চেয়ারপারসন এজলাসে চলে যান।

সংক্ষিপ্ত শুনানি শেষে ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের নতুন বিচারক আবু আহমেদ জমাদার খালেদার সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে বাদীর সাক্ষ্য শোনার জন্য ৭ জানুয়ারি নতুন তারিখ রাখেন।

এদিকে আদালতে শুনানি চলার মধ্যেই চানখারপুলের পশ্চিম পাশে বিএনপি কর্মীরা একটি মোটর সাইকেল পুড়িয়ে দেয় এবং রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে।

তারা ঢাকা মেডিকেলের ফজলে রাব্বি হলের দিকে এগোলে পুলিশ সাঁজোয়া যান নিয়ে তাদের তাড়া করে সরিয়ে দেয়। জল কামান থেকে পানি ছিটিয়ে নেভানো হয় মোটর সাইকেলের আগুন।

পুলিশের টিয়ার শেলের গ্যাস এ সময় মেডিকেলেও ছড়িয়ে পড়ে। রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায় জুতা, স্যান্ডেল।

পুড়ছে ছবি বিশ্বাসের গাড়ি

এই গণ্ডগোলের মধ্যে  ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের ফটকে হামলা হয় নেত্রকোনার সরকারদলীয় সাংসদ ছবি বিশ্বাসের গাড়িতে।

৪০-৫০ জন হামলাকারী লঠিসোটা নিয়ে গাড়ি ভাংচুর করে এবং তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে মাথায় আঘাত লেগে আহত হন আওয়ামী লীগ নেতা ছবি বিশ্বাস।

রক্তাক্ত অবস্থায় তিনি পুলিশের সহায়তা চাইলে পুলিশ তাকে ভেতরে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক লিটন হায়দার জানান।

ছবি বিশ্বাস বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে এসেছিলেন তিনি। এখন হামলার শিকার হয়ে নিজেকেই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।

এই ঘণ্টাখানেক সময়ে বকশীবাজার মোড়, নাজিমউদ্দিন রোড, পলাশী মোড়, চান খাঁর পুল মোড়, গুলিস্থান ও ঢাকা কলেজের দিকে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। বেশ কিছু গাড়িও ভাংচুর করা হয়।

তবে শুনানি শেষে বেলা দেড়টার দিকে আদালত থেকে বেরিয়ে নির্বিঘ্নেই গুলশানে ফেরেন খালেদা জিয়া।