শহীদদের অসম্মান করেছেন খালেদা: ইনু

বর্তমান সরকার আমলে যতো মানুষ মারা হয়েছে একাত্তরেও এতো মানুষ মরেনি-বক্তব্য দিয়ে খালেদা জিয়া একাত্তরের শহীদদের অসম্মান করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Dec 2014, 02:14 PM
Updated : 14 Dec 2014, 02:14 PM

নারায়নগঞ্জের জনসভায় খালেদা জিয়া বক্তব্য ‘ন্যাক্কারজনক’ মন্তব্য করে ১৬ ডিসেম্বরের আগে তা প্রত্যাহারের জন্য বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে রোববার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ইনু বলেন, “তিনি (খালেদা) বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি খুনীর দল, তারা যতো মানুষ হত্যা করেছে ’৭১ সালেও এতো মানুষ মারা যায়নি’।

“এই বক্তব্য ন্যাক্কারজনক বক্তব্য। এ বক্তব্যরে মধ্য দিয়ে বিজয়ের মাসে মুক্তিযোদ্ধাদের ও শহীদদের অসম্মান প্রদর্শন করেছেন।

“৩০ লক্ষ শহীদের প্রতি ন্যূনতম সম্মান থাকলে তিনি এটি বলতে পারতেন না। বিজয়ের মাসে ১৬ ডিমেম্বরের আগে ন্যাক্কারজনক বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছি।”

খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে জাসদ সভাপতি ইনু বলেন, “এ বক্তব্যকে পাগলের প্রলাপ বলে হালকা করে দেখি না। খালেদা জিয়ার মনের গভীরের একটি বিশ্বাস থেকে একথা বলেছেন। তিনি ’৭১ এ গণহত্যা, নির্মম নারী নির্যাতন-এগুলো সব কিছুকে মনের থেকে আড়াল করে ধামাচাপা দিতে চান।”

বিএনপি নেত্রী বিরোধী ৩১০ নেতা-কর্মীকে হত্যা এবং ৬৫ জনকে গুম করার যে অভিযোগ করেছেন তাদের নামের তালিকা দিতে খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন হাসানুল হক ইনু।

তিনি বলেন, “বিরোধী দলের ৩১০ নেতা-কর্মীকে হত্যা এবং ৬৫ জনকে গুম করা হয়েছে বলে নারায়ণগঞ্জের জনসভায় দাবি করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

“প্রকাশ্য সাংবাদিক সম্মেলনের মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়ার প্রতি খোলা চ্যালেঞ্জ ৩১০ জনের নামের তালিকা দিবেন।

ফাইল ছবি

“কোথায় কীভাবে কোন ঘটনায় নিহত হয়েছেন সেই তালিকা চাই- ৫৬ জন গুম ও খুন হয়েছে কখন কীভাবে হয়েছে এই তালিকা চাই। এই তালিকা যদি না দিতে পারেন তাহলে বলব-এই ধরনের মিথ্যাচার যেন না করেন।” 

নারায়ণগঞ্জের ওই জনসভায় খালেদা জিয়া ‘মিথ্যাচার’ করেছেন অভিযোগ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “খালেদা জিয়া সাম্প্রতিককালে মিথ্যাচারকে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে এবং মিথ্যাচারকে একটি শিল্প হিসেবে গড়ে তুলেছেন। তিনি ক্রমাগত মিথ্যাচার ও ইতিহাস বিকৃতিতে জড়িয়ে যাচ্ছেন।”

তথ্যমন্ত্রী বলেন, “নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় সরকার দায়মুক্তি দেয়নি, কাউকে রেহাই দেয়া হয়নি। দায়মুক্তির বিধান চালু করার বিধান খালেদা জিয়া ও তার স্বামীর, তারা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের দায়মুক্তির বিধান করেছিল।”

সাত খুনের আসামিরা সরকারি মদদ পাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি চেয়ারপাসন। র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসানকে গুম-হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করে তার গ্রেপ্তার দাবিও করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, “খালেদা জিয়া বলেছেন, গুরুতর অভিযোগ আওয়ামী লীগ যুদ্ধ করেনি।”

“এ অবাস্তব তথ্য খালেদা জিয়া আবিষ্কারের মাধ্যমে প্রমাণ করলেন, তিনি ডাহা মিথ্যা কথা বলেন। মুক্তিযোদ্ধার তালিকা যেটা এখন আছে বা তার সময় করা তালিকা দেখলেই বোঝা যাবে-সেই তালিকায় বেশিরভাগই আওয়ামী লীগার। তিনি এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে যুদ্ধকালীন সরকারকে অস্বীকার করলেন।

“তিনি বলেছেন, বঙ্গবন্ধু ফাঁসির ভয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি, তিনি দাবি করেছেন জিয়াউর রহমান ঘোষণা দিয়েছে। অবশ্যই তিনি ঘোষণা দিয়েছেন ২৭ তারিখে, জিয়াউর রহমান তার জীবদ্দশায় ২৬ তারিখের বদলে ২৭ তারিখ স্বাধীনতা দিবস করার ঘোষণা দেননি।”

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে খালেদা জিয়ার বক্তব্যের সমালোচনা করে হাসানুল হক ইনু বলেন, “বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি কয়েকবার মৃত্যুর মুখোমুখি গিয়েছেন, তিনি পাকিস্তানিদের সাথে আপোষ করেননি বলে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তাকে ফাঁসিতে ঝোলানোর চেষ্টা করা হয়েছিল।

“খালেদা জিয়া, আপনার স্বামীর মৃত্যভয় ছিল। সামরিক রাষ্ট্রপতি, তথাকথিত রাষ্টপতি হয়েছেন, তিনি মৃত্যুভয়ে ক্যান্টনমেন্টে লুকিয়ে থাকতেন। আপনিও মৃত্যুভয়ে ক্যান্টনমেন্টে থাকতেন।

“তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের হাতে দেশ নিরাপদ নয়। নিরাপদ কি না সেটা জনগণ বিচার করবে।”

মিথ্যা বলে সরকারি কর্মকর্তাদের সরানো হচ্ছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে যে দাবি করা হয়েছে তা নাকচ করে মন্ত্রী বলেন, “উনি (খালেদা) এবারো মিথ্যাচার করেছেন। আমাদের কাছে তথ্য আছে, উনি বৈঠক করেছেন। উনার সাহস থাকলে বলতে পারতেন।”

বিএনপি নেত্রীর সঙ্গে বৈঠকের খবরের পর এক কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়ার বিষয়টি প্রচলিত রীতি বলেও মন্তব্য করেন মন্ত্রী।

বিএনপির আন্দোলনের হুঁশিয়ারি নিয়ে তিনি বলেন, “আন্দোলন দিনক্ষণ, পঞ্জিকা দেখে হয় না। আন্দোলন জনগণ করে, আমাদের সরকার জনগণের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে; যেদিন জনগণ বলবে খোদাহাফেজ, আমরা চলে যাব।

“আমরা দিনক্ষণ নিয়ে মাথা ঘামাই না। আমরা মাথা ঘামাই, খালেদা জিয়ার চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র নিয়ে।”