মোদী-নওয়াজের হাত মেলানোয় কাঠমান্ডুর বরফ ভাঙল

শীর্ষ সম্মেলনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থেকে এক সঙ্গে থাকলেও নিজেদের মধ্যে অন্তরঙ্গ কোনো আলাপে দেখা যাচ্ছিল না সার্ক জোটের বড় দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও নওয়াজ শরিফকে।

সুমন মাহবুব কাঠমান্ডু থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Nov 2014, 01:22 PM
Updated : 29 Nov 2014, 04:04 AM

সমাপনী দিন বৃহস্পতিবার সকালে অবকাশ কেন্দ্র ধুলিখেলে গিয়ে বৈরী প্রতিবেশী হিসেবে পরিচিত এই দুই দেশের সরকার প্রধানকে দেখা গেল কথা বলতে, আর তাতেই ‘হিমালয়কন্যায়’ এবারের সম্মেলন নিস্ফলা হওয়ার হাত থেকে বেঁচে যায়।

১৯৮৫ সালে ঢাকা থেকে সার্কের যাত্রা শুরু হওয়ার পর প্রায় তিন দশক পেরিয়ে গেলেও দক্ষিণ এশিয়ার এই আঞ্চলিক জোটটি যথার্থভাবে কার্যকর হয়ে ওঠেনি, আর এজন্য ভারত-পাকিস্তানকেই দায়ী করে আসছেন বিশ্লেষকরা।

কাঠমান্ডুতে সার্কের অষ্টাদশ সম্মেলন বুধবার শুরু হয়েছিল জ্বালানি সহযোগিতা, আঞ্চলিক রেল সহযোগিতা এবং পণ্য ও যাত্রীবাহী মোটরযান চলাচল চুক্তির আশা নিয়ে।

সম্মেলনের প্রথম দিনের ছবি

কিস্তু পাকিস্তানের আপত্তিতে আটকে যায় এই তিন চুক্তি স্বাক্ষর, প্রথম দিনে এই অবস্থা তৈরি হলে সম্মেলন নিস্ফলা হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বলা হয় যে তারা এই চুক্তি সইয়ের জন্য প্রস্তুত নয়।

বুধবার উদ্বোধন অনুষ্ঠানের পর মোদী ও নওয়াজ আলাদাভাবে অন্য রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে বৈঠক করলেও নিজেদের বৈঠক এড়িয়েই ছিলেন।

দ্বিতীয় দিনের আলোচনা শুরুর আগে সকালে ধুলিখেল অবকাশ কেন্দ্রে সার্ক নেতাদের নিয়ে যায় সম্মেলন আয়োজক দেশ নেপাল। অসুস্থতার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী অনুপস্থিত থাকলেও এতে যোগ দেন অন্য সাত দেশের নেতারা।

সেই অবকাশ কেন্দ্রে অন্তরঙ্গ পরিবেশে দেখা যায় সম্মেলনে যোগ দেওয়া সার্ক দেশগুলোর সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধানদের। একসঙ্গে ঘোরা, আলাপের পাশাপাশি এক টেবিলে খাওয়া সারতেও দেখা যায় তাকে।

অবকাশে সার্ক নেতারা

অবকাশে সার্ক নেতারা

ধুলিখেলেই প্রথম অন্তরঙ্গ আলাপে দেখা যায় নরেন্দ্র মোদী ও নওয়াজ শরিফকে এবং এটাই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এই দুজনের প্রথম সরাসরি আলাপ।

মোদীর মতো নওয়াজও সম্প্রতি দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন, তবে মোদীর এটা প্রথম হলেও নওয়াজ তৃতীয় বারের মতো এই দায়িত্ব নিলেন।

মোদী ও নওয়াজের আলাপের পর সম্মেলনের আলোচনার মোড় ঘোরে। এরপর সমাপনী অনুষ্ঠানের আগে জ্বালানি সহযোগিতা চুক্তির ঘোষণা আসার পর আট দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা তা সইও করেন।

অবকাশ যাপন কেন্দ্রে মোদী-নওয়াজের অনির্ধারিত ওই বৈঠকই এই চুক্তিকে আলোর মুখ দেখায় বলে সার্ক সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে।

এরপর সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে মঞ্চে অন্যান্য নেতাদের উপস্থিতিতে নওয়াজের দিকে এগিয়ে তার সঙ্গে করমর্দন করেন মোদী।

সমাপনী দিনে আলাপ (টিভি ছবি)

তাদের দুজনের এই হাত মেলানো যখন মিডিয়া সেন্টারসহ সম্মেলনস্থলের বিভিন্ন স্থানে টেলিভিশনে দেখা যাচ্ছিল, তখন অনেকে করতালি দিয়ে ওঠে। আর এই করতালি চলতে থাকে বেশ কিছুক্ষণ।

এর মধ্যেই দুই নেতাকে কথাও বলতে দেখা যায় এবং ছবি তুলতে সুযোগ দিয়ে তারা অন্তত ৩০ সেকেন্ড পরস্পরের হাত ধরে রাখেন।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ স্বাগতিক নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালা, আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানি, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাহিন্দ রাজাপাকসে, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিন আব্দুল গাইয়ুমও তখন মঞ্চে।

এসময় পরবর্তী শীর্ষ সম্মেলন ২০১৬ সালে পাকিস্তানের ইসলামাবাদে হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। এই সুযোগ দেওয়ার জন্য সার্কভুক্ত দেশগুলোর সরকারপ্রধানদের ধন্যবাদ জানান নওয়াজ।

১৯৪৭ সালে জন্মলগ্ন থেকে ভারত ও পাকিস্তানের নাজুক সম্পর্ক, আর এর মধ্যে কয়েকবার যুদ্ধেও জড়ায় দেশ দুটি। ২০০৮ সালে মুম্বাইয়ে সন্ত্রাসী হামলার পর সেজন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারতের বক্তব্য দুই দেশকে আরও দূরে ঠেলে দেয়।

তারপর সম্পর্কোন্নয়নের কথা বিভিন্ন সময়ে বলা হলেও সম্পর্কের বরফ সেই অর্থে খুলছে না। আর তার প্রভাব পড়ছে দুই দেশের ক্রীড়াসহ অন্য ক্ষেত্রগুলোতে।