‘মধ্যপন্থা’ ছেড়ে বিচারের পক্ষে আসুন: ইনু

অনেকে নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি দাবি করলেও যুদ্ধাপরাধের বিচারবিরোধী আন্দোলনে নাশকতার প্রতিবাদ না করে কার‌্যত তাদের পক্ষ নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Nov 2014, 12:02 PM
Updated : 23 Nov 2014, 12:02 PM

ফাইল ছবি

প্রকৃত অর্থে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের হলে এই নাশকতার প্রতিবাদ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

রোববার সকালে জাতীয় যাদুঘরে বাংলাদেশ শান্তি পরিষদের এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “যারা নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি বলে দাবি করেন, অথচ সরকারের সমালোচনা করছেন তারা তো কখনো বিএনপি-জামাতের নাশকতার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেননি, কোনো বিবৃতি দেননি। আপনারাও তো তাহলে বিএনপি-জামায়াতের পাশে দাঁড়াচ্ছেন।”

যুদ্ধাপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে বিএনপিকেই সবচেয়ে বড় বাঁধা মনে করেন জাসদ সভাপতি ইনু।

তিনি বলেন, “বিএনপি বলছে, বিচার চাই। কিন্তু তাদের শাসনামলে কখনোই বিচার শুরু করেনি, চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের সাথে জোট বেঁধেছে, তাদের মন্ত্রী বানিয়েছে।

“এ বিচারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় শক্তি কিন্তু বিএনপি। তারা যুদ্ধাপরাধীদের তাদের ছাতার তলে আশ্রয় দিচ্ছে। এর সাথে আমেরিকা ও ইউরোপের কিছু বিভ্রান্ত রাজনীতিক জোট বেঁধেছে।”

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের আমলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসিত হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “একাত্তরে ১২ হাজার সরাসরি মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত ছিল, তাদের বিচারে ৭৩টি ট্রাইব্যুনাল হয়েছিলে। বিচার শুরু হয়েছিল।

“পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরে মোস্তাক-জিয়া বিচার কাজ বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে জিয়া যখন এসব যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করল তখন এই ১২ হাজার অপরাধী সরাসরি বিএনপির ছত্রচ্ছায়ায় চলে গেল। এদেশে রাজনীতি করার অধিকার পেল।

“জিয়া এদেশের রাজনীতিতে যে বিষবৃক্ষ রোপন করেছিলেন সেটিই এখন আবহাওয়াকে দূষিত করছে। আমরা সে অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করছি।”

বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে যুদ্ধাপরাধীদের ‘সঙ্গ ত্যাগের’ প্রত্যাশা জানিয়ে ইনু বলেন, “যতোক্ষণ পর্যন্ত খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের বিপক্ষে শক্ত অবস্থান না নেবেন ততোক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ হবে জঙ্গিবাদ, জামায়াত ‍ও বিএনপিকে উৎখাতের জন্য।”

যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে কারো প্রশ্ন তোলার অধিকার নেই বলে মন্তব্য করেন হাসানুল হক ইনু।

তিনি বলেন, “এ বিচার গণতন্ত্র সম্মত। এখানে আসামিপক্ষ উকিল দিতে পারে, জেরা করতে পারে এবং তাদের যথেষ্ট আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ রয়েছে।

“বিচার প্রক্রিয়া চলার সময়ে যদি কোনো বিচারক ভুল করেন তাকে বদলে দেওয়ার নজিরও রয়েছে। আদালতে সাংবাদিকরা প্রবেশ করতে পারেন। যদি কোনো বিদেশি বিচার প্রক্রিয়া দেখতে চান সে সুযোগও দেওয়া হয়েছে। সুতরাং এ বিচার নিয়ে প্রশ্ন করার অধিকার কারো নেই।”

মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে ভূমিকার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেন তথ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “একাত্তরে একটি মহান যুদ্ধ হয়েছিল, যারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ছিল তারা একটি অনেক বড় অপরাধ করেছিল। স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান মানে নৈতিক অপরাধ করা। দুঃখজনক হলেও সত্য মার্কিনরা সেদিন পাকিস্তানিদের পক্ষই গ্রহণ করে।

“এ কারণে স্বাধীনতার পর এ কলঙ্কজনক যুদ্ধাপরাধের ঘটনা আড়ালের চেষ্টা করা হয়েছে। আজ পর্যন্ত মার্কিন কর্তৃপক্ষ এ অপরাধের বিচারের পক্ষে কোনো মতামত দেয়নি। যদিও এই ৪২ বছরে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে যে মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। এটি মার্কিন দ্বৈতনীতি। আশা করি, এ বিচার নিষ্পত্তিতে তারা একটি ভূমিকা বা বিবৃতি দেবে।”

যুদ্ধাপরাধ মামলার রায়ের পর পাকিস্তানি মন্ত্রীদের প্রতিক্রিয়ার কঠোর সমালোচনা করেন তথ্যমন্ত্রী।

‘কামারুজ্জামানের বিচার সমাপ্তের পরে পাকি মন্ত্রীরা ন্যাক্কারজনক বিবৃতি দিয়ে দেশের মানুষের নীতিবিরোধী অবস্থান নিয়েছে’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

যুদ্ধাপরাধের বিচার জাতির ‘আবেগের’ বিষয় মন্তব্য করেন তিনি বলেন, “তাই বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হলে বা সর্বোচ্চ সাজা না হলে জনগণ আবেগে ফেটে পড়ে এবং ফুঁসে ওঠে। এ আবেগকে আমরা শ্রদ্ধা করি।”

সময়মতো রায় বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, “সরকার এ বিচারের বিষয়ে বদ্ধ পরিকর। আদালত যে সিদ্ধান্ত দেবে তাই হবে। আপনারা ধৈর্য্য ধরেন।”