‘অপপ্রচার আ. লীগ ছাড়লে’ তারেকও ছাড়বেন

বঙ্গবন্ধুকে ‘রাজাকার’ অভিহিত করে বক্তব্যের পর বিভিন্ন মহল থেকে তীব্র সমালোচনা ও একের পর এক মামলার মধ্যে বিএনপি নেতা তারেক রহমান বলেছেন, আওয়ামী লীগ বাদ দিলে তিনিও ‘অপপ্রচার ও মিথ্যাচার’ বন্ধ করবেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Dec 2014, 01:04 PM
Updated : 21 Dec 2014, 01:04 PM

এক বিবৃতিতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক বলেছেন, “আওয়ামী লীগ যদি মনে করে, এই সব বন্ধ হওয়া দরকার তাহলে অপপ্রচার ও মিথ্যাচার বন্ধের কাজটি আওয়ামী লীগেরই শুরু করা দরকার।

“কারণ তারাই অপপ্রচারের কাজটি আগে শুরু করেছিল। আমরা তো আওয়ামী লীগের অপপ্রচারের জবাবে ইতিহাসের কিছু তথ্য উপস্থাপন করেছিলাম মাত্র।”

নিজের বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দিয়ে লন্ডন প্রবাসী বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক তার বাবা জিয়াউর রহমান ও মা খালেদা জিয়াকে নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিভিন্ন সময়ের বক্তব্য তুলে ধরেন।

এবারও জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলেই তার বাবাকে নিয়ে ‘মিথ্যাচারে’ লিপ্ত হয়।

মা খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতারা কটূক্তি করেন অভিযোগ করে তারেক বলেন, “শেখ হাসিনা প্রায়শই  তার সম্পর্কে অশোভন মন্তব্য করেন, নানারকম কটূক্তি করেন।

“১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আমার বাবা যখন মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে পাকিস্তানি শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করছেন তখন আমরা ছোট্ট দুই ভাই মায়ের আশ্রয়ে এক অনিশ্চিত গন্তব্যে। কিন্তু আমরা দেখেছি, খোদ শেখ হাসিনা এবং তার দলের কতিপয় নেতারা এ সম্পর্কে নির্দ্বিধায় অশালীন অরুচিকর মন্তব্য করে।”

বিজয় দিবস উপলক্ষে গত ১৫ ডিসেম্বর তারেক লন্ডনে বিএনপি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুকে ‘রাজাকার’ বলেন।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যদি ৭ মার্চ সেনাবাহিনীর বাঙালি অফিসারদের নিয়ে যুদ্ধ শুরু করতেন, তাহলে যে ‘সামান্য সংখ্যক’ পাকিস্তানি সৈন্য তখন ছিল, তাদের সহজেই পরাজিত করা যেত; প্রাণহানি ও অর্থনৈতিক ক্ষতি অনেক কমানো যেত।

তিনি দাবি করেন, বঙ্গবন্ধু ‘পাকবন্ধু’ ছিলেন বলেই এমনটি করেননি। আর সে কারণে তাকে ‘রাজাকার’ আখ্যায়িত করা যায়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক বঙ্গবন্ধুকে ‘শখের বন্দি’ আখ্যায়িত করে তারেক আরও দাবি করেন, যুদ্ধ চলাকালে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সঙ্গে হানাদার বাহিনীর আঁতাত ছিল।

ছয় বছর ধরে প্রবাসে থাকা তারেক বঙ্গবন্ধু পরিবার এবং স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে এর আগেও বিতর্কিত বক্তব্য দেন। নিজের বাবা সাবেক সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি দাবি করে বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দেওয়া ‍শুরু করেন তিনি।

এসব বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তারেক রহমান অপপ্রচার ও মিথ্যাচার করছেন বলে সমালোচনা করে আসছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

সর্বশেষ বক্তব্যের পর  তারেক রহমানের জিভ সামলাতে তার মা খালেদা জিয়াকে বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ফাইল ছবি

তিনি বলেন, “লেখাপড়া শেখেনি, জানোয়ারের মতো কথা বলে। জানোয়ারের শিক্ষা কিভাবে দিতে হয়, মানুষ তা জানে। মানুষের কাছ থেকে জানোয়ার যে শিক্ষা পায়, তাই দেওয়া উচিত এবং মানুষ তা দেবেও।”

প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের প্রসঙ্গ তুলে বিবৃতিতে তারেক রহমান বলেন, “শেখ হাসিনা যেই সব শব্দ ব্যবহার করেন যেমন ‘জানোয়ার’, ‘শকুন’, তার পুত্র সম্পর্কেও যদি এই সব ভাষা প্রয়োগ করা হয়, তখন তার কাছে কি ভালো লাগবে?”

বিবৃতির সমাপ্তিতে তারেক রহমান বলেন, “আমি আশা করি, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা নিজেও ভাষা ব্যবহারে যত্নশীল থাকবেন এবং নিজ দলের নেতাদেরকেও অপপ্রচার থেকে বিরত রাখবেন। তাহলে আর কাউকে আওয়ামী লীগ নেতাদের অপপ্রচারের জবাব দিতে হবে না।”

এদিকে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অশালীন বক্তব্যের জন্য তারেকের শাস্তি চেয়ে কয়েক দিন ধরে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর বিক্ষোভের পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা হচ্ছে।

এসব মামলার কোনোটিতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ হয়েছে যুক্তরাজ্যে থাকা তারেকের বিরুদ্ধে। কয়েকটিতে জারি করা হয়েছে সমন।

রোববারও ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় ডজন খানেক মানহানির মামলা হয়েছে তারেকের বিরুদ্ধে, এর মধ্যে মুন্সীগঞ্জের একটিতে হাজার কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে।