সংযত হয়ে কথা বলুন: প্রধানমন্ত্রীকে ফখরুল

বঙ্গবন্ধুকে ‘রাজাকার’ আখ্যায়িত করে আবার খবরের শিরোনাম হওয়া বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ‘অশিক্ষিত জানোয়ার’ বলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Dec 2014, 09:06 AM
Updated : 18 Dec 2014, 09:19 AM

তারেকের সত্য ভাষণে সরকারের গায়ে ‘জ্বালা’ ধরেছে মন্তব্য করে সরকার প্রধানকে ‘সংযত হয়ে’ কথা বলার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের উদ্যোগে রাজধানীতে শুরু হওয়া ছাত্র কনভেনশনের উদ্বোধনী বক্তব্যে ফখরুল এ মন্তব্য করেন।

বৃহস্পতিবার সকালে কনভেনশনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। বিকালে কনভেনশনে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ারও বক্তব্য দেওয়ার কথা রয়েছে।

ছয় বছর ধরে লন্ডনে থাকা তারেক রহমান এর আগেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাবা জিয়াউর রহমানকে ‘স্বাধীনতার ঘোষক’, ‘বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি’ আর বঙ্গবন্ধুকে ‘অবৈধ প্রধানমন্ত্রী’ বলে সমালোচিত হন।

ফাইল ছবি

সবশেষ গত সোমবার লন্ডনে বিজয় দিবসের এক আলোচনা অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক বঙ্গবন্ধুকে ‘রাজাকার’ বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বুধবার এক অনুষ্ঠানে তারেকের কড়া সমালোচনা করে তাকে সামলাতে খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “লেখাপড়া শেখেনি, জানোয়ারের মতো কথা বলে। জানোয়ারের শিক্ষা কীভাবে দিতে হয়, মানুষ তা জানে। মানুষের কাছ থেকে জানোয়ার যে শিক্ষা পায়, তাই দেওয়া উচিৎ এবং মানুষ তা দেবেও।”  

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ফখরুল বলেন, “গতকাল আওয়ামী লীগ সভানেত্রী তারেক রহমান সম্পর্কে কি ভাষায় কথা বলেছেন... কেন তাদের জ্বালা লেগেছে।

“তারেক রহমান ইতিহাস থেকে সত্য কথা তুলে ধরেছেন বলে আপনাদের জ্বালা ধরেছে। আমরা বলতে চাই, ইট মারলে পাটকেল তো খেতে হবে।”

আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কঠোর সমালোচনার পাশাপাশি মির্জা ফখরুল বলেন, “আপনারা যখন মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক জিয়াউর রহমান ও তার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ সম্পর্কে কটাক্ষপূর্ণ কথা বলেন, তখন ইতিহাসের সত্য কথা প্রকাশিত হবেই। আপনারা কাকে রাজাকার বলছেন? মুক্তিযুদ্ধের উপ-অধিনায়ক একে খন্দকারকে রাজাকার বলছেন।

“কেবল তাই নয়, প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ সাহেবকে নিয়ে নানা রকম কটাক্ষ করছেন। এভাবে স্বাধীনতার নায়কদের আপনারা অপমান করছেন।”

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে ফখরুল বলেন, “এভাবে কথা বলা বন্ধ করুন। আপনাদের কথা বলার ক্ষেত্রে সংযত হওয়া উচিত। আমরা বলব, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী সঠিকভাবে কথা বলবেন।”

সরকারের ‘দমননীতির’ সমালোচনা করে তিনি বলেন, “নব্বইয়ে ছাত্রদের বুকের তাজা রক্তে গণতন্ত্র ফিরে এসেছিল। সেই গণতন্ত্র আজ নির্বাসিত। এই গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে অনেক ছাত্র গুম-খুনের শিকার হয়েছে। দেশটাকে সরকার কারাগারে পরিণত করেছে।’’

এ অবস্থা থেকে উত্তরণে ছাত্র সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান তিনি।

বক্তব্যের শুরুতে মির্জা ফখরুল পাকিস্তানের পেশোয়ারে তালেবানদের গুলিতে একটি স্কুলে শতাধিক শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় শোক ও নিন্দা জানান।

ডাকসুর সাবেক ভিপি ও বর্তমানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও খায়রুল কবীর খোকনের পরিচালনায় কনভেনশনে নব্বইয়ের সাবেক ছাত্র নেতারা উপস্থিত রয়েছেন।

আমান দাবি করেন, সারাদেশের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধিরা এই কনভেনশনে অংশ নিচ্ছেন।

ছাত্র কনভেনশনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, “নব্বইয়ের চেতনায় যেভাবে স্বৈরাচার এরশাদকে বিদায় করা হয়েছে, ঠিক সেভাবে নব্য স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে অপসারণ করে জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতেই এ কনভেনশন।”

১৯৯০ সালের ১ অক্টোবর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনেই তৎকালীন ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের উদ্যোগে ছাত্র কনভেনশন হয়, খালেদা জিয়া যাতে প্রধান অতিথি ছিলেন।

ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শামসুজ্জামান দুদু, শহিদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, তৎকালীন ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান বাবুল, জাগপা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি খন্দকার লুৎফুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আসাদুর রহমান খান, গণতান্ত্রিক ছাত্র ঐক্যের সাবেক সভাপতি সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, ডাকসুর সাবেক এজিএস নাজিমউদ্দিন আলম প্রমুখ অনুষ্ঠানে উপস্থিত রয়েছেন।