তারেকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

লন্ডনে একটি অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘রাজাকার’ বলায় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আদালতে বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে, যার মধ্যে একটিতে জারি হয়েছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Dec 2014, 08:44 AM
Updated : 18 Dec 2014, 12:01 PM

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থক চারজন বৃহস্পতিবার কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও ঢাকার হাকিম আদালতে এসব মামলা দায়ের করেন।

এর মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান দুলাল নামের এক আইনজীবীর করা মানহানির মামলায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন ঢাকার মহানগর হাকিম ইউনূস খান।

মামলার বাদী দুলাল তার আর্জিতে মানহানির পাশাপাশি রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনলেও এ ধরনের মামলায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রয়োজন হয় বলে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আদালত আমলে নেয়নি।

বাদীর অভিযোগ, গত সোমবার লন্ডনের ওই অনুষ্ঠানে তারেক বঙ্গবন্ধুকে রাজাকার বলায় মানহানি হয়েছে।

ঢাকার আদালতে একই অভিযোগে আরেকটি মামলা করেছেন হকার্স লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল মান্নান।

তারেকের সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মীর মো. নাসিরউদ্দিন, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী ও কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক সম্পাদক মাজেদুর রহমানকেও বিবাদী করেছেন তিনি। তারাও সেদিন তারেকের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

মহানগর হাকিম মারুফ হোসেনের আদালতে এ অভিযোগের বিষয়ে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

বিজয় দিবস উপলক্ষে লন্ডন বিএনপি আয়োজিত ওই আলোচনা সভায় তারেক দাবি করেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যদি ৭ মার্চ সেনাবাহিনীর বাঙালি অফিসারদের নিয়ে যুদ্ধ শুরু করতেন, তাহলে যে ‘সামান্য সংখ্যক’পাকিস্তানি সৈন্য তখন ছিল, তাদের সহজেই পরাজিত করা যেত; প্রাণহানি ও অর্থনৈতিক ক্ষতি ‘অনেক কমানো’ যেত।

এই সব কিছু জানার পর এর জন্য আমরা এককভাবে কাকে দায়ী করতে পারি? শেখ মুজিবকে। এবং আমরা তাকে যেভাবে রাজাকার বলেছি, আমরা তথ্য প্রমাণ সত্য দিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করে তাকে বলেছি- রাজাকার। আমরা সত্য ঘটনাবলীর ভিত্তিতে বলেছি সে ছিল পাকবন্ধু।”

ওই বক্তব্যের কারণে কুমিল্লার দায়ের করা এক মামলায় তারেককে আগামী ১ মার্চের মধ্যে আদালতে হাজির হতে সমন জারি করেছেন অতিরিক্ত প্রধান বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক শফিকুল ইসলাম।  

কুমিল্লার অ্যাডভোকেট সুবীর নন্দী বাবু মানহানির অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করেছেন। তিনি বলেছেন, তরেক বঙ্গবন্ধুকে ‘রাজাকার’ বলায় বাঙালি জাতির সঙ্গে তারও মানহানি হয়েছে।

চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুর আজিম রনি চট্টগ্রামের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে আরেকটি মামলার আবেদন করেছেন, যাতে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়েছে।

বিচারক মশিয়ার রহমান অভিযোগ শুনে আদেশ অপেক্ষমাণ রেখেছেন।

বাদীর আইনজীবী রনি কুমার দে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বঙ্গবন্ধুকে রাজাকার বলে বাংলাদেশের সৃষ্টিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন তারেক রহমান। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জ করে বক্তব্য দেওয়ায় দণ্ডবিধির ১২৩ (এ) ধারায় েএ অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।”

বাদী নুরুর আজম বলেন, “তারেক রহমানের বক্তব্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও সংবিধানের পরিপন্থী। এটা রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল। লন্ডনের অনুষ্ঠানে তারেক রহমান প্রশ্ন করে সমবেতদের কাছ থেকে উত্তর নিচ্ছিলেন। এ ধরনের বক্তব্যে তিনি উস্কানিদাতাও।”

একই ঘটনায় বৃহস্পতিবার করা মামলায় নাটোরের আদালত থেকে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সমন জারি হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘রাজাকার’ ও ‘পাকবন্ধু’ বলায় তারেকের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার দুপুরে নাটোর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম ইসরাত জাহান মুন্নির আদালতে মামলা করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহসম্পাদক ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আহম্মদ আলী মোল্লা।

আাদালত মামলায় সমন জারি করে আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি তারেক রহমানকে সশরীরে হাজির হওয়ার আদেশ দিয়েছে।

এদিকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের নামে কটূক্তি করায় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে নামে উকিল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক রানা আহম্মেদের পক্ষে জেলা জজ আদালতের আইনজীবি মোর্শেদুল ইসলাম এ নোটিশ পাঠান।

আইনজীবি মোর্শেদুল ইসলাম বলেন, তারেক বঙ্গবন্ধুর নামে কটূক্তি করে দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস ও সংবিধান ভূলুণ্ঠিত করেছেন।

“তার কটূক্তির বিষয়টি ইতোমধ্যে বিভিন্ন মিডিয়াও প্রকাশ হয়েছে, যে কারণে জনস্বার্থে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানায় উকিল নোটিশটি পাঠানো হয়েছে।”

আগামী সাত দিনের মধ্যে চিঠির জবাব না দেওয়া হলে পরে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পরিবার নিয়ে গত ছয় বছর ধরে লন্ডনে অবস্থান করা তারেক সাম্প্রতিক সময়ে টানা কয়েকটি সভায় বাংলাদেশের ইতিহাসের নিজস্ব ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে বিতর্কিত হয়েছেন।

তার বক্তব্যের জন্য মানহানির অভিযোগে বাংলাদেশের আদালতে এর আগেও কয়েকটি মামলা হয়েছে। যার একটিতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে ।