তারেককে সামলান: খালেদাকে হাসিনা

তারেক রহমানের জিভ সামলাতে তার মা খালেদা জিয়াকে বলেছেন শেখ হাসিনা। তা না হলে সমুচিৎ জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Dec 2014, 11:43 AM
Updated : 17 Dec 2014, 02:32 PM

বঙ্গবন্ধুকে ‘রাজাকার’ বলা ছাড়াও আওয়ামী লীগকে নিয়ে বিতর্কিত বিভিন্ন বক্তব্যের জন্য তারেক রহমানকে ‘অশিক্ষিত জানোয়ার’ বলেও আখ্যায়িত করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

“লেখাপড়া শেখেনি, জানোয়ারের মতো কথা বলে। জানোয়ারের শিক্ষা কিভাবে দিতে হয়, মানুষ তা জানে। মানুষের কাছ থেকে জানোয়ার যে শিক্ষা পায়, তাই দেওয়া উচিত এবং মানুষ তা দেবেও।”

লন্ডনে তারেকের সভার দুদিন পর বুধবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় একথা বলেন শেখ হাসিনা।

গত ১৫ ডিসেম্বর লন্ডনে বিএনপির এক অনুষ্ঠানে বক্তব্যে দলের জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে ‘রাজাকার’ বলেন। এর আগেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিতর্কিত বক্তব্য দেন তিনি।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “কুপুত্রকে জিভ সামলে কথা বলতে বলবেন। নইলে বাংলার মানুষ সহ্য করবে না, বিশ্ববাসীও মেনে নেবে না।

“মানুষ তো বানাননি। লন্ডনে বসে জঘন্য কথা বলে যাচ্ছে। সত্যি কথা বলতে কি, এদের নাম নিতে আমার ঘৃণা লাগে।”

লন্ডনে সভায় তারেক রহমান

এই অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু লন্ডনে তারেকের বক্তব্যকে ‘পাগলের প্রলাপ’ বলে মন্তব্য করেন। উপদেষ্টা পরিষদের আরেক সদস্য তোফায়েল আহমেদ ‘বেয়াদব’ বলেন খালেদার ছেলেকে।   

খালেদাকে ‘ঘসেটি বেগম’ আখ্যায়িত করে উপদেষ্টা পরিষদের আরেক সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, “ঘসেটি বেগমের ছেলেকে শেষবারের মতো সাবধান করে দিতে চাই, সে সমস্ত সীমা অতিক্রম করে গেছে।”

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মতো ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলার মামলারও বিচারের কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী, যে মামলায় খালেদার ছেলে তারেক অন্যতম আসামি।

“আইভি রহমানের হত্যার বিচার হবেই,” দৃঢ়কণ্ঠে ঘোষণা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ ছেড়ে দেবে না। যেভাবে যুদ্ধাপরাধীদৈর বিচার হচ্ছে, সেভাবেই বিচার হবে।”

তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে তারেককে গ্রেনেড হামলার জন্য দায়ী করে তিনি বলেন, “আইভি রহমানের হত্যাকারী। আমার ২২ জন নেতা-কর্মীর খুনি। জিয়া যেমন মোশতাকের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল। সেভাবে এই খুনি পরিবার খুন করে যাচ্ছে।”

আওয়ামী লীগের সভায় দর্শকরা

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ক্ষমতাসীন জিয়াউর রহমানের আমলে স্বাধীনতাবিরোধীদের ভোটের সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “বিএনপি তাকে ঘোষক ঘোষক বলে গলা শুকিয়ে ফেলে। সে ঘোষক হলে যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধ করে কিভাবে?”

মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নেওয়া শাহ আজিজুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী, যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত আব্দুল আলিমকে মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়ার কথাও আসে শেখ হাসিনার বক্তৃতায়।

“একদিকে স্বাধীনতাবিরোধীদের ক্ষমতায় বসায়। অন্যদিকে, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিদেশে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করে। পাপ বাপকেও ছাড়ে না। পাপের ফল জিয়াউর রহমান পেয়েছে।”

এরপর ২০০১ সালে জিয়ার স্ত্রী খালেদা জিয়ার সরকারে যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের স্থান পাওয়ার কথা্ও তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। 

“আর, ভোটারবিহীন নির্বাচনে খালেদা জিয়া জাতির জনকের খুনিকে বিরোধী দলের আসনে বসায়,” ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর খুনি সৈয়দ ফারুক রহমানের নির্বাচিত হওয়ার কথা তুলে ধরেন তিনি।  

মুক্তিযুদ্ধের সময় জিয়ার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে শেখ হাসিনা তখন বাংলাদেশে থাকা পাকিস্তানের সেনা কর্মকর্তা আসলাম বেগের দেওয়া চিঠির কথা উল্লেখ করেন।

“আসলাম বেগ চিঠিতে জিয়াউর রহমানকে আশ্বস্ত করেছিল, সে জিয়ার স্ত্রী ও ছেলেদের দেখাশোনা করছে। আর জিয়া ওখানে যা করছে, ভালোই করছে।”

এই বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি হিসেবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা জানজুয়ার মৃত্যুর পর বাংলাদেশের সরকার প্রধান থাকা অবস্থায় খালেদা জিয়ার শোক প্রকাশের কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

“বোঝেন, সম্পর্ক কত গভীর ছিল,” এই মন্তব্য করে বিএনপি চেয়ারপারসনকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “পাকি প্রেম কোনোভাবেই ভুলতে পারেন না।”

অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম দাবি করেন, জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধকে নস্যাৎ করতে পাকিস্তানিদের পক্ষ নিয়েই যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।

জিয়াউর রহমান তাকে দেশে নিয়ে এসেছিলেন বলে খালেদা জিয়ার বক্তব্যের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, “জিয়াউর রহমান ভারতে আমার সাথে দেখা করতে চেয়েছিল, আমি দেখা করিনি। ’৮১ সালে লন্ডনে আমার সাথে দেখা করতে চেয়েছিল, তখনও আমি ওর সাথে দেখা করিনি।”

“জিয়া আমাকে ৩২ নম্বরের ওই বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি,” বলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা, যিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্টের ট্রাজেডির পর ছয় বছর বিদেশে ছিলেন।

খালেদাকে উদ্দেশ্য করে হাসিনা আরও বলেন, “সাধু হলে কোর্টে যেতে ভয় পান কেন? এতিমের টাকা চুরি করে কোর্ট থেকে পালিয়ে বেড়ান। আর, অন্যের দোষ দেন।”

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন মতিয়া চৌধুরী, মাহাবুব-উল-আলম হানিফ, দীপু মনি, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, আহম্মদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, কামরুল ইসলাম প্রমুখ।